• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জমিনের যাবতীয় বিপর্যয় মানুষের অর্জন

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

জমিনের যাবতীয় বিপর্যয় মানুষের অর্জন

  • প্রকাশিত ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮

পৃথিবীতে যত বিপর্যয় হয়ে থাকে তা মানুষের নিজেদের কারণেই হয়ে থাকে। যদিও মানুষ আপতিত বিপদ-আপদের জন্য আল্লাহকেই দায়ী করে থাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, যতক্ষণ না তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি কর, ততক্ষণ কোনো ধরনের বিপর্যয় বা ফ্যাসাদের শিকার হবে না তোমরা। আল্লাহপাক মানুষকে তাঁর একান্ত প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বচরাচরের দৃশ্য-অদৃশ্য সব সৃষ্টি মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্টির প্রতিটি জিনিস স্ব-স্ব আঙ্গিকে স্রষ্টা আরোপিত দায়িত্ব নিরলসভাবে পালনের মাধ্যমে পৃথিবীকে মানুষের বাসোপযোগী করে রেখেছে। আল্লাহর তৈরি এই পৃথিবীতে যা আছে সবই মানুষের জন্য, মানুষ বসবাসের অনুকূল পরিবেশের জন্য। পৃথিবীর  প্রতিটি জিনিসের পরস্পর কর্মগত নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যেমন প্রাণীদেহের সঙ্গে পানি, বাতাস, আলো, তাপ এবং সূর্যরশ্মির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। গাছের পাতা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে আর ত্যাগ করে অক্সিজেন। এভাবে গাছের কিশলয়, মুকুল, পাতা এবং সমগ্র তরুলতা ধারণ করে সবুজ আর তা উপহার দেয় বিশ্ববাসীকে। অন্যদিকে বাতাসে সরবরাহ করে অফুরন্ত অক্সিজেন, যা দিয়ে বাঁচে আমাদের তথা সমগ্র প্রাণিজগতের প্রাণ।

আরেকটু লক্ষ করলে দেখা যাবে, সৌরজগতের সঙ্গে পৃথিবীর চাঁদের সম্পর্ক রয়েছে, চাঁদের সঙ্গে সূর্যের। এভাবে মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি প্রভৃতি গ্রহ-উপগ্রহ, নক্ষত্ররাজি পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে একটি বিধিবদ্ধ সুসম্পর্ক রয়েছে। সূর্যকে বাদ দিলে চাঁদ হারাবে তার স্নিগ্ধ মনোহর আলো। সূর্যকে বাদ দিলে পৃথিবী অন্ধকারের সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে। এভাবে সৌরজগতে প্রতিটি সৌরসদস্যই পরস্পরের সঙ্গে একটি মজবুত শৃঙ্খলে আবদ্ধ। একটি সদস্যও যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাহলে সবই চুরমার হয়ে পড়বে, অর্থাৎ কিয়ামত হয়ে যাবে। এ কাজে নিয়োজিত সব সদস্যই ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায়, আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করেই চলছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তারা কি আল্লাহর দ্বীন বাদ দিয়ে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? অথচ আকাশ ও জমিনের সবকিছুই স্বেচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় আল্লাহর দ্বীনের আনুগত্য করছে আর তাদের আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে। (সুরা আল ইমরান : ৮৩)। মূলত এ জন্যই আমরা জীবনযাপনে আনুকূল্য পাচ্ছি আর বেঁচে থেকে আল্লাহর গোলামির সুযোগ লাভ করছি।

চোখ খুলে তাকালে দেখা যাবে, আল্লাহপাক কত প্রশান্তি ও প্রাচুর্যে জগৎকে ভরপুর করে রেখেছেন। ভূপৃষ্ঠকে নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, সবুজের সমারোহে সুশোভিত করেছেন। আকাশমণ্ডলীকে উড়ন্ত মেঘমালা দিয়ে, নীলের সাগরে নক্ষত্ররাজি এবং সূর্য ও চন্দ্র দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করেছেন। দিন ও রাত সৃষ্টি করেছেন উপার্জন ও বিশ্রাম বা ঘুমানোর জন্য। নারী ও পুরুষ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন প্রশান্তি ও বংশবিস্তারের জন্য। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফল, শাকসবজি, পশুপাখির মাংস, ডিম ও দুধ রেখেছেন আমাদের নিরাপদ ও বিশুদ্ধ খাবার হিসেবে। এ সবই আমাদের সুন্দর জীবনযাপনের জন্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি, প্রদান করেছি তাদের উত্তম জীবনোপকরণ এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সুরা বনি ঈসরাইল, আয়াত : ৭০) অন্যত্র ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তিনি জমিনকে সমস্ত সৃষ্টির জন্য বিছিয়ে দিয়েছেন। জমিনে রয়েছে সব ধরনের ফলমূল, খেজুর গাছে নতুন কাঁদি। নানা ধরনের খোসা আবৃত শস্যদানা আর সুগন্ধি লতাগুল্ম। অতএব (হে জিন ও মানুষ!) তোমাদের প্রতিপালকের কোন নিয়ামত অস্বীকার করবে? (সুরা আর-রাহমান, আয়াত : ১০-১৩) জাগতিক জীবনে প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনে এগুলো সহায়ক। এসব না হলে আমরা বেঁচে থাকতে পারতাম না। পারতাম না সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে। তা হলে আল্লাহর গোলামি করাও সম্ভব হতো না। সম্ভব হতো না আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করা। এ জন্য এসব ব্যবস্থাপনা বিশ্ববাসীর জন্য এক অনবদ্য নিয়ামত আল্লাহর গোলামির সহায়ক উপকরণ হিসেবে। যখন বিশ্ববাসী এসব নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা পোষণ করে, অবমাননা ও অবজ্ঞা করে, নাফরমানি ও আল্লাহদ্রোহিতায় লিপ্ত হয় তখন নিয়ামত রূপান্তরিত হয় গজবে। বৃষ্টি অনেক প্রয়োজনীয় ভূপৃষ্ঠের জন্য। বৃষ্টি নিরাপদ পানির প্রধান উৎস। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের ওপর নভোমণ্ডলকে সাত স্তরে বিন্যস্ত করেছি। স্থাপন করেছি এক উত্তপ্ত উজ্জ্বল প্রদীপ (সূর্য)। আর বায়ুতাড়িত মেঘমালা থেকে বর্ষণ করেছি অফুরন্ত পানি, যা দিয়ে উৎপন্ন হয় শস্য-লতাগুল্ম, তৈরি হয় ঘন পত্রপুষ্প শোভিত বাগান।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ১২-১৬) যখন বান্দা সীমা লঙ্ঘন করে, বিদ্রোহীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে, তখন রহমতের বৃষ্টি রূপ নেয় অতিবৃষ্টি কিংবা অনাবৃষ্টিতে। সরোবর, নদী, সাগর জমিনকে সিক্ত ও উর্বর করার ক্ষেত্রে এবং মানুষের জীবনযাত্রায় নানা সমস্যা সমাধানের মাধ্যম। পানির অপর নাম জীবন। যখন জীবন নামের পানির মতো নিয়ামতের নাফরমানি করা হয়, তখন এই নিয়ামত ভিন্নরূপ নেয়। পানি হয় মৃত্যুর কারণ ।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে বিশ্বের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কপ-২১ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরের বছর জাতিসংঘ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ১৭০টি দেশ। তবে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর আমেরিকা চুক্তি থেকে বেরিয়ে পড়লে বিষয়টি আরো অনিশ্চিত হয়ে যায়। অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে আমেরিকা, চীন ও ভারত। তাদের এই উপার্জন আজ গোটা পৃথিবীর জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্ব অন্যায়-অপরাধের প্লাবনে ভেসে চলছে। গজব এবং বিপদ-আপদও তসবির দানার মতো জাতির দিকে সেভাবেই ধেয়ে আসছে। আমরা কখনো কখনো বিপদ দেখলে আল্লাহকে স্মরণ করি। ঝড়-তুফান ঘরবাড়ি উড়িয়ে নেবে বলে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তার জিকির করি, আজান দিই। যখন ঝড় থেমে গেল, আমরা তখন আল্লাহর কথা ভুলে যাই। আসলে আমাদের সব সময়ই আল্লাহর কথা স্মরণ করতে হবে এবং সব ধরনের অন্যায় অবিচার থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের সে তাওফিক দান করুন। আমিন।

মাওলানা সাইয়েদ রাশীদুল হাসান জাহাঙ্গীর

লেখক : খতিব ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads