• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
যুবক মোহাম্মদ (সা.) ও বর্তমান যুবসমাজ

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

যুবক মোহাম্মদ (সা.) ও বর্তমান যুবসমাজ

  • প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রিয় প্রাণের রসুল আমার মোহাম্মদ (সা.)। মোহাম্মদ একটি নাম, একটি চেতনা, একটি আলোর প্রদীপ, মুমিন মাত্রই এই নামটির মাধ্যমে দুনিয়ার সমস্ত শান্তি উপভোগ করে থাকেন। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে যখন এই পৃথিবী অন্ধকারের আধারে ঢাকা ছিল। এই ধরায় তার শুভাগমনের মাধ্যমে তারা অন্ধকারের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। নারীরা তাদের বেঁচে থাকার অধিকার পেয়েছিল। তখনই পৃথিবীর মানুষ অনুধাবন করতে পেরেছিল এই পৃথিবীতে নব সূর্য উদিত হয়েছে, যে সূর্য শুধু আরবকেই আলোকিত করবে না, বরং গোটা পৃথিবীকেই তার নব উদীপ্ত আলোতে উদ্ভাসিত করবে। আর তিনি তা-ই করেছিলেন, এই পৃথিবীতে যত মনীষী এসেছেন, পৃথিবীকে তাদের জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন বা করবেন- মোহাম্মদ (সা.)-এর মতন বিরল। তিনি শুধু সেই যুগেরই নন, বরং তার আগমনের আগ থেকে এবং পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মহামানবের পদচারণা পড়বে এই পৃথিবীতে, তাদের সবার উস্তাদ সব বিজ্ঞানীর মহাবিজ্ঞানী, সকল মনীষীর মহামনীষী, বিশ্বমানবতার কাণ্ডারি নবী মোহাম্মদ (সা.)। তাই এক খ্রিস্টান লেখক বিশ্বনবীর জীবনী লিখতে গিয়ে বলেছেন, ‘He was the mater mind not only of his own age but of all age.’ অর্থাৎ মোহাম্মদ (সা.) যে যুগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাকে শুধু সেই যুগেরই একজন মনীষী বলা হবে না, বরং তিনি ছিলেন সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামনীষী। তিনি ছোটকাল থেকেই ইনসাফ শিখেছিলেন, তার মধ্যে মানবাধিকারের এমন কিছু গুণ স্রষ্টা প্রদত্ত তার চরিত্রের সঙ্গে মিশ্রিত ছিল যে বিশ্বের কোনো মনীষী বা বিশ্ব মোড়লের ক্ষেত্রে তা একেবারেই বিরল ও অসম্ভব। বিশ্বনবীর মা বলেন, শিশু মোহাম্মদ (সা.) যখন দুধ পান করতেন, শুধু ডান স্তনের দুধ পান করতেন, বাম স্তন তার দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। কখনো তিনি বাম স্তনের দুধ পান করেননি। মানবাধিকারের এমন অসাধ্য গুণ কোনো বিশ্ব মোড়ল নবী মোহাম্মদ ছাড়া দিতে পেরেছে? এমন কোনো যুবক আছে যে ছোটকালে কাপড় খুলে খেলা করেনি? কিন্তু নবী মোহাম্মদ (সা.) জন্মের পর থেকে কখনো উলঙ্গ হননি। তাঁর মা বলেন, শিশু মোহাম্মদ কখনো কান্না করতেন না, একটি সময় ছাড়া যখন তার লজ্জাস্থানের কাপড় সরে যাওয়ার উপক্রম হতো, তা ব্যতীত।

একবার পাথর টানার সময় ছেলেরা কাপড় খুলে মাথায় দিয়ে একটি করে পাথর আনছে আর তিনি আনছেন দুটি করে। চাচা বললেন, তুমি তো ছোট, কাপড় খুলে নাও। এই বলে কেবল লুঙ্গির ঘুটে হাত দিয়েছেনে আর তখনই শিশু মোহাম্মদ বেহুঁশ হয়ে জমিনে পড়ে যায়। এমন অসংখ্য লজ্জাশীলতা যুবকদের উপহার দিয়েছেন। একটু বড় হওয়ার পর তার মধ্যে আমানতদারিতার এমন কিছু গুণ প্রকাশ পায় যে, সে সময় পৃথিবীর বড় আমানতদারী হিসেবে তিনি খ্যাতি পান। যে যুগে আপন ভাই তার ভাইকে, পিতা তার সন্তানকে বিশ্বাস করতো না ঠিক সেই যুগে তিনি পৃথিবীবাসীর কাছে আলামিন বা চিরবিশ্বাসী নামে পরিচিত ছিলেন। মানুষ স্বর্ণ, হীরা, মণিমুক্তা অনায়াসে তার কাছে জমা রাখতেন, যখন খুশি ফিরে পেতেন। যুবসমাজকে কে আমানতদারিতার এমন শিক্ষা উপহার দিতে পেরেছে? সবারই মনে আছে হাজারে আসওয়াদ কালো পাথর স্থাপনের কথা। এই পাথর কে স্থাপন করবে তা নিয়ে কিছু গোত্র যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। এমন সময় বিশ্বস্ত মোহাম্মদের আগমন দেখে সবাই উৎফুল্ল। মোহাম্মদ যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নেব। নবীজি (সা.) নিজের শরীর থেকে চাদর মাটিতে বিছিয়ে হাজারে আসওয়াদকে চাদরের মাঝখানে রেখে সবাইকে বলেন, চাদরের চারপাশ ধরে তা স্থাপন করার জন্য। বিশাল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ মুহূর্তে ভ্রাতৃত্ববোধ ও পরস্পরের মধ্যে শান্তি স্থাপন করলেন। এমন আদর্শ পৃথিবীর যুবকদের জন্য কোনো বিশ্ব মোড়ল স্থাপন করতে পেরেছেন?

এত গুণে যিনি গুণান্বিত, আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হলে তাকেই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু সেই আদর্শবাদী মানুষের মহান জীবনীকে পেছনে রেখে আজকের পৃথিবীর সুশীল সমাজ বা আধুনিক যুবসমাজ যতই সামনে এগোতে চাইবে, এতে তারা শুধু অন্ধকারেই নিমজ্জিত হবে।

বিশ্ব মুসলিম যুবকদের সময় এসেছে নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শে উজ্জীবিত হওয়ার। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই মহিমান্বিত জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তি Last Messenger the Prophet (s.m)-এর মহান জীবনী অধ্যায়ন করে, আমাদের সামাজিক জীবন, পারিবারিক জীবন, পরনীতি, শ্রমনীতি, রাষ্ট্রনীতি অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক নীতি সব সেই প্রিয় মানুষটির মতো করেই প্রতিটি যুবক বৃদ্ধ সর্বোপরি সব মুমিনকে সাজানোর তাওফিক দান করুন।

 

হাফেজ মাওলানা আহসান জামিল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads