• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মেহমান আপ্যায়নে ইসলামের দিকনিদের্শনা

তিন দিন পর্যন্ত মেহমানদারি করা নিয়ম

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

মেহমান আপ্যায়নে ইসলামের দিকনিদের্শনা

  • প্রকাশিত ০২ নভেম্বর ২০১৮

মুফতী আবদুল্লাহ

কাউকে আপনি দাওয়াত দিলেন আর তিনি তা অগ্রাহ্য করলেন, তা হলে তিনি আল্লাহপাক ও রসুল (সা.)-এর অবাধ্য আচরণ করলেন। অবশ্য বাস্তবতার নিরিখে দাওয়াতেরও প্রকারভেদ আছে, যেমন- এক দাওয়াত হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-এর প্রতি অর্থাৎ দ্বীন-ধর্মের প্রতি দাওয়াত। সেই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলেই কেবল উক্তরূপ ধমকের বিষয়টি প্রযোজ্য হওয়ার কথা। আরেক ধরনের দাওয়াত হচ্ছে, এক মুসলমান অপর মুসলমান ভাইয়ের ডাকে, বিপদে-আপদে সাড়া দেওয়া। এই দাওয়াত প্রত্যাখ্যানেও উক্তরূপ কঠোর বাণী প্রযোজ্য হতে পারে। কারণ এটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত মুসলমানদের পরস্পরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছয়টি হকের অন্যতম। আরেকটি দাওয়াত হচ্ছে, খাওয়া খাওয়ানো, আদর-আপ্যায়নের লক্ষ্যে সৌজন্য শ্রেণির সাধারণ দাওয়াত। এই তৃতীয় শ্রেণির দাওয়াতের ক্ষেত্রে যদিও উক্তরূপ ধমকের বিষয়টি প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়, তারপরও শরিয়তে তার বেশ মূল্যায়ন রয়েছে। কেননা ইসলাম ধর্মে সমাজ, স্বজন ও প্রতিবেশীর সম্মান, মিলে-মিশে বসবাস, পারস্পরিক ঐক্য, সহমর্মিতা এবং একে-অন্যের বিয়েশাদি, মৃত্যু-জানাজা ইত্যাদি সুখে-দুঃখে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর মুসলিম সমাজে আলোচ্য দাওয়াত-আপ্যায়ন সামাজিক বন্ধন ও সম্পর্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখে।

হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহপাক ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।’ মেহমানের সম্মানের অন্যতম হচ্ছে তার জন্য দ্রুত খাবারের ব্যবস্থা করা। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ব্যাপারে কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি অবিলম্বে এক কাবাবকৃত গোবৎস নিয়ে এলেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৬৯)

সুতরাং মেহমানের সামনে দ্রুত খাবার উপস্থিত করা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর অন্যতম আদর্শ। মেহমানের জন্য একদিন, একরাত পর্যন্ত উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করা সমীচীন। তিন দিন পর্যন্ত মেহমানদারি করা নিয়ম। তার অধিক মেহমানদারি করলে তা দানের মধ্যে গণ্য হবে। (বুখারি)

একজন মুসলিম হিসেবে কর্তব্য হচ্ছে, মেহমানের সামনে নিজে খাবার রাখা এবং তার সেবা করা। অনেক পীর-মাশায়েখের আমল ছিল, যদি কোনো আধ্যাত্মিক সম্পর্কধারী তথা খেলাফতপ্রাপ্ত শায়খ মেহমান হিসেবে আসতেন, তা হলে তার খাবার নিজের মাথায় বহন করে নিয়ে এসে তার সামনে পেশ করাকে নিজের জন্য সৌভাগ্যের কারণ মনে করতেন।

মেহমানদের সঙ্গে খাবারে শরিক হয়ে এমন নিয়ত করতে হবে যেন নিজ ভাইদের সম্মান করছি, তাদের আনন্দদানের চেষ্টা করছি এবং তাদের সঙ্গে জামাতবদ্ধভাবে খাবার গ্রহণের বরকত অর্জনে অংশগ্রহণ করছি। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জামাতের মধ্যে বরকত নিহিত।’ এটি কোনো ভদ্রতার পরিচায়ক নয় যে, এক ভাই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন অথচ তিনি তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে নফল নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন কিংবা তার ভাই তার জন্য খাবার এনে তার সামনে রেখে দিলেন আর তিনি নফল রোজার কারণে তার সঙ্গে আহারে শরিক হলেন না। নবী করিম (সা.)-এর বাণী বিদ্যমান যে, ‘বান্দা উত্তম আচরণের দ্বারা রোজা পালনকারীর এবং রাত্রি জাগরণকারীর অনুরূপ মর্যাদা অর্জন করে নেন।’

মেহমানের সামনে প্রথমে ফল, তারপর খাবার পেশ করা চাই। এটি পবিত্র কোরআনের বর্ণনার অনুকূল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘তারা তাদের সামনে নানা ধরনের সুস্বাদু ফল পরিবেশন করবে যাতে পছন্দমতো বেছে নিতে পারে। পাখির গোশত পরিবেশন করবে, যে পাখির গোশত ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারবে। (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত : ২০-২১)

আবু ইসহাক হজরত সুফিয়ান সওরি (রা.) ও তাঁর সঙ্গীদের দাওয়াত করলেন এবং তাঁদের সামনে বড় ধরনের খাবার পেশ করলেন। তাঁরা বললেন, ‘হে আবু ইসহাক! আপনি কি ভয় করছেন না, এত বেশি পরিমাণ খাবার আয়োজনে অপব্যয় হবে?’ তিনি জবাবে বললেন, মেহমানদের খাবারের ক্ষেত্রে অপব্যয় ধরা হয় না।

 

লেখক : মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads