কালিজিরাকে বলা হয় ‘মৃত্যু ছাড়া সর্বরোগের মহৌষধ’। আবার অনেকে একে বলে কালো হীরা। প্রাচীনকাল থেকেই নানা অসুখ-বিসুখে কালিজিরাকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন চিকিৎসক-কবিরাজরা। মাথার চুল থেকে পায়ের নখসহ সব অঙ্গের রোগ নিরাময়ে জুড়ি নেই কালিজিরার। ইসলামের দৃষ্টিতে রসুল (সা.)-এর যুগ থেকেই মুসলমানরা কালিজিরার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করে আসছেন। এমন কোনো রোগ নেই, যার প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। হয়তোবা সময়ের ব্যবধানে কখনো আগে, কখনো পরে আবিষ্কৃত হয় তার প্রতিষেধক। রসুল (সা.) এ ব্যাপারে বর্ণনা করেন, আল্লাহ এমন কোনো ব্যাধি অবতীর্ণ করেননি, যার নিরাময়ের কোনো উপকরণ সৃষ্টি করেননি। হাদিসটি মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না (রহ.), হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবী (সা.) থেকে বর্ণিত। (সহিহ বুখারি : ৫২৭৬)
কালিজিরার ফজিলত বর্ণনায় হাদিস শরিফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা (রহ.) বর্ণনা করেন, হজরত খালিদ ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের উদ্দেশ্যে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনে আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এরপর আমরা মদিনায় এলাম, তখনো তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাকে দেখাশোনা করতে আসেন ইবনে আবু আতিক। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা এই কালিজিরা সঙ্গে রেখো। এ থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে খাবে। তারপর তার মধ্যে জয়তুনের কয়েক ফোঁটা তেল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এ দিক-ওদিকের ছিদ্রপথে ফোঁটা ফোঁটা করে দেবে। কেননা হজরত আয়েশা (রা.) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, এই কালিজিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ওষুধ। আমি বললাম, সাম কী? তিনি বললেন, সাম অর্থ মৃত্যু। (সহিহ বুখারি : ২২৭৮)
জটিল ও কঠিন রোগ দূর করতে কালিজিরা ব্যবহারের নিয়মও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যখন কোনো রোগ-যন্ত্রণা খুব বেশি কষ্টদায়ক হয়, তখন এক চিমটি পরিমাণ কালিজিরা নিয়ে খাবে। তারপর পানি ও মধু সেবন করবে। (মুজামুল আওসাত/ তাবরানি)
শুধু ইসলামের দৃষ্টিতেই কালিজিরার গুণ বলা হয়নি, বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানেও এর অনেক গুণ উল্লেখ করা হয়েছে, যা পত্র-পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করে সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করছি। অসংখ্য গুণ থাকা সত্ত্বেও কিছু গুণের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। কালিজিরার অসাধারণ ৮টি উপকারিতার কথা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। এগুলো হলো- ১. পেট খারাপের নিয়মিত সমস্যা থাকলে কালিজিরা সামান্য ভেজে গুঁড়ো করে ৫০০ মিলিগ্রাম হারে ৭-৮ চা চামচ দুধে মিশিয়ে ওই মাত্রায় সকালে ও বিকালে সাত দিন খেলে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়। ২. যেসব মহিলা অনিয়মিত অথবা স্বল্প অথবা অধিক স্রাবের জন্য কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাদের ঋতু হওয়ার পাঁচ-সাত দিন আগে থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম হারে সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে সকাল-বিকাল খেতে হয়। তারপরও অসুবিধা থেকে গেলে পরপর ২-৩ মাস এভাবে খেতে হবে। ৩. অল্প মাত্রায় কালিজিরা মেয়েদের ঋতুস্রাব বাড়ায়, ঋতুরোধ অসুখ সারায়। তবে বেশিমাত্রায় খেলে গর্ভস্রাব হয়। প্রচণ্ড মাথাব্যথা হলে কালিজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিলে ও মিহি গুঁড়োর নস্যি নিলে উপকার হয়। ৪. সর্দিতে কালিজিরার নস্যি নিলে উপকার পাওয়া যায়। ৫. কালিজিরার তেল গায়ে মাখলে চুলকানিতে উপকার হয়। ৬. স্মৃতিভ্রম দূর করে। ৭. স্মরণশক্তির দুর্বলতায় কালিজিরা খুব কার্যকর। ৩ গ্রাম কালিজিরা ২০ মিলিলিটার বিশুদ্ধ মধুসহ খেলে এ রোগ সারে। ৮. পরিমাণমতো কালিজিরা খেলে প্রস্রাব পরিষ্কার হয়।
এছাড়া ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, লিভার ভালো রাখে, হূদযন্ত্র ভালো রাখে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, অ্যালার্জি ও অ্যাজমা উপশম হয়, ওজন কমাতে সাহায্য করে, হজমশক্তি বাড়ায়, উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস, রোগ প্রতিরোধক, ফাংগাল সংক্রমণ রোধ করে। কিডনির যত্নে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রক্তে বাজে কোলেস্টেরল রোধ, গেঁটে বাত বা অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর করতে কার্যকর কালিজিরা। এ ছাড়া দাঁত শক্ত করে, পাইলস, কোষ্ঠকাঠিন্য, যকৃতের সমস্যা বা জন্ডিস থেকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে কালিজিরা।
এস এম আরিফুল কাদের
লেখক : আলেম ও গবেষক