• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
মাদকের ভয়াবহ পরিণতি

মাদকের কারণে মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হচ্ছে

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

মাদকের ভয়াবহ পরিণতি

  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এসএম আরিফুল কাদের

মানুষ সামাজিক জীব। তাই সে সমাজে সুস্থ সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন কামনা করে। সুস্থ জীবন সুনাগরিক হওয়ার অন্যতম অবলম্বন। সুনাগরিক হতে হলে রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককে সুস্থ জীবনের অধিকারী হতে হবে। শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়ে সুস্থ হলেই একজন নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে পারে। কাজেই সুস্থ জীবন সুনাগরিক হওয়ার চাবিকাঠি স্বরূপ। মানব ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকে মাদকের উৎপত্তি হলেও বর্তমানে এর অনিয়ন্ত্রিত এবং ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে সমাজ ব্যবস্থায় এক মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হয়েছে। মাদকের কারণে মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হচ্ছে। বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা। দুরারোগ্য ব্যাধির মতোই তা আমাদের তরুণ সমাজকে গ্রাস করছে। এর তীব্র দংশনে ছটফট করছে আমাদের সমাজের আগামী দিনের কর্ণধাররা। মাদকের ভয়াবহ পরিণতি দেখে আজ প্রশাসন বিচলিত, অভিভাবকরা আতঙ্কিত, চিকিৎসকরা দিশাহারা।

ইসলামে ঘোষিত হারাম দ্রব্যগুলোর ওপর যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন। এর মধ্যে সত্যিই ধ্বংসাত্মক পরিণতি রয়েছে। সাময়িক ও ছোটখাটো কোনো কল্যাণ থাকলেও তা সময়ের ব্যবধানে ক্ষতিরই কারণ হয়ে দেখা দেয়। যে দ্রব্য জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে দেয়, নেশা সৃষ্টি করে, ধ্বংস করে মানবীয় গুণাবলি এবং ধ্বংস করে সমাজ ও সভ্যতাকে, তা-ই মাদক। ইসলামে তা পুরোপুরি হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। দেড় হাজার বছর আগে প্রিয়তম রসুল (সা.) অত্যন্ত দরদি ও কঠোর কণ্ঠে আহ্বান করেছেন, মাদক রুখে দাঁড়াও। সুস্থ সুন্দর সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলো। (কোরআনের আলো.কম ১৮ মে ২০১৮)

এরই ধারায় কোরআনে আল্লাহপাক বলছেন, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি এবং ভাগ্যনির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো বর্জন করো, তাহলে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পারবে। শয়তান চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। তবু কি তোমরা নিবৃত হবে না?’ (সুরা মায়েদা : ৯০-৯১)

কোরআনের আয়াত অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ হওয়ায় এ শ্রেণির ব্যক্তিদের ওপর রয়েছে রসুল (সা.)-এর অভিশাপ। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) মাদকাসক্ত ১০ ধরনের ব্যক্তির ওপর অভিশাপ করেছেন। যথা- ১. যে ব্যক্তি মদ-জাতীয় বস্তুর নির্যাস বের করে, ২. যে ব্যক্তি মদ প্রস্তুত করে, ৩. যে ব্যক্তি মদ পান করে, ৪. যে ব্যক্তি মদ পান করায়, ৫. যে ব্যক্তি মদ আমদানি করে, ৬. যার জন্য মদ আমদানি করা হয়, ৭. মদ বিক্রেতা, ৮. মদ ক্রেতা, ৯. অন্যকে সরবরাহকারী, এবং ১০. মদের লাভের অংশ ভোগকারী।’ (ইবনে মাজাহ, আস-সুনান ২ : ৩৩৮১)

আল্লাহপাক অভিনব যন্ত্র মানুষের মাঝে স্থাপন করে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু মাদকাসক্তির কারণে কত যে ভয়াবহ মরণ ফাঁদ ডেকে আনছে তা একবার বিবেচনা করা উচিত। তাই আজকের ক্ষুদ্র উপস্থাপনাটিই হলো মাদকের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে।

মদপানে আল্লাহর অভিনব যন্ত্রের দায়িত্ব পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। যা সেবনের ফলে হূৎপিণ্ড সর্বশেষ মূল্যবান অনুভূতি যন্ত্রের মিলিত হওয়ার স্থানে ছাঁকনির কাজ দেয়। কিন্তু অ্যালকোহল এ নাজুক কাজটিকেও ব্যাহত করে। সরকারি মাদকদ্রব্য অধিদফতরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাদকাসক্তির ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় দেখা দেয়। নেশার মাত্রার তারতম্য হলে হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। (সুন্নাতে রসূল (সা.) ও আধুনিক বিজ্ঞান)

এমনকি মাদকের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে ইংল্যান্ডের সাবেক  প্রধানমন্ত্রী গ্লাডস্টোন মন্তব্য করেছেন, ‘যুদ্ধ, মহামারী, দুর্ভিক্ষ এ তিনটির প্রভাবে যত ক্ষতি হয় তা একত্রে যোগ করলেও মাদকে যে ক্ষতি হয় তা অনেক ভয়ংকর।’ (মাসিক আত তাহরিক, মার্চ ২০১৪) মাদকাসক্তির ফলে উপরে উল্লেখিত ভয়াবহ পরিণতি ছাড়াও একটি মানুষের জন্য রয়েছে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক মারাত্মক ক্ষতি। আর তা হলো, ১. মাদকদ্রব্য মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। যেমন- শেখার ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস করে, চাপ সহ্য করার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। তাছাড়া মানসিক পীড়ন বাড়িয়ে দেয়। ২. পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে। মাদকসেবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করে। পরিবারের শান্তি বিনষ্ট করে। (দৈনিক ইনকিলাব, ২৬ অক্টোবর ২০১৬)

তাই এ সমস্যা প্রতিরোধে প্রয়োজন সামাজিক গণসচেতনতা। সমাজের সব গুণী মানুষকে মাদকবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে, বিশেষত সব তরুণ ছাত্রছাত্রী ও যুবকর্মীদের মাধ্যমে একে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিয়ে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকার প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

লেখক : আলেম ও গবেষক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads