• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
আশুরার ফজিলত ও করণীয়

মহররমের ১০ তারিখ আশুরা নামে পরিচিত

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

আশুরার ফজিলত ও করণীয়

  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মো. আবু তালহা তারীফ

মহররম শব্দের অর্থ পবিত্র। হিজরি সনের প্রথম মাস হচ্ছে মহররম। পবিত্র কোরআনের ভাষায় এই মাসকে আরবাআতুন হরুম বা সন্মানিত বলা হয়েছে। এই মাসকে কাফেররা অধিক সন্মানিত মনে করত। অধিক সন্মানিত মনে করায় এই মাসে ফিতনা, ফাসাদ, যুদ্ধবিগ্রহ থেকে তারা বিরত থাকত। এই মাসে যদি তারা তাদের বাবার হত্যাকারীদের দেখত, তাহলেও কিছু বলত না। সুতরাং এই মাসের মর্যাদা আল্লাহপাকের কাছে অত্যধিক। এই মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়। রমজান মাসের পরই এই মাসের অবস্থান। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম ২/৩৬৮ পৃষ্ঠা)

মহররম মাসের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন রয়েছে। হজরত আলী (রা.) বলেন, রসুল (সা.)-কে এক সাহাবি প্রশ্ন করলেন, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে কি, যে মাসে আপনি রোজা রাখার আদেশ করেন? রসুল (সা.) বললেন, রমজানের পর তুমি যদি রোজা রাখতে চাও, তাহলে মহররম মাসে রেখো। কারণ এটা আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহপাক একটি জাতির দোয়া কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন। (জামি তিরমিজি, ১ম খণ্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা)

সেই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি হলো ১০ মহররম। মহররমের ১০ তারিখ আশুরা নামে পরিচিত। আরবি আশারা শব্দ থেকে আশুরা শব্দের উৎপত্তি। আশারা মানে দশ আর আশুরা অর্থ হলো দশম দিবস। এই দিনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো রোজা পালন করা। ইহুদিরা এদিন রোজা রাখত। এমনকি মক্কার কোরাইশরা এই দিনে রোজা পালন করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জাহেল যুগে এই দিনে কোরাইশরা রোজা পালন করতেন। রসুল (সা.) এদিন রোজা নিজে রেখেছেন এবং সাহাবিদের রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজাকে ইচ্ছাধীন করে দিয়েছেন।’ (বুখারি- ১৮৯৮, তিরমিজি-৭৫৩) আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ইহুদিরা আশুরার একদিন রোজা রাখত। তাদের সঙ্গে যাতে সাদৃশ্য না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে আশুরার আগের দিন ৯ তারিখে বা পরের দিন ১১ তারিখে অতিরিক্ত একটি রোজা রাখা প্রয়োজন। রসুল (সা.) এই দিনে রোজা পালন করলেন এবং রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিরদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে একদিন রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমদ ১ম খণ্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা)

আশুরার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কয়েকটি কারণ আছে। এই দিনে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, আশুরার দিন আল্লাহপাক পবিত্র লওহে মাহফুজ সৃষ্টি করেছেন। যাবতীয় সৃষ্টির রুহ সৃষ্টি করেছেন। হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন এবং তাঁর তওবা কবুল করেছেন। হজরত নূহ (আ.) মহাপ্লাবনের শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করে। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন এবং অগ্নিকুণ্ড থেকে এই দিনে নাজাত পেয়েছিলেন।  হজরত মুসা (আ.) তুর পর্বতে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাঁর ওপর তাওরাত কিতাব নাজিল করা হয়েছিল। তাঁর শত্রু ফেরাউনের নীল নদে ভরাডুবি হয়েছিল মহররমের এই ১০ তারিখে। এই দিনে হজরত আইয়ুব (আ.) রোগ থেকে মুক্তি পান। হজরত ইয়াকুব (আ.) তার প্রিয় পুত্রকে ফিরে পান। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে দজলা নদীতে বের হয়েছিলেন এই দিনে। হজরত সুলাইমান (আ.) এই দিনে পুনরায় রাজত্ব ফিরে পান। হজরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাঁকে আকাশে তুলে নেওয়া হয় এই দিনেই। হজরত জিব্রাইল (আ.) সর্বপ্রথম আল্লাহর রহমত নিয়ে রসুল (সা.)-এর কাছে আগমন করেছিলেন। মহররমের কোনো এক শুক্রবার ইস্রাফিল (আ.)-এর সিঙ্গায় ফুৎকারের মাধ্যমে পৃথিবী ধ্বংস হবে। (বুখারি- ১/৪৮১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ১/১৩২, আল কামেল ফিত তারিখ- ১/১২২)

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। আসুন, আমরা এই মাসে ইবাদতের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ি। নিজে আমল করে এই মাসে পুণ্যতা অর্জন করি।

লেখক : প্রাবন্ধিক,গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads