• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
আল-কোরআনের মর্যাদা

একমাত্র সন্দেহমুক্ত আসমানি কিতাব পবিত্র ‘আল-কোরআন’

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

আল-কোরআনের মর্যাদা

  • প্রকাশিত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মুফতি মাওলানা এহসানুল হক মোজাদ্দেদী

পৃথিবীতে একমাত্র সন্দেহমুক্ত আসমানি কিতাব হলো পবিত্র ‘আল-কোরআন’। পবিত্র এই কোরআন প্রিয় নবীজি হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিল হয়েছে রমজান মাসে। কোরআনুল করিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫) কোরআনুল করিম বোঝার জন্য বুদ্ধিমত্তার চাইতে ‘কালব’-এর পরিশুদ্ধতার প্রয়োজন অনেক বেশি। কেননা কোরআন নাজিল করা হয়েছে কালব-এর ওপর। কোরআনুল করিমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এ কোরআন সৃষ্টিকুলের রবেরই নাজিলকৃত। বিশ্বস্ত ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) এটা নিয়ে অবতরণ করেছেন তোমার নূরানি কালবে (হূদয়ে), যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ (সুরা আশশুয়ারা, আয়াত : ১৯২) আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ এ কিতাব কোরআনুল করিম, যা তাঁর ওপর দীর্ঘ ২৩ বছরে নাজিল হয়েছে। এ কিতাবটির নাম, নাজিলের ভাষা, বিষয়বস্তু সবকিছুই অভিনব ও মুজিজাপূর্ণ। কোরআন শব্দটি কারউন শব্দ থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে। এর ধাতুগত অর্থ দুটি-  ১. জমা করা। এর তাৎপর্য হলো, এ কিতাবের মধ্যে অতীতের সব আসমানি কিতাবের মূল শিক্ষা একত্রিত হয়েছে। এর মধ্যেই পৃথিবীর প্রলয় দিন পর্যন্ত মানবজাতির প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং হেদায়াত সন্নিবেশিত হয়েছে (উলুমুল কোরআন)। ২. বার বার পাঠ করা। এ কিতাবটি কোটি কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত অধ্যয়ন করছে। এত অধিক পঠিত কিতাব দুনিয়ায় আর একটিও নেই (আল ইতকান)।

পবিত্র কোরআন হলো মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শেখে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’ (বুখারি)। রসুল (সা.) বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হলো আল্লাহর বাণী। আর সর্বশ্রেষ্ঠ পথ হলো হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর দেখানো নূরানি পথ (মুসনাদে আহমাদ)। কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠ করলে দশটি নেকি লাভ করা যায়। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করল, এতে সে দশটি নেকির অধিকারী। তিনি আরো বলেন, আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম একটি হরফ’ (তিরমিজি শরিফ)। আল-কোরআন তেলাওয়াতের এত ফজিলত হওয়ার কারণে অতীতের উম্মতে মোহাম্মদী (সা.) বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। হজরত উসমান (রা.) তিন দিনে এক খতম কোরআন পড়তেন। ইমাম বুখারি (রহ.)ও তিন দিনে এক খতম কোরআন পড়তেন বলে জীবনীকাররা উল্লেখ করেছেন। আমাদের মাজহাবের ইমাম হজরত আবু হানিফা (রহ.) প্রতিরাতে এক খতম কোরআন পড়তেন বলে বর্ণিত আছে।

পবিত্র কোরআন পাঠকারীর পিতা-মাতাকে কেয়ামতের ময়দানে হাশরে নূরের টুপি পরানো হবে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ পড়ে এবং এর ওপর আমল করে, তার মাতা-পিতাকে কেয়ামতের দিন এমন একটি নূরের টুপি পরানো হবে, যার জ্যোতি দুনিয়ার সূর্যের জ্যোতি অপেক্ষা অধিক হবে’ (আবু দাউদ)। আরেকটি হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, কোরআন মানুষকে আলোকিত করে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার হূদয়ে কোরআনের কোনো শিক্ষা নেই, তা বিরান ঘর সমতুল্য’ (তিরমিজি)। আমাদের প্রত্যেকের অবশ্যই কর্তব্য নিয়মিত কোরআন পড়া, আল-কোরআনের চর্চা করা। নয়তো আমাদের অন্তর বিরান ঘরের মতো হয়ে যাবে।

লেখক : খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads