কারো ধন-সম্পদ, মান-সম্মান, জ্ঞান-বুদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রভাব-প্রতিপত্তি, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ইত্যাদি ভালো কিছু দেখে মনে কষ্ট পাওয়া এবং তা ধ্বংসের কামনা করা বা ধ্বংস হলে আনন্দিত হওয়াকে হিংসা বলা হয়। সাধারণত নিজের বড়ত্ববোধ বা শত্রুতা থেকে এই মনোভাব সৃষ্টি হয়। হিংসুক ব্যক্তি অন্যের উন্নতি দেখলে অন্তরে জ্বালা অনুভব করে, তাই সে জীবনে কখনো আত্মপ্রশান্তি লাভ করতে পারে না, বরং চিরকাল মনোকষ্টে থাকে।
হিংসা ও ঈর্ষা প্রায় একই রকম আবেগ; তবে ঈর্ষার চরম বহিঃপ্রকাশ হলো হিংসা। হিংসা মানুষকে অন্যায়-অপরাধের দিকে ধাবিত করে। সুতরাং ঈর্ষা যদি হিংসার পর্যায় পৌঁছে যায়, তাহলে মানুষ যে কোনো অপরাধ এমনকি হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলতে পারে। হিংসুক ব্যক্তি যখন হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত থাকে, তখন শয়তান তার সঙ্গী হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তাকে উৎসাহিত করে। হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকার লক্ষ্যে মহান আল্লাহপাকের কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য পবিত্র কোরআনে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লাহপাকের বাণী, হে নবী আপনি বলুন, আমি আশ্রয় কামনা করছি। হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন যে হিংসা করে (সুরা ফালাক, আয়াত-০৫)।
হিংসা এবং বিদ্রূপ সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বলেন, হে ঈমানদারগণ, কোনো সম্প্রদায় যেন অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরকে নিন্দা করো না এবং তোমার একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট। আর যারা তাওবাহ করে না তারাই তো জালিম (সুরা হুজরাত, আয়াত-১১)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণীত, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা নেক আমলকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে (ধ্বংস করে দেয়), যেমনভাবে আগুন কাঠখণ্ডকে খেয়ে ফেলে (জ্বালিয়ে দেয়)। (মিশকাত) শরিয়তের দৃষ্টিকোণে হিংসা সর্বাবস্থায় নাজায়েজ ও হারাম। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও হিংসা একটি গর্হিত ও নিন্দনীয় অপরিণামদর্শী অপরাধ। আল্লাহপাক আমাদের হিংসা নামক ধ্বংসব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী
লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
