• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
জাকারিয়া ও ইয়াহইয়া (আ.)-এর উপদেশ

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

জাকারিয়া ও ইয়াহইয়া (আ.)-এর উপদেশ

  • প্রকাশিত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

হজরত জাকারিয়া ও ইয়াহইয়া (আ.)-এর জীবনী ও ঘটনাপ্রবাহ থেকে খুব সহজেই বিভিন্ন শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা যায়। তার মধ্যে নিচের কয়েকটি শিক্ষা মনোযোগ আকর্ষণ করে।

১. পৃথিবীতে ওই ব্যক্তি থেকে নরাধম ও দুর্ভাগা আর কেউ নেই, যে এমন মহান ব্যক্তিকে হত্যা করে, যে তাকে কোনো কষ্ট দেয়নি, কখনো তার ধন-সম্পদের ওপর হস্তক্ষেপ করেনি। বরং উল্টো কোনো ধরনের পারিশ্রমিক ও বিনিময় ব্যতিরেকে তাঁর জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলতে সর্বপ্রকার সেবা দিয়ে যায় এবং তাকে চরিত্র, কর্মকাণ্ড ও আকিদাগত এমন বিশ্বাস শিক্ষা দেয়, যা তার দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভূত কল্যাণ ও সৌভাগ্য বয়ে আনে। হজরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ (রা.) একবার প্রশ্ন করেছিলেন, কিয়ামতের সবচেয়ে বেশি কোন লোকটি আজাবের হকদার হবে? তার উত্তরে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি যে কোনো নবীকে অথবা এমন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে যে তাকে সৎ কাজের আদেশ করত এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করত।

পৃথিবীর সব জাতির মধ্যে ইহুদি জাতিই সেই চরম নিকৃষ্ট অপকর্মের হোতা। তারা যুগে যুগে তাদের নবী-রসুলদের সঙ্গে যে ধরনের মন্দ আচরণ করেছে, বিদ্রূপ করেছে, গায়ে হাত তুলেছে এমনকি নবী হত্যার মতো জঘন্য কাজ অবলীলায় করে ফেলতে পেরেছে, তার দৃষ্টান্ত অন্য কোনো জাতিতে নেই।

২. বনি ইসরাঈলে অনেকগুলো শাখাগোত্র ছিল। ফলে তাদের জনপদে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পৃথক শাসনব্যবস্থা হতো। যার ফলে একই সময় তাদের উদ্দেশে একাধিক নবী প্রেরিত হতেন। তবে তাদের সবার শিক্ষার একটাই বুনিয়াদ হতো। সেটি হলো তাওরাত। নবী করিম (সা.)-এর পক্ষে তাঁর উম্মতের মধ্যে ‘উলামায়ে কেরাম’-এর যে অবস্থান, হজরত মুসা (আ.)-এর পক্ষে তাদের অবস্থান হতো তারই অনুরূপ। যদিও হাদিসটির প্রামাণ্যতা শাব্দিক বিবেচনায় বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে, কিন্তু ভাষ্য ও মর্মের বিচারে সেটি শতভাগ বিশুদ্ধ ও যথার্থ। কারণ হলো, সর্বশেষ নবীর আগমনের মাধ্যমে নবুওতের ধারাবাহিকতা চূড়ান্ত পূর্ণতায় পৌঁছে সমাপ্তি ঘটেছে, কাজেই অনুকম্পাপ্রার্থী এই উম্মতের কিয়ামত পর্যন্ত ইসলাহ ও হেদায়েতের জন্য ‘উলামায়ে হক’ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো জামাত হতে পারে না। কাজেই তাঁরা নবুওতের উত্তরাধিকারের অভিজাত পদবিতে সেভাবে অধিষ্ঠান পেয়েছেন, হজরত মুসা (আ.)-এর শিক্ষার প্রচার-প্রসারের কাজে যে পদবিতে বনি ইসরাঈলি নবীগণ অধিষ্ঠিত হতেন।

৩. আল্লাহর দয়া ও করুণা থেকে কারো কখনো নিরাশ হওয়া উচিত হবে না। কখনো এমনও হতে পারে যে, এখলাসের সঙ্গে দোয়া করা সত্ত্বেও উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে না; আদৌ এর অর্থ এ নয় যে, ওই ব্যক্তির ওপর থেকে আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি উঠে গেছে। কেননা, আল্লাহ হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান। তাঁর দৃষ্টিতে কখনও কখনও এটাও ধরা পড়ে যে, একজন ব্যক্তি যে জিনিসকে তার নিজের জন্য কল্যাণ মনে করে উঠে-পড়ে চাচ্ছে, তা পরিণতি ও ফলাফলের বিচারে তার জন্য চূড়ান্ত ক্ষতিকর হবে। অথচ সে তার সীমিত জ্ঞানের কারণে বিষয়টি এ মুহূর্তে বুঝতে পারছে না। অথবা প্রার্থিত জিনিসটির অবতরণে বিলম্ব ঘটলে তা ব্যক্তিবিশেষের কল্যাণের স্থলে গোটা গোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর হবে, যার কারণে আল্লাহই তার বিলম্ব চাচ্ছেন। অথবা তার চেয়েও উত্তম উদ্দেশ্যের জন্য এটিকে কোরবান করে দেওয়া হয়। এমন অনেক প্রজ্ঞা ও কল্যাণ অন্তরালে থেকে যায়, যা মানবচোখে গোচরীভূত হয় না। কাজেই শেষ কথা হলো, নৈরাশ্য ও হতাশা আল্লাহর দরবারে অত্যন্ত অপ্রিয় ও অপছন্দনীয়। ইরশাদ হয়েছে, আর আল্লাহর আশিষ হতে তোমরা নিরাশ হয়ো না। কারণ কাফির সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর আশিষ হতে নিরাশ হয় না (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৮৭)।

 

আবদুল্লাহ আল মামুন

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads