• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় কওমি আলেমদের ঐতিহাসিক ঐক্য : শোককরানা মাহফিল

‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া’র লোগো

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় কওমি আলেমদের ঐতিহাসিক ঐক্য : শোককরানা মাহফিল

  • প্রকাশিত ০২ নভেম্বর ২০১৮

কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমানের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। ছিটেফোঁটা কিছু কার্যক্রমের পর ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়া’ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে পুনরায় আলোচিত হয় বিষয়টি। প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আবার শুরু হয় কার্যক্রম। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় সব বোর্ডের মধ্যে ঐক্যমত গঠনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বরে হাটহাজারী মাদরাসায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শুরু হয় নতুন সমীকরণ। বিভক্তির বদলে গড়ে উঠতে থাকে ঐক্যমুখর পরিবেশ। ৬ বোর্ডের সমন্বয়ে গঠন করা হয় ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’। ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া’র অধীনে ‘কওমি মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল, ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জয়নাল আবেদীন ও আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া’র অধীনে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার শুকরিয়াস্বরূপ ৪ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘শুকরানা মাহফিল’ বাস্তবায়নের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এ মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন আল্লামা আহমদ শফী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন। সারা দেশ থেকে আলেম-উলামা, মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও ইসলামপ্রিয় জনতা অংশ নেবেন এই মাহফিলে। শুকরানা মাহফিলকে ঘিরে বাংলাদেশের কওমি আলেম-উলামাদের মাঝে ঐতিহাসিক এক ঐক্য প্রক্রিয়ার শুভ সূচনা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে দেশবরেণ্য বেশ কয়েকজন আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন মিরাজ রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়ালি উল্লাহ সিরাজতানজিল আমির

 

regular_4453_news_1541086472

 

 

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

চেয়ারম্যান, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড

বহুল প্রত্যাশিত ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি আইনে পরিণত হয়েছে। এ স্বীকৃতির জন্য আমাদের বহু চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহ ও আন্তরিকতার কারণেই বিষয়টি বাস্তবতায়ন হয়েছে। উলামায়ে কেরামের প্রতি তার শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ থেকে তিনি নজিরবিহীন এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেমদের অসামান্য অবদান ও সমাজে কওমি আলেমদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই তিনি এ বিরল কাজটি করেছেন। রসুল (সা.) বলেছেন, যে মানুষের শুকরিয়া আদায় করে না, সে আল্লাহরও শুকরিয়া আদায় করে না। তাই আলেম সমাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শুকরিয়া জ্ঞাপনের মাধ্যমে সংবর্ধনা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।  

মাওলানা রুহুল আমিন

চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা

শুকরিয়া মাহফিলের বিষয়ে আমরা দলমত নির্বিশেষ সবাই এক। শুধু জামায়াতে ইসলাম ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে আমাদের কোনো বিভেদ নেই। বস্তুত আমরা ‘কওমি আলেম সমাজ’ সবাই এক হয়েছি। অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় একটি বিষয় আমরা অল্প সময়ের মধ্যে করতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে- সারা বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা একসঙ্গে হচ্ছে। কওমি সনদের স্বীকৃতির নেপথ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান সবচেয়ে বেশি। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ আরো যাদের অবদান রয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মাওলানা আবদুল কুদ্দুস

মহাসচিব, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই জন্য আমরা শুকরিয়া মাহফিলের মাধ্যমে তাকে সংবর্ধনা দিচ্ছি। শুকরিয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন আল্লামা আহমদ শফী। আর প্রধান অতিথি থাকবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমাদের এই শুকরিয়া মাহফিলের সঙ্গে কোনো রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।

শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ

ধর্মবিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

কওমি মাদরাসার মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, পাক-ভারত উপমহাদেশে ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে। ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও জীবনধারার প্রসারও হয়েছে দেওবন্দি আলেমদের মাধ্যমে। সে হিসেবে কওমি আলেমদের মূল্যায়ন করার ইচ্ছে আওয়ামী লীগের আগে থেকেই ছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। এরপর ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে প্রায় তিনশ আলেম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেও কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি আলোচনা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই একটি কথা জোর দিয়ে বলেছেন, আলেমরা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এ অঙ্গীকার তিনি পূর্ণভাবেই রক্ষা করেছেন। শেষ সময়ে যখন স্বীকৃতির প্রক্রিয়া নিয়ে মতবিরোধ হচ্ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দূরদর্শিতাতেই সবার মাঝে সমন্বয় সম্ভব হয়েছে। বহু ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে এখন স্বীকৃতি আইনে পরিণত হয়েছে। তাই আলেম সমাজ প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য শুকরানা মাহফিল করছেন। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই আনন্দ ও সৌভাগ্যের।

আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদবী এমপি

সদস্য, বোর্ড অব গভর্নর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কওমি মাদরাসার সনদ স্বীকৃতির বিষয়টি খুবই আনন্দের। আমি কওমি মাদরাসা থেকে পড়াশোনা করেই এ পর্যায়ে এসেছি, অথচ স্বীকৃতির অভাবে আমাদের মেধাগুলো জাতীয়ভাবে কাজে লাগাতে পারছিলাম না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে ঐতিহাসিক এ কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। তাই অবশ্যই তাকে সম্মাননা জানানো প্রয়োজন। সংবর্ধনা ও শুকরানা মাহফিলকে নিয়ে অনেকে বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে প্রধানমন্ত্রী স্বীকৃতি দিয়েছেন। কথা হলো, রাজনীতি মানেই তো নোংরামি নয়। রাজনীতির মূল হলো মানবকল্যাণ। স্বীকৃতির নেপথ্যে যদি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকে, তা হলো সেবা ও মানবকল্যাণের রাজনীতি।

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ

সহ-সভাপতি, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ

স্বীকৃতির বিষয়টি একটি ঐতিহাসিক বিষয়। স্বীকৃতির বিষয়টি প্রথমত অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে ছিল। সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে সংসদে পাস হয়েছে শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতার কারণে। এ জন্য আমি আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তিনিই সব করতে পারেন। তবে বাহ্যিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তার কারণে এই স্বীকৃতি আলোর মুখ দেখতে পেরেছে। এজন্য শুকরিয়া মাহফিলের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করা এবং বর্তমান সরকারের শুকরিয়া আদায় করাকে আমি ওলামায়ে কেরামের নৈতিক দায়িত্ব মনে করি। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে বেদআতী ও মওদুদিসহ যারা আছে, তাদের বিরুদ্ধে গঠনমূলকভাবে ভূমিকা রাখতে পারবেন কওমি উলামাগণ। এটা আসলে আমাদের জন্য অনেক বড় একটা প্রাপ্তি।

মুফতি ফয়জুল্লাহ

সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) 

দাওরায়ে হাদিসের সনদ মাস্টার্স ডিগ্রি সমমানের স্বীকৃতিপ্রাপ্তিতে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর প্রতি কৃতজ্ঞতা অভিনন্দন। অভিনন্দন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও। সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়ে নিজেরাই সম্মানিত হয়েছে। এর বিনিময় তারা পাবে দুনিয়া ও আখিরাতে। অনেকেই খেই হারিয়ে কখনো হেফাজতে ইসলামকে টেনে আনছে এই প্রক্রিয়ায়। হেফাজতে ইসলাম এবং কওমির স্বীকৃতি কখনো এক নয়। একটি হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি যা আমাদের অধিকার। আর হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে এ দেশের গণমানুষের ঈমান ও আকিদা সংরক্ষণে আমাদের দায়িত্ব, যা আমাদের কাছে নবীর উত্তরাধিকার। দুটি বিষয়কে এক করে পানি ঘোলা করা উচিত নয়। কওমি মাদরাসার ছাত্ররা যেহেতু ঈমানদার, আত্মমর্যাদাশীল ও দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ, তাই তারা সচেতন হবে, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এগিয়ে যাবে এটা আমার প্রত্যাশা।

মাওলানা আবদুল বাসির

মহাসচিব, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ

আমাদের সবার মুরুব্বি হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফী হুজুরের নেতৃত্বে কওমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতি লাভ হয়েছে। এটা একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। একটা সময় কওমি মাদরাসায় অনেকেই শিক্ষাগ্রহণ করতে আসতেন; কিন্তু কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় অনেকেই মাদরাসায় ভর্তি হচ্ছিলেন না। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে কওমি মাদরাসার শিক্ষার মান অনেকগুণ বেড়ে গেছে। কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির জন্য যারা কাজ করেছেন, আমি সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

মাওলানা মাহফুজুল হক

যুগ্ম মহাসচিব, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) 

‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর অধীন ‘কওমি মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান করা হয়েছে। মূলত আমাদের মুরুব্বিরা যেভাবে স্বীকৃতি চেয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এজন্য সর্বপ্রথম শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহপাকের। আমাদের কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির স্বীকৃতি যেহেতু দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সে কারণে আমরা শুকরানা মাহফিল করে তার শুকরিয়া আদায় করব।

মুফতি শাহেদ রহমানী

তানজিমুল মাদারিসিল কওমিয়া

কওমি ধারার সকল বোর্ডের সমন্নয়ে গঠিত হয়েছে ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’। এই বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বোর্ডের চেয়ারম্যান আমাদের সবার মুরুব্বি আল্লামা আহমদ শফী সাহেব হুজুর। আমি মনে করি, আমাদের মুরুব্বিরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। স্বীকৃতি বিষয়ে আরো একটি কথা হলো, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা কেউ-ই জানি না। আগামীকাল কী হবে সেটাও আমরা জানি না। তবে আমি আবারো বলব, মুরুব্বিরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটার মধ্যে অবশ্যই কল্যাণ রয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads