• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

তরিকা কী ও কেন

  • ড. সৈয়দ মুহা. শরাফত আলী 
  • প্রকাশিত ০৬ জানুয়ারি ২০১৯

মুসলমানদের অধ্যাত্ম সাধনার নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতিকে তরিকা বলে। অধ্যাত্ম সাধনারত ব্যক্তিকে তরিকতপন্থি বা সালেক বলে। শরিয়ত অনুযায়ী আমল করার যেমন মাজহাব, আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য তেমনি তরিকা। আন্তরিকতার সঙ্গে শরিয়ত অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করে প্রজ্ঞাবান হওয়াই তরিকতের উদ্দেশ্য। কোরআন-হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত শরিয়তের আমল যথা— নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত ইত্যাদি প্রতিপালনের পাশাপাশি জিকির-ফিকির, ধ্যান, সৎসঙ্গ, রিপু দমন এবং সৎ স্বভাব ইত্যাদি কার্য প্রতিপালনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজেকে পরিপূর্ণ ঈমানদার এবং মানবীয় গুণাবলির অধিকারী করতে পারে। এ সাধনায় অগ্রসর ব্যক্তি মহান প্রভু আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। সে ইহ এবং পারলৌকিক জীবনে আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত দ্বারাও সিক্ত হয়। জান্নাতি এ নেয়ামতরাজির আকর্ষণে মানুষ তরিকতপন্থি হতে ছুটে আসে আধ্যাত্মিক জগতের শিক্ষক সুফি, দরবেশ, পীর এবং মুরশিদের কাছে। এ পথে যিনি যতটুকু অগ্রসর হন, তার স্পৃহা তত বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে অধ্যাত্ম সাধনার এ ভুবনে হাক্কানি পীর যেমন আছেন, তেমনি আছে বহু বাতিল ও বেশরা পীর-ফকির। তাদের খপ্পরে পড়ে মানুষ যেমন প্রতারিত হচ্ছে, তেমনি জান্নাত লাভের আশায় এসে ঈমানে দৌলতটুকু শিরকের সঙ্গে মিশ্রিত করে দোজখি হয়ে যাচ্ছে। তাই তরিকতপন্থি হওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। শরিয়তের ওপর আমলের জন্য আগে অনেক মাজহাব থাকলেও কালের আবর্তে তা চারটি মাজহাবে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তদ্রূপ তরিকতের ভুবনে বহু তরিকার সন্ধান পাওয়া গেলেও বর্তমানে তা প্রসিদ্ধ চারজন বিখ্যাত পীরের নামে প্রতিষ্ঠিত— চিশতিয়া, কাদেরিয়া, মোজাদ্দেদিয়া ও নকশবন্দিয়া তরিকা নামে বিশেষ করে ভারতবর্ষে সীমিত হয়ে গেছে।

তরিকতপন্থি কোনো ব্যক্তি মাত্র একটি তরিকার সবক যথাযথভাবে আদায় করে কামালিয়াতের স্তরে উপনীত হতে পারেন। একাধিক তরিকার সবক সম্পন্ন করতে পারলে তা আরো ভালো। তবে যেহেতু তরিকতের এ অঙ্গন সম্পূর্ণরূপে অনুভূতিনির্ভর ও লোকচক্ষুর অন্তরালের বিষয়। এর কোনো কিছুই প্রকাশযোগ্য নয়। তাই এ পথের পথিকমাত্রই সর্বদা নিজেকে আড়াল করে রাখতে পছন্দ করেন। এ পথে যা কিছু অর্জন হয়, তা নিতান্তই আখেরাতের ও একান্তভাবে স্রষ্টা এবং সৃষ্টির গোপন অভিসার মাত্র। তারা নির্জনে রাতের আঁধারে প্রভুর কুদরতি কদমে লুটিয়ে পড়ে রোনাজারি করে আপন অপরাধ ও অক্ষমতার বিষয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। দুনিয়ার যত বড় ক্ষতি হোক অথবা দুনিয়া তার পদতলে গড়াগড়ি খেলেও তার মধ্যে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না। প্রেমানলে দগ্ধ অতৃপ্ত হা-হুতাশপূর্ণ আন্তরিক অবস্থায় তার জীবন কাটে।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads