• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ঈমানের জন্য যা বড় হুমকি

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

ঈমানের জন্য যা বড় হুমকি

  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০১৯

আমি যদি আপনাদের প্রশ্ন করি, আপনার ঈমানের জন্য বৃহত্তম দুটি হুমকি কী? আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন আপনার প্রতিকূল পরিবেশ, বড় বড় পাপকাজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অসৎ বান্ধব ইত্যাদি।

আবার বিভিন্ন নিষিদ্ধ গুনাহের কাজ তথা ব্যভিচার, মদপান, চুরি করার কথাও আপনার চিন্তায় আসতে পারে। তবে এসব বস্তুই ব্যক্তির ঈমানের হ্রাসে বা ঈমানশূন্য হওয়ার জন্য দায়ী হতে পারে যদি ব্যক্তি সরাসরি এসবে লিপ্ত হন। কিন্তু রসুল (সা.)-এর একটি হাদিস থেকে জানা যায়, মানুষের ঈমানের জন্য দুটি জিনিসের চেয়ে অধিক অন্য কোনো কিছু হুমকি নেই, যেমন নাকি দলছুট ভেড়ার জন্য নেকড়ে হুমকিস্বরূপ। (তিরমিজি)

কল্পনা করুন, আপনার ঈমানের জন্য এমন হুমকি যেমন দলছুট বকরির জন্য নেকড়ের মতো হুমকি। এই দুটি বস্তু হলো সম্পদের প্রতি ভালোবাসা এবং খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা।  এই দুটি বস্তু আপনার ঈমানের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে কাজ করবে। এই দুটি অবস্থা যদিও মারাত্মক ক্ষতিকর কোনো গুনাহের কাজ নয়। তথাপি এগুলো আমাদের ঈমানের ক্ষতির জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

সম্পদের প্রতি ভালোবাসা : সম্পদ কি কোনো মন্দ বস্তু? নিশ্চয়ই নয়। রসুলুল্লাহ (সা.)-ই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। অন্যদিকে আল্লাহ আমাদের দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়েরই কল্যাণ কামনার জন্য দোয়া করতে শিখিয়েছেন। কিন্তু দুনিয়ার সম্পদ লাভের জন্য যদি কোনো ব্যক্তির অনিয়ন্ত্রিত ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা থাকে, তখন তারা প্রতিনিয়ত আরো অধিক সম্পদ অর্জনের জন্য নিজেদের নিয়োজিত করে। এভাবে সম্পদ অর্জন করতে করতে তারা একসময় নিজেদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেন, যখন তারা নিজেদের সম্পদ অর্জন করতে গিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হিসেবে দেখতে পান। এর ফলে তারা ক্রমেই আল্লাহ থেকে দূরে সরে যান এবং তাদের ঈমানের জন্য তা ক্ষতির কারণ হয়। এছাড়া অনেক সময় অধিক সম্পদ মানুষকে পরিবর্তন করে দেয় এবং এর ফলে তার আচরণেরও পরিবর্তন ঘটে।

খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা : খ্যাতিও তেমনিভাবে ক্ষতির কোনো কারণ নয়। কিন্তু যদি কেউ খ্যাতির জন্য অধিক আকাঙ্ক্ষী হন, তবে সেও খ্যাতির জন্য অনৈতিক কোনো কাজ করতে পারেন। অথবা খ্যাতি লাভের পর তার চরিত্রের পরিবর্তন হতে পারে। এর সমাধান জাগতিক এই আকাঙ্ক্ষাসমূহ মোকাবেলার জন্য আল্লাহর রসুল (সা.) আমাদের বিভিন্ন পন্থা শিক্ষা দিয়েছেন।

এ পন্থাসমূহ হলো—  ১. অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্রদের দান করার মাধ্যমে আপনার দুনিয়ার অনিয়ন্ত্রিত আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। মানুষের অভাব, দারিদ্র্য লক্ষ্য করলে আপনার নিজের মধ্যে দুনিয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। ২. সম্পদের অপচয় করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। নিজের প্রয়োজন এবং অযাচিত আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পার্থক্যের ভিত্তিতে অপচয় না করে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য চেষ্টা করুন। ৩. রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে পারেন। আপনার অধীন কোনো বস্তু বা সুযোগ থেকে নিজেকে বিরত রেখে পরবর্তী সময়ে তা উপভোগের সময় সেই বস্তু বা সুযোগের যথার্থ গুরুত্ব আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন। হজরত উমর (রা.)- এর মতে, ‘তোমার যদি আরামদায়ক বিছানা থাকে, তবে সব সময় তাতে ঘুমিয়ো না। মাঝে মাঝে তাতে না ঘুমিয়ে মাটিতে ঘুমাও। পরদিন তুমি তোমার আরামদায়ক বিছানার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে।’ যখন আপনি রোজা রাখবেন, তখন খাবারের গুরুত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারবেন এবং নিজের মালিকানাধীন বস্তুতেই সন্তুষ্ট হতে শিখবেন। ৪. রসুলুল্লাহ (সা.) সর্বদা আমাদের জীবনের সবকিছুর জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার শিক্ষা দিয়েছেন।

খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণে রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, আমরা যেন কখনোই লোক দেখানোর জন্য কোনো কাজ না করি। রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের আরো শিক্ষা দিয়েছেন, রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য কোনো কাজ করাও ছোটখাটো শিরকের পর্যায়ে পড়ে। কেননা এখানে মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করায় মানুষের কাছ থেকে প্রতিদানের আশা করা হয় এবং এর মাধ্যমে মানুষকে খোদার আসনে বসানো হয়। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.)-এর মতে, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা একজন লোক, লোকের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা একজন লোকের তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।’ মহান আল্লাহ আমাদের এই উভয় ধরনের হুমকি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

 

ওমর সুলাইমান

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads