• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
আখেরি চাহার শম্বায় আমাদের করণীয়

সফর মাসের শেষ বুধবারকে আখেরি চাহার শম্বা বলা হয়

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

আখেরি চাহার শম্বায় আমাদের করণীয়

  • মো. আবু তালহা তারীফ
  • প্রকাশিত ০২ নভেম্বর ২০১৮

আগামী ৭ নভেম্বর ২০১৮ আরবি সফর মাসের শেষ বুধবার। সফর মাসের শেষ বুধবারকে আখেরি চাহার শম্বা বলা হয়।   আরবি আখেরি শব্দের অর্থ ‘শেষ’ আর চাহার শম্বা ফারসি শব্দ, অর্থ ‘চতুর্থ বুধবার’। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পালিত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন। হিজরি ২৩ সনের সফর মাসে শেষবারের মতো রসুল (সা.) রোগমুক্তি লাভ করেছিলেন। তাই উম্মতে মোহাম্মদিরা শুকরিয়া হিসেবে এই দিনে উত্তমভাবে গোসল করে, নতুন জামা পরিধান করে সুগন্ধি ব্যবহার করে নফল ইবাদত, তাসবিহ তাহলিল সালাত ও সালামের মাধ্যমে অতিবাহিত করে থাকেন। বিদায় হজ পালন করে মদিনায় আসার পর রসুল (সা.) জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে পাওয়া যায়, রসুল (সা.) একজন সাহাবির জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। ফেরার পথে তাঁর ভীষণ মাথাব্যথা শুরু হয়। ধীরে ধীরে তাঁর অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পায়। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রসুল (সা.)-এর জ্বর এবং মাথাব্যথা এত বেশি ছিল যে, মাথায় একটি রুমাল বাঁধা ছিল। তাঁর দেহে হাত রাখা সম্ভব হলো না। সফর মাসের শেষ বুধবার রসুল (সা.) আয়েশাকে ডেকে বললেন, হে আয়েশা! আমার জ্বর কেটে গেছে, শরীরটা ভালো লাগছে, মাথা হালকা মনে হচ্ছে। ভীষণ আরাম পাচ্ছি। আমাকে গোসল করিয়ে দেও। রাহমাতুল্লিল আলামিন গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, রসুল (সা.) পাথরের জলাধারে বসে সাতটি কুয়ার সাত মশক পানি নিজের মাথায় দেন। ফলে কিছুটা সুস্থতা বোধ করেন। সুস্থ মুখে তাঁর রুচি বেড়ে যায়। পেটে ক্ষুধা, খাবার চাইলেন হজরত আয়েশার কাছে। ঘরে কোনো খাবার আছে আয়েশা? আয়েশা বললেন, রুটি আছে। রসুল (সা.) বললেন, ফাতিমা ও হাসান-হোসাইনকে খবর দাও। পিতার খবর পেয়ে ফাতিমা দুই হাতে দুই সন্তানকে নিয়ে ছুটে এলেন পিতার কাছে। রসুল (সা.) মেয়ে ফাতিমাকে দেখে আদর করলেন। হাসান-হোসাইনের কপালে চুমো দিলেন। তাঁদের নিয়ে খাবার খেলেন। বাতাসের গতিতে  হজরত বিলাল ও আহলে সুফফার সদস্যরা রসুলের সুস্থতার খবর জানিয়ে দিলেন। মদিনার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল এই মহান আনন্দের বার্তা। আনন্দিত হলেন নবীর প্রেমিকরা। মদিনার রাস্তায় রাস্তায়, বাড়িতে বাড়িতে যেন আনন্দের এক জোয়ার বয়ে গেল। রসুল (সা.) সুস্থ হয়েছেন বলে শুকরিয়া হিসাবে দান-সদকা দেওয়া শুরু করলেন নবীর প্রেমিকরা। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু বকর (রা.) ৫ হাজার, হজরত ওমর (রা.) ৭ হাজার, হজরত আলি (রা.) ৩ হাজার দিরহাম গরিব মিসকিনদের মধ্যে বিলিয়ে দিলেন।

রসুল (সা.)-এর সাহাবি হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ খুশিতে ১০০ উট আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলেন। শুধু তা-ই নয়, প্রেমের টানে ছুটছেন প্রেমিকরা প্রিয়জনের সুস্থতার চেহারা মোবারক দেখার জন্য। সাহাবিরা ছুটে আসেন প্রিয় রসুল (সা.)-এর চেহারা দেখে মনকে শীতল করার জন্য। রসুল (সা.) তাঁর আবেগময় কণ্ঠ দিয়ে সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের কাছ থেকে আমি বিয়োগ হলে তোমরা কেমন করবে? রসুল (সা.)-এর কথা শেষ না হতেই সাহাবিদের হূদয়ে ক্রন্দন শুরু হলো। অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরতে লাগল। সাহাবিদের ভালোবাসা দেখে রসুল (সা.) তাঁর মধুময় কণ্ঠে বললেন, আমাকে যেতে হবে প্রভুর দরবারে। সাহাবিরা পথ চেয়ে রয়েছেন রাহমাতুল্লিল আলামিনের জন্য। তাঁরা প্রিয় নবীর পেছনে নামাজ আদায় করবেন তৃপ্তি সহকারে। দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর সুস্থ শরীরে গোসল করে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে নামাজের পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি খুব বেশি অসুস্থতা বোধ করেন। মসজিদে নববীতে যেতে চাইলেও যেতে পারছেন না।

আখেরি চাহার শম্বা এমন একটি দিন, যেদিন সাহাবিরা সকালে আনন্দ করেছেন আর বিকালে ক্রন্দন করেছেন। ওইদিন সকালে রসুল (সা.) সুস্থ হয়েছিলেন। পরে আবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রসুল (সা.) যে অসুস্থতায় ওফাত হয়েছিল, সেই অসুস্থতার শুরু সফর মাসেই। অবশেষে সর্বমোট প্রায় ১৩ দিন অসুস্থতা থেকে ১০ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার ওফাত লাভ করেন।

প্রিয় পাঠক, আসুন রসুল (সা.)-এর রোগমুক্তির দিবসটি থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। আমাদের মাঝে লুকিয়ে থাকা অন্যায় অবিচার হিংসা বিদ্বেষ বিলুপ্ত করি। এই মহান দিনে সাহাবিরা আনন্দে শুকরিয়া হিসাবে আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা দিয়েছিলেন। আমাদের উচিত রসুল (রা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দান-সদকা করা।  শীতের আগমন ঘটছে। এই শীতে আমরা রসুল (রা.)-এর মায়ায় গরিব অসহায়দের জামা কিংবা কম্বল দিয়ে উপকার করি। সবসময় তাঁর প্রতি সালাম দিই। আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে নিজের জীবন অতিবাহিত করি। সুন্দর পৃথিবীতে পরকালে মুক্তির চিন্তা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন।

লেখক : আলেম ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads