• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
কালেমায়ে তাইয়েবার দাবি

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

কালেমায়ে তাইয়েবার দাবি

  • প্রকাশিত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

কালেমায়ে তাইয়েবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। লা ইলাহার কালেমা বন্ধুকে শত্রু বানিয়ে দেয়। শত্রুকে আবার বন্ধু বানিয়ে দেয়। এ কালেমার কারণেই বদরপ্রান্তরে পিতা পুত্রের বিরুদ্ধে, পুত্র পিতার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিল। এই কালেমা কি কোনো জাদুমন্ত্র, যা পাঠ করার পর মানুষের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে? কী এমন প্রভাব রয়েছে এই শব্দমালায়? বাস্তব সত্য হলো, এই কালেমা কোনো মন্ত্র নয়। তেলেসমাতিও না। বরং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ একটি প্রতিজ্ঞা। একটি অঙ্গীকার। মানুষ তার পালনকর্তার সঙ্গে এই অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়। যখন কেউ বলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর মর্ম হলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আমি আল্লাহ ছাড়া সকল উপাস্যকে অস্বীকার করছি। আল্লাহ ছাড়া কাউকে আমি উপাস্যরূপে স্বীকার করি না। আমি হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত সত্য নবীরূপে গ্রহণ করছি।

এই প্রতিজ্ঞার অর্থ হলো, আমি যেই জীবন অতিবাহিত করব তা সর্বাংশে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি এবং তাঁর আহকাম ও বিধি-বিধান মোতাবেক হবে। এ প্রতিজ্ঞার বদৌলতে তার জীবনে এই বিপ্লব সাধিত হয় যে, একটু পূর্বে যে ছিল আল্লাহ তায়ালার অপ্রিয়, এখন সে প্রিয় হয়ে গেল। সামান্য আগেও যে ছিল কাফের, এখন সে মুসলমান। আগে যে জাহান্নামের উপযুক্ত ছিল, এখন সে জান্নাতের বাসিন্দা। এই বিস্ময়কর বিপ্লব সেই প্রতিজ্ঞার বদৌলতেই সাধিত হচ্ছে। শরিয়তে এই প্রতিজ্ঞার নামই হলো তাওহিদ।

এ থেকে বোঝা যায়, কালেমায়ে তাইয়েবা শুধু কথার কথা-ই নয়; বরং যেদিন আপনি এই কালেমা পড়লেন, সেদিন আপনি নিজেকে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কাছে সঁপে দিলেন। এবং এই প্রতিজ্ঞা করলেন যে, এখন থেকে আমার পছন্দ বলতে কিছু থাকবে না। এখন থেকে একমাত্র আল্লাহতায়ালার হুকুম অনুযায়ী আপনার জীবন পরিচালিত হবে। সুতরাং কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবি হলো, কীভাবে জীবনযাপন করব, কীভাবে ইবাদত করব, কীভাবে মানুষের সঙ্গে লেনদেন করব, আমার আখলাক কেমন হবে, সমাজের মানুষের সঙ্গে আমার আচার ব্যবহার কেমন হবে, এককথায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের হুকুম কী, তা জানতে হবে এবং পরিপূর্ণরূপে মেনে চলতে হবে।

রসুল (সা.) তাঁর প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ, তাঁর জীবনের প্রতিটি আচরণের মাধ্যমে দীনের বিধি-বিধান শিক্ষা দিয়েছেন। এখন মুসলমানের কাজ হলো, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সেই বিধানগুলো সম্পর্কে ইলম হাসিল করবে। তারপর সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করবে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রসুলের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করার নামই হলো তাকওয়া। তাকওয়ার অর্থ হলো, আল্লাহর ভয়ে ভীত হওয়া। আমি আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করেছি, যখন পরকালে আল্লাহর সামনে আমাকে উপস্থিত করা হবে, আমি যেন লজ্জিত না হই, আমি যেন প্রতিশ্রুতি পূরণ করিনি বলে চি‎হ্নিত না হই। এই বিষয়ের ভয়কেই বলা হয় তাকওয়া।

কালেমা তাকওয়া অর্জনের তরিকা : তাকওয়া শব্দের মাঝে পুরো দীনের সারবস্তু এসে যায়। কোরআনুল করিমের বহু জায়গায় এসেছে, হে ইমানদারগণ, তোমরা তাকওয়া অর্জন কর। এরপর বলা হয়েছে, ‘তোমরা সৎ লোকদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১৯) আল্লাহতায়ালার কালাম কতো চমৎকার। একটিমাত্র বাক্যে আল্লাহতায়ালা মানুষের করণীয় সব কাজের কথা বড় চমৎকারভাবে বলে দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দয়া ও অনুগ্রহ করে সেই কাজগুলো করার সহজ রাস্তা বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, হে ইমানদারগণ, তাকওয়া অবলম্বন কর। তাকওয়া অবলম্বন করার পর আর কোনো কিছুর প্রয়োজন থাকে না। তাকওয়ার মধ্যেই সবকিছু এসে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাকওয়া কীভাবে অর্জন করব? তাকওয়া তো অনেক উঁচু স্তরের একটি বিষয়। এর জন্য অনেক শর্ত ও দাবি পূরণ করতে হয়। এটা কীভাবে অর্জন করা যায়? আল্লাহ তায়ালা উপরিউক্ত আয়াতে এরই সহজ রাস্তা বাতলে দিয়েছেন যে, তোমরা সৎ লোকদের সাথী হও। সৎ লোক বলতে শুধু এটা বুঝায় না যে, সে সত্য কথা বলে। মিথ্যা কথা বলে না। বরং সৎ লোক হওয়ার অর্থ হলো, যে কথা-কাজে সত্যবাদী। যে ওয়াদা রক্ষার ক্ষেত্রে অটল। যে লেনদেনের ক্ষেত্রে সৎ ও সত্যবাদী। যে সামাজিক আচার-আচরণে সৎ। যে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কৃত-অঙ্গীকার রক্ষার ক্ষেত্রেও সৎ।

পবিত্র কোরআন বলছে, এমন লোকদের সাথী হও। তাদের সান্নিধ্য গ্রহণ কর। তাদের সঙ্গে ওঠা-বসা কর। যখন তাদের সঙ্গে ওঠা-বসা শুরু করবে, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের তাকওয়ার ঝলক তোমাদের ভেতরেও সৃষ্টি করে দেবেন। এটাই হলো তাকওয়া অর্জনের পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতেই যুগে যুগে দীন স্থানান্তরিত হয়ে আসছে। নবী করিম (সা.)-এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত এই দীন এসেছে, সৎ লোকের সান্নিধ্যের মাধ্যমে। আল্লাহওয়ালাদের সহবতের মাধ্যমে।

 

মাওলানা ওমর ফারুক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads