• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
নবপ্রত্যয়ে শুরু হোক আমাদের জীবন

রাতের পিঠে ভর করে দিন আসে

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

নবপ্রত্যয়ে শুরু হোক আমাদের জীবন

  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তানজিল আমির

রাতের বিষাদ নির্জনতাকে কোমলভাবে ভেঙে দেয় সোনালি প্রভাত। অবসান ঘটে আঁধারি মেলার। ধীরে ধীরে ধরা আলোকিত হয়। আলোকিত হয় এ বিশ্ব চরাচর। আলোর অবগাহনে হেসে ওঠে বৃক্ষলতা। হেসে ওঠে শিশিরভেজা ঘাস। বকুল বেলি জুঁই চামেলি। পাখপাখালি গেয়ে ওঠে জীবনের গান। কণ্ঠে ধরে এগিয়ে যাওয়ার তান। 

রাতের পিঠে ভর করে দিন আসে। আবার দিনের পিঠে ভর করে আসে রাত। রাত-দিনের এ আবর্তন-বিবর্তন আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও মহান আল্লাহতায়ালা এতে স্থাপন করেন অসংখ্য অগণিত কুদরতি নিদর্শন। তাঁর পরিচয়ের উপঢৌকন। মানুষ স্রষ্টার কুদরতি নিদর্শন দেখে স্রষ্টার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করবে। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। তাঁর বিধিনিষেধ যথাযথ পালন করবে। পবিত্র কোরআনুল করিমে ইরশাদ হয়, এবং তিনিই সেই সত্তা যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়। (সুরা ফুরকান, আয়াত ৬২) কোরআনে আরো ইরশাদ হয়, আল্লাহ রাত ও দিনকে পরিবর্তিত করেন। নিশ্চয়ই এসব বিষয়ের মধ্যে চক্ষুষ্মানদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপাদান আছে। (সুরা নূর, ৪৪)

স্বাভাবিক প্রশ্ন হতে পারে, রাত-দিনের এ আবর্তন-বিবর্তন কীভাবে স্রষ্টার নিদর্শন! কীভাবে তা তাঁর পরিচয়ের মাধ্যম! কোরআনে মহান আল্লাহর ন্যূনতম একটি উদাহরণ পেশ করেন এভাবে- আর তোমাদের ঘুমকে ক্লান্তি ঘোচানোর উপায় বানিয়েছি এবং রাতকে বানিয়েছি আবরণস্বরূপ এবং দিনকে জীবিকা আহরণের সময় নির্ধারণ করেছি। (সুরা নাবা, আয়াত ৯-১১) আল্লাহতায়ালা প্রতিটি কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ও বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এতে জগতের ভারসাম্য বজায় থাকে।

সবকিছু সচল থাকে। মহান আল্লাহতায়ালা প্রাণের ভারসাম্য বজায় রাখতে, জীবনের চাকা সচল রাখতে ঘটান দিন-রাতের আবর্তন-বিবর্তন। ইরশাদ হয়- তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারো। আর দিনকে বানিয়েছেন দেখার জন্য। (সুরা মোমিন, আয়াত ৬১) বর্ণিত আয়াতগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিজ্ঞানসম্মত। কারণ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও জীবিকার জন্য সর্বোত্তম সময় দিন এবং নিদ্রার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময় রাত। জীবিকার জন্য মানুষকে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। ছোটাছুটি করতে হয় নানা প্রান্তে। আর নির্বিঘ্নে দৌড়ঝাঁপের জন্য প্রয়োজন আলোর। দিবসের। আবার সারা দিনের দীর্ঘ পরিশ্রমে মানুষের জীবনকর্মে নেমে আসে অসাড়তা ও অস্বস্তি। তখন কর্মক্লান্ত সে মানুষটি নিজেকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলতে খোঁজে একটু নির্জনতা। কোলাহলমুক্ত নির্মল একটি পরিবেশ। মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের এ ক্লান্তি ঘোচানোর জন্য পৃথিবীকে আলোহীন করে দেন। নিদ্রার উপযোগী বানিয়ে দেন। দিন-রাতের আবর্তন-বিবর্তনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আমাদের জীবন ও সময় ফুরিয়ে যাওয়া। মাতৃজঠরের বন্ধন পেরিয়ে এ বিশ্বে আগমন করে মানুষ। এরপর আর স্থিতি নেই। থেমে থাকা নেই। দিনরাত, রাতদিন, বছর মাস, কাল যুগ অতিক্রম করে একসময় বরণ করে নেয় মৃত্যু নামক চিরন্তন সত্যকে। মাঝের এ কয়েক দিনকেই বলে জীবন। জীবনের স্বাদ আস্বাদন। এজন্যই বলা হয় সময়, জীবন অমূল্য সম্পদ। তা একবার হাতছাড়া হলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। ফিরিয়ে আনা যায় না। আমাদের কাঁধে ভর করে গত হলো ১৪৩৯ হিজরি বর্ষ। আগমন করেছে নতুন আরেকটি বছর ১৪৪০। একটি বছরের যোগ-বিয়োগ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের নয়। জীবনের হিসাব-নিকাশের অনেক কিছু রয়েছে এতে। বিগত বছর, বিগত জীবন আমি কোন কাজে ব্যয় করলাম। আমার চরিত্র গঠন, আত্মশুদ্ধি কতটুকু হলো। আমার দ্বারা কতটুকু পুণ্য হলো, কতটুকু পাপ হলো। এসব বিষয় মাথায় রেখে আল্লাহতায়ালা আমাদের জীবন ও সময় থেকে শিক্ষা গ্রহণের তওফিক দান করুক। নতুন একটি বছরের সূচনালগ্নে নবপ্রত্যয়ে শুরু হোক আমাদের জীবন।

লেখক : আলেম ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads