• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মুমিনের রক্ষাকবচ ইমান

ছবি : ইন্টারনেট

ধর্ম

মুমিনের রক্ষাকবচ ইমান

  • প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

মুসলিম আর অমুসলিমের মাঝে মৌলিক পার্থক্য কী? ব্যবধানটা আসলে কোথায়? দেখতে দুজনেই মানুষ। দুজনের চেহারা ও অবয়বে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কিন্তু এরপরেও কেন দুজনের মাঝে আকাশ-পাতাল ব্যবধান! কেন আলো আর আঁধারের পার্থক্য! কেন দিন ও রাতের দূরত্ব! কারণটা পরিষ্কার। দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। সূর্যের গনগনে রোদের মতো দীপ্যমান। কারণটা হলো একজন বিশ্বাসী আরেকজন অবিশ্বাসী। একজন সত্যের পথিক। আরেকজন মিথ্যা আর অন্ধকারের যাত্রী। একজন ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত, আরেকজন কুফুরির নিকষ কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত। একজন তামাম মাখলুকাতের এক ও একক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহান কুদরতে বিশ্বাসী। আরেকজন মহান প্রভুর সকল নিয়ামতে অকুণ্ঠ নিমজ্জিত থেকেও রবের একত্ববাদে অবিশ্বাসী। এটাই হলো মুসলিম আর অমুসলিমের মাঝে মৌলিক পার্থক্য। এ পার্থক্যটা সুস্পষ্ট করার জন্যই পৃথিবীর সৃষ্টি। তামাম মাখলুকাতের সৃষ্টি। অগণিত ফেরেশতাদের সৃষ্টি। অসংখ্য নবী রসুলের আগমন। আসমানি কিতাব ও সহিফা সমূহের অবতরণ। এ পার্থক্যের কারণেই আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন জান্নাতের ৭টি মনোরম জগৎ। এই পার্থক্যের কারণেই ৮টি জাহান্নামের বিভীষিকাময় আয়োজন। কবর, হাসর, মিজান, পুলসিরাত সবকিছুই এ পার্থক্যের কারণে। 

কোরআনের সর্বশেষ সুরার নাম সুরা নাস। নাস মানে মানুষ। এই মানুষকে আল্লাহপাক দুটি জিনিসের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। একটি হলো রুহ আরেকটি হলো দেহ। দেহ আর রুহের সম্মিলিত রূপ হলো মানবজাতি। অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে, জন্মের দিক থেকে মানুষের বয়সে তারতম্য হলেও রুহের সৃষ্টির দিক থেকে পৃথিবীর সব মানুষ এক সমান।

সব রুহকে আল্লাহতায়ালা একবারে সৃষ্টি করেছেন। সব রুহ সৃষ্টির পর আল্লাহপাক একটি সম্মিলন করেছেন। রুহের সম্মিলন। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.) থেকে নিয়ে পৃথিবীর শেষ মানুষটিও সেখানে উপস্থিত ছিল। আজ যারা মুসলিম তারা যেমন ছিল তেমনিভাবে যারা অমুসলিম ও অবিশ্বাসী, তারাও সেদিন হাজির ছিল। সব রুহকে একত্র করে আল্লাহপাক সবার একটি ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। সেই ইন্টারভিউ ছিল ঈমানের ইন্টারভিউ। যে আলোচনা পবিত্র কোরআনে সুরা তাওবায় এসেছে। আল্লাহ প্রশ্ন করেছিলেন, হে রুহ সকল, আমি কি তোমাদের প্রভু নই? এ প্রশ্নের উত্তরে সেদিন আমরা সবাই আল্লাহর সামনে একটি সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। আল্লাহপাকের রুবুবিয়্যাতের সাক্ষ্য। তিনি যে আমাদের সবার রব, সেই মহাসত্যের সাক্ষ্য। সবাই বলেছিলাম, অবশ্যই। আপনিই আমাদের রব। আপনিই আমাদের একমাত্র প্রভু। আমাদের একমাত্র মালিক। এরপর আল্লাহপাক আমাদের দুনিয়ায় পাঠালেন। পরীক্ষা করার জন্য। কে রুহের জগতে দেওয়া সেই সাক্ষ্যের ওপর অটল থাকে। আর কে ভুলে যায় সেই প্রতিশ্রুতি। মহান সৃষ্টিকর্তার স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে হারিয়ে যায় অবিশ্বাসের চোরাবালিতে। আজ পৃথিবীতে এই দুই শ্রেণির মানুষের সঠিক চিত্র আমাদের সামনে দৃশ্যমান। ঈমানদার ও ঈমানহীন মানুষের যথাযথ উপস্থিতি। হায়, যারা আজো ঈমানের মহান শামিয়ানায় আশ্রয় নিতে পারেনি, বিশ্বাসের সুবাসে জীবনকে সুবাসিত করতে পারেনি, তারা যদি বুঝতে পারত ঈমানের কত দাম! ঈমান কত কিমতি সম্পদ...!

ঈমান মানে কী। ইমান মানে হলো, মনে-প্রাণে একথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ এক ও একক। তার কোনো শরিক নেই। তিনি অদ্বিতীয়। তার কোনো দ্বিবচন বহুবচন নেই। তার আগেও কেউ ছিল না, তার পরেও কেউ নেই। তিনি অদ্বিতীয়। তিনি অনন্ত। তিনি চিরস্থায়ী। তিনি চিরঞ্জীব। ঈমান মানে হলো, মনে এ কথার বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আমার একমাত্র রব আল্লাহ। আমার খালেক আল্লাহ। আমার মালিক আল্লাহ। আমার জীবন আল্লাহর হাতে। আমার মরণ আল্লাহর হাতে। আমার সফলতা তার হাতে। আমার ব্যর্থতা তার হাতে। তিনিই সব। তিনি যা চাইবেন তাই হবে। তিনি যদি দিতে চান তামাম পৃথিবীর সব শক্তি মিলে আমাকে বাধা দিতে পারবে না। তিনি যদি না দেন দুনিয়ার কেউ দিতে পারবে না। এরই নাম ঈমান। এরই নাম বিশ্বাস। আল্লাহপাক তার অপার দয়ায় সিক্ত করে যাদের ঈমানের অধিকারী বানিয়েছেন, তারা যে নিজের অজান্তেই কত বড় মহান সফলতার অধিকারী হয়েছেন। কত বড় সৌভাগ্য অর্জন করেছেন সেটি যদি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারতাম, তাহলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতায় দিনরাত সিজদায় পড়ে থাকতাম। কাল কেয়ামতের কঠিন ময়দানে এই ঈমানি সৌভাগ্যের ঝলক দেখা যাবে। শুধু এই ঈমানি সম্পদের অধিকারী হওয়ার কারণে জাহান্নামের ভয়ংকর ছোবল থেকে রক্ষা পেয়ে জান্নাতের সুশীতল উদ্যানের ঠিকানা মিলে যেতে পারে। সেদিন প্রমাণিত হবে ঈমান কত বড় সম্পদ। কত মহান সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। ইনশা আল্লাহ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিয়ে দোজাহান রসুলে আকরাম (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি একনিষ্ঠতার সঙ্গে বলবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সেই ব্যক্তি মুমিন হিসেবে সাব্যস্ত হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে।

 

গাজী সানাউল্লাহ রাহমানী

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, শরিয়াহ রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads