• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ইসলামে আমানতদারিতার গুরুত্ব

আমানতের প্রচলন জীবনের সর্বক্ষেত্রেই দেখা যায়

সংরক্ষিত ছবি

ধর্ম

ইসলামে আমানতদারিতার গুরুত্ব

  • মুফতি এহসানুল হক মুজাদ্দেদি
  • প্রকাশিত ১৯ আগস্ট ২০১৮

আরবি ‘আমানত’ শব্দের অর্থ গচ্ছিত রাখা, নিরাপদ রাখা। পরিভাষায় কারো কাছে কোনো অর্থসম্পদ, বস্তুসামগ্রী গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয়। যিনি গচ্ছিত বস্তুকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে সংরক্ষণ করেন, যথাযথভাবে হেফাজত করেন এবং মালিক চাওয়া মাত্রই কোনো টালবাহানা ছাড়া ফেরত দেন, তাকে আল-আমীন তথা বিশ্বস্ত সত্যবাদী আমানতদার বলা হয়। আমানতের প্রচলন জীবনের সর্বক্ষেত্রেই দেখা যায়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি স্তরে প্রতিটি বিষয়ে আমানত রক্ষা করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমানতের ধরনও ভিন্ন হতে পারে। যেমন লেনদেনের আমানত, কথার আমানত। যেসব বিষয় প্রকাশিত হলে বা যেসব কথা বললে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, মনোমালিন্য ও সংঘাত সৃষ্টি হবে, এমন বিষয় প্রকাশ না করা এবং না বলাও আমানত। সর্বক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করা একজন মুমিনের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আমানতদারিতাকে আল্লাহতায়ালা মুমিনের অন্যতম গুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এরা সেই লোক যারা আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।’ (সুরা আল মুমিনুন, আয়াত : ৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানত তার মালিককে যথাযথভাবে প্রত্যর্পণ কর।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)।

প্রিয়নবী (সা.) অসংখ্য হাদিস শরিফে আমানতদারিতার মহৎ গুণকে ঈমানের আলামত বলেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নূরনবী (সা.) বলেছেন, যার আমানতদারিতা নেই তার ঈমান নেই, আর যে ওয়াদা পালন করে না তার মধ্যে দ্বীন নেই (বায়হাক্বী)। সততা, ন্যায় পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও আমানতদারিতা রক্ষা না করা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, কথায় কথায় মিথ্যাচার করা ইত্যাদি গর্হিত আচরণকে মুনাফেকির নিদর্শন বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, ‘মুনাফেকের নিদর্শন তিনটি। কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, যখন তার কাছে কোনো বস্তু আমানত রাখা হয়- তা খিয়ানত করে (বুখারি)। এ হাদিস শরিফ থেকে বোঝা যায় যে, যারা মুনাফেক প্রকৃতির লোক, তারা আমানত রক্ষা করার প্রতি যত্নশীল থাকে না। হকদারের প্রাপ্য হক তাকে প্রত্যর্পণ করে না। হয় নিজে আত্মসাৎ করে অথবা অপব্যবহারের মাধ্যমে তা নষ্ট করে।

এসব হক সম্পর্কে আমাদের অনেকের অবগতি না থাকার কারণে অথবা অমনোযোগিতা ও উদাসীনতার কারণে অনেকে এসব হক আদায়ের প্রতি যথাযথ যত্নশীল থাকেন না। যার ফলে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অমান্য করার কারণে পরকালে তো তার শাস্তির সম্মুখীন হতেই হবে, এ ছাড়া দুনিয়াতেও নানারকম জটিলতা ও সমস্যা, ফেৎনা-ফাসাদ, অরাজকতা-অশান্তি প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে এবং হতেই থাকবে।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মণিপুর বাইতুর রওশন মাদরাসা কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads