তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব নিরসনে একই দিন একই স্থানে (কাকরাইল মসজিদ বা টঙ্গি ইজতেমা ময়দান বা জেলা ও উপজেলা মারকাজে) দাওয়াতি কাজ নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
দিল্লির মারকাজের মুরব্বি মওলানা সাদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে তাবলিগের দুই মুরব্বি মাওলানা যুবায়ের আহমদ ও প্রকৌশলী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এই দুই গ্রুপে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে রক্তারক্তিও হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ‘বাংলাদেশে দাওয়াতে তাবলিগের কার্যক্রম সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য’ গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওই পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রটি ইতোমধ্যে ডাকযোগে সব জেলা প্রশাসক ও তাবলিগের মারকাজে পাঠানো হয়েছে। তাবলিগ জামাতকে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন উল্লেখ করে পরিপত্রে বলা হয়, মুসলিম জনসাধারণ তাদের আত্মশুদ্ধি ও ইসলামের দাওয়াতে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছেন। এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ একটি অন্যতম অগ্রসরমাণ দেশ বিধায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম জামাত ‘বিশ্ব ইজতেমা’ প্রতিবছর টঙ্গীর তুরাগ তীরে হয়ে আসছে। তাবলিগ জামাতে চলমান দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ টেনে এতে বলা হয়, সম্প্রতি এ সংগঠনের মধ্যে দৃশ্যমান বিভক্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে শান্তিকামী সংগঠনটির দুটি গ্রুপের মধ্যে দেশের প্রায় সব এলাকায় প্রায়শই বিবাদ লক্ষ করা যাচ্ছে, যা ধর্মীয় রীতিনীতি তথা সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলার অন্তরায়। তাই দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা তথা সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- ১. বর্তমানে তাবলিগে বিদ্যমান দুটি পক্ষ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা পরামর্শক্রমে কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী ইজতেমা ময়দানসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা মারকাজে সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে/তারিখে তাদের কার্যক্রম (সাপ্তাহিক বয়ান ও রাত্রি যাপন, পরামর্শ ও তালিম, মাসিক জোড় ইত্যাদি) পরিচালনা করবে। তবে কোনো পক্ষ চাইলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে মারকাজ ব্যতীত অন্য মসজিদে বা জায়গায়ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। ২. তাবলিগের আদর্শ ও চিরাচরিত রীতিনীতি অনুযায়ী কোনো পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কোনোরূপ লিখিত বা মৌখিক অপপ্রচার চালাবে না। ৩. দেশের সব মসজিদে পূর্বের ন্যায় শান্তিপূর্ণভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সে লক্ষ্যে যেকোনো মসজিদে উভয়পক্ষের জামাতই যেতে পারবে। এতে কোনো পক্ষই কাউকে বাধা দেবে না। তবে একই সময়ে দুই পক্ষের দেশি ও বিদেশি জামাত একই মসজিদে অবস্থান করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। এক্ষেত্রে যে পক্ষের জামাত আগে আসবে সেই পক্ষের জামাত অবস্থান করবে। অন্য পক্ষের জামাত পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো সুবিধাজনক মসজিদে চলে যাবে। ৪. উভয়পক্ষ তাদের ইজতেমা বা জোড় তাবলিগের দেশি-বিদেশি মুরুব্বিদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। এতে এক পক্ষ অন্য পক্ষের কার্যক্রমে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। ৫. কোনো এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।