• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
দুর্নীতি রোধে আত্মশুদ্ধির অনুশীলন জরুরি

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

দুর্নীতি রোধে আত্মশুদ্ধির অনুশীলন জরুরি

  • প্রকাশিত ০৯ নভেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। সংগ্রামী পরিশ্রমী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল। ভাষার জন্য আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার গর্বিত ইতিহাস বিশ্বের কয়টি দেশেরই আছে। কিন্তু অপার সম্ভাবনার এই সোনার দেশটিকে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কিছু সংখ্যক লোভী এবং ধান্ধাবাজ মানুষের লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা। অর্পিত দায়িত্বকে প্রাপ্ত সুযোগ মনে করে তারা মেতে উঠেছে লুটপাটের মহোৎসবে। এই ধ্বংসাত্মক প্লাবনের ছুটে চলা একদিন দু’দিনের নয়। বছরের পর বছর ধরে উৎসারিত হচ্ছে দুর্নীতির এই খেলা। দুর্নীতির এ খেলা বা পাগলা ঘোড়া আমাদের দেশের গর্বিত তথা বাংলাদেশের ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে। অগ্রগতির পথে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা দুর্নীতির কাঁটাতারে বার বার হোঁচট খাচ্ছে। মুখ থুবড়ে পড়ছে। বিগত কয়েক বছর দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে গোটা জাতিকে সীমাহীন লজ্জায় ডুবিয়েছে। তবু মানুষের এগিয়ে চলা নতুন সূর্যোদয়ের আশায় নিশীতে প্রহর গোনা হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো দুর্নীতির ব্যাখ্যা কী? দুর্নীতির ব্যাখ্যা ব্যাপকতর। ক্ষমতার ব্যাপকতার সঙ্গে তা সম্পর্কযুক্ত। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত একজন লোকের দুর্নীতি রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর পরিবারের কর্ণধারের দুর্নীতি পরিবারকে বিপদে ফেলে। এক কথায় দুর্নীতি হলো অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এর মাধ্যমে স্বার্থ চরিতার্থ করা। রাষ্ট্র এবং মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিজে লাভবান হওয়া। নিজে লাভবান হওয়ার মানসিকতা স্বীকৃত হলেও অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মনোবৃত্তি ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। রাষ্ট্র থেকে শুরু করে একজন ব্যক্তিকেও তার দায়িত্ব ও কর্মক্ষেত্রের ব্যাপারে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। নবী করিম (দ.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমরা অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ দুর্নীতি দমনে দেশে আইনের কোনো ঘাটতি নেই। অভাব শুধু সেই আইনের যথার্থ প্রয়োগ এবং ফাঁক-ফোকর বন্ধ করা। দায়িত্ব পালনের জন্য সঠিক ব্যক্তির মনোনয়ন এবং প্রার্থিতার ক্ষেত্রে অর্থ, দল, ক্যাডার ও আত্মীয়তাকে উপেক্ষা করে মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠিকে প্রাধান্য দেওয়া এবং এর অনুশীলন দুর্নীতি লাঘবে সহায়ক হবে। রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত যে কোনো দায়িত্বই প্রকৃত অর্থে একটি আমানত। এই আমানতের খেয়ানত করাই হলো দুর্নীতি। এই দায়িত্ব পালনের বিপরীতে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায় করা তথা স্বেচ্ছাচারিতা গোটা ব্যবস্থাকে ওলট-পালট করে দেয়। আমানতের ব্যাপারে কোরআন-হাদিসে অনেক কঠিন ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তোমাদের নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌঁছে দাও।’ হাদিস শরিফে আমানতের খেয়ানতকে মুনাফেকের আলামত বলা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগ বা ক্ষমতার দাপটে কোনো দিন দুর্নীতি দমন করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন মানুষের মনে পরিশুদ্ধি এবং খোদাভীতি অর্জন। আল্লাহর ভয় অন্তরে না থাকলে দুর্নীতি রোধ করা যাবে না। সৎ ও যোগ্য মানুষ তৈরি করতে হবে। যাদের অন্তর পার্থিব মোহ থেকে মুক্ত হয়ে আখিরাত লাভের প্রত্যাশায় আপ্লুত থাকবে। নবী করিম (দ.) নবুয়ত লাভের পর ১৩ বছর শুধু মানুষ তৈরি করেছিলেন। তারপর যখন তাদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসিয়ে দিয়েছিলেন, তখন আর বিশৃঙ্খলা বা অনিয়ম হয়নি। তারা অর্ধজাহান শাসন করেছেন, কিন্তু ইসলামের শত্রুরাও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করার সুযোগ পায়নি। নবীজির দরবারে একবার এক বুড়ি এসে আরজ করলেন, হুজুর! আমার এই ছেলেটা খুব মিষ্টি খেতে চায়, তাকে আপনি একটু বুঝিয়ে নিষেধ করে দিন। তখন নবীজি বললেন, আপনি আপনার ছেলেকে নিয়ে এক সপ্তাহ পর আসুন। এক সপ্তাহ পর বৃদ্ধ বুড়ি আবার তার ছেলেকে নিয়ে এলেন। তখন প্রিয় নবী (দ.) ছেলেটিকে মিষ্টি খেতে বারণ করেন অর্থাৎ নিষেধ করেন, তখন ছেলেটির মা আশ্চর্য হয়ে বলেন, এই কথাটি আপনি আগেই বলে দিতে পারতেন। এই সময় নবীজি বলেন, এই এক সপ্তাহ আমি নিজে মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিয়ে অনুশীলন করে তারপর তাকে বলেছি। এভাবে আমাদেরও আত্মশুদ্ধির অনুশীলন করে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনে আন্তরিক হতে হবে।

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

 ই-মেইল jahangirjabir5@gmail.com

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads