• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
দ্বীনি শিক্ষা আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক তৈরি করে

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

দ্বীনি শিক্ষা আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক তৈরি করে

  • প্রকাশিত ১১ জানুয়ারি ২০১৯

প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী  হজরত মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সকল নবী-রসুল (আ.) আনীত শিক্ষাই মূলত দ্বীনি শিক্ষা। যতদিন পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতা বাকি থাকবে ততদিন পর্যন্ত মহাপ্রলয় বা কিয়ামত সংঘটিত হবে না।

যে শিক্ষার মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালার সঙ্গে তাঁর বান্দার সম্পর্ক তৈরি হয়, বস্তুত সেটাই দ্বীনি শিক্ষা। আর এ শিক্ষার পূর্ণতা বিধান করেছেন আমাদের নবী হজরত রসুলে আকরাম (সা.)। এতে যেমন পরলৌকিক জিন্দেগিতে মুক্তির পথ রয়েছে, ঠিক তেমনি ইহলৌকিক জীবনের সকল কর্মকাণ্ড আল্লাহপাকের রেজামন্দি অনুযায়ী সুষ্ঠু ও সুচারু রূপে আঞ্জাম দেওয়ার এবং সুন্দর জীবন গড়ে তোলার সুস্পষ্ট নীতিমালাও রয়েছে। এজন্য এ শিক্ষাকে সর্বজনীন শিক্ষা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। অতএব এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা যে কত বেশি তা সহজেই অনুমেয়।

দ্বীনি শিক্ষার প্রতি জোর তাগিদ দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের দলের একটি অংশ কেন বের হলো না যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্ব-জাতিকে? যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে। (সুরা তাওবা, আয়াত : ১২২) উল্লেখিত আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহপাক প্রত্যেককে কোনো না কেনোভাবে দ্বীন শিক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। একদল শিক্ষার জন্য বের হবে এবং ফিরে এসে অপর দলকে শেখাবে। এভাবে সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

ইমাম কুরতুবী (রহ.) এ আয়াত সম্পর্কে বলেন, আয়াতটি দ্বীনি শিক্ষা লাভ করার মৌলিক দলিল। হাদিসের দৃষ্টিতে দ্বীনি শিক্ষার জন্য সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর বড় একটি দল পার্থিব আয় উন্নতির ও ব্যবসা বাণিজ্য ছেড়ে সর্বদা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে পড়ে থাকতেন। কেননা তিনি (সা.)-এর ওপর কখন কী বিধান আসে; আর তা জেনে আমলে পরিণত করার জন্য সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সর্বদা প্রস্তুত থাকতেন।

যেহেতু দ্বীনি ইলম আল্লাহ প্রদত্ত সেহেতু আল্লাহর পছন্দনীয় ব্যক্তিই পাবে এর পরশ। হাদিসের ভাষায় রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহপাক যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের বুঝদান করেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, মিশকাত ও কানযুল উম্মাহ) যা সর্বস্তরের জনগণের জন্য ফরজও করা হয়েছে। হাদিসের ভাষায়, ইলমে দ্বীন অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ। (সহিহ ইবনে মাজাহ)

সেই ইলমে দ্বীন শিক্ষা করতে তালেবে এলেমের জন্য রয়েছে জান্নাতি সুযোগ, যা অন্য কারো জন্য হয় না। হাদিসের ভাষায়, হজরত  আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার উদ্দেশ্যে কোনো পথ দিয়ে চলে, আল্লাহতায়ালা ওই পথ চলার সওয়াব হিসেবে তার রাস্তাকে জান্নাতমুখী করে দেবেন। আল্লাহর ফেরেশতাগণ তার জন্য নিজেদের পলক বিছিয়ে দেন। ইলম ওয়ালাদের জন্য আসমান জমিনের সমস্ত সৃষ্টি এবং পানির মাছ পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করে। অধিকহারে নফল ইবাদতকারী থেকে ইলম ওয়ালার ফজিলত আকাশের তারকারাজির উপর পূর্ণিমার চাঁদের অনুরূপ। (সহিহ বুখারি)

সর্বোপরি মহান আল্লাহতায়ালা মানব সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য। আর যাঁর ইবাদত করবে তাঁর পরিচয় জানা ও ইবাদতের পন্থা কী হবে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে তা আমলে পরিণত করার জন্য দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই। অন্যথায় ফেতনামুখর এ লীলাভূমিতে বান্দা তীব্র মরু সাইমুমের কবলে পড়া দিকভ্রান্ত পথিকের ন্যায় তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করে বা সকলের দ্বারা সম্ভব না হলে, সকলে মিলে কিছু লোককে যোগ্য আলেম হিসেবে গড়ে তোলে এদের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরে ইসলামের আলো বিকিরণ করে সর্বসাধরণ মানুষের ইহ-পরকালীন জিন্দেগিকে রঙিন করতে হবে।

 

এস এম আরিফুল কাদের

লেখক : আলেম ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads