• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
আহলে বায়াতের পবিত্রতা এবং শান

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

আহলে বায়াতের পবিত্রতা এবং শান

  • সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
  • প্রকাশিত ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা আহমাদ মোস্তফা (সা.)-এর আত্মীয়-স্বজন বা বংশধরকে আহলে বায়াত বলা হয়। পুত্রসন্তানের মাধ্যমে আল্লাহর হাবীব মোহাম্মদ (সা.)-এর বংশধারা অব্যাহত ছিল না। আল হাসান, আল হোসাইন এবং তাদের মাতা-পিতাকে (মা ফাতেমা এবং বাবা হজরত আলী) আহলে বায়াত মানা হয়। আহলে বায়াতের অন্তর্ভুক্ত বংশধর হিসেবে পুরুষদের ‘সৈয়দ’ এবং নারীদের ‘সৈয়দা’ বলা হয়। কারও নামের আগে সৈয়দ বা সৈয়দা সংযুক্ত থাকা মানে তিনি আহলে বায়াত : ইমাম হাসান-হোসাইন (রা.)-এর বংশের লোক। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে— বর্তমানে অনেকেই শখ করে মিথ্যার আশ্রয়ে কিংবা অজ্ঞতার কারণে নামের শুরুতে ‘সৈয়দ’ বা ‘সৈয়দা’ লিখে থাকেন। এমনটি চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ বেয়াদবি, মিথ্যাচার এবং সর্বোপরি কবিরা গুনাহ। এমন গুরুতর অন্যায়ের ফলে সংশ্লিষ্টদের ঈমান বরবাদ হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। সৈয়দের নছবনামায় পূর্বপুরুষদের নাম ঢোকানোর ঘৃণ্য প্রতিযোগিতা আমাদের দেশে যেন অতি সাধারণ একটা কাজ! সন্তানের পরিচয় পিতার পরিচয়ে হলেও অনেক গয়র সৈয়দ (যার মাতা সৈয়দ বংশীয়) নিজেকে সৈয়দ বলে জাহির করে। সৈয়দের শরীরে নবীজীর (সা.) রক্ত ও বীর্যধারা বিদ্যমান। উল্লেখ্য, সাধারণ মানুষ এবং নবীর মধ্যে পঁচিশটি স্তরের পার্থক্য।

‘সৈয়দ’ আরবি শব্দ। আরবি ছিন, ইয়া, দাল এ তিনটি বর্ণের সমম্বয়ে ‘সৈয়দ’ শব্দ। বংশ মর্যাদায় উন্নতদের সৈয়দ বংশীয় বলা হয়। সমগ্র সৃষ্টিজগতে হজরত মোহাম্মদের (সা.) বংশধারা শ্রেষ্ঠ মর্যাদাসম্পন্ন। এ বংশের লোক সর্বজন কর্তৃক সম্মানিত। তাদের ইসলাম ধর্মের প্রকৃত বাহক বলা হয়। কোনো সন্তানের পিতা যদি সৈয়দ হন তো সেই সন্তান সৈয়দ। কিন্তু সন্তানের মাতা যদি সৈয়দা হন তো সেই সন্তান সৈয়দ হবেন না। আর কোনো সন্তানের মাতা-পিতা উভয়েই যদি সৈয়দ হন তো সেই সন্তান ‘নজীবুত তরফাইন সৈয়দ’; যেমন হযরত বড়পীর (র.)-এর মাতা-পিতা উভয়েই সৈয়দ। তার পিতা হাসানী সৈয়দ এবং মাতা হোসাইনী সৈয়দ ছিলেন। বর্তমান সময়ে হাসানী সৈয়দ-এর চেয়ে হোসাইনী সৈয়দ-এর সংখ্যাই বেশি। হাসানী সৈয়দ এবং হোসাইনী সৈয়দ উভয়েই ওয়াজেবুত তাজীম। খলিফাতুর রসুল হজরত আলী (রা.)-এর ওইসব আওলাদ যারা মা ফাতেমা-তুজ-জোহরা (রা.)-এর গর্ভজাত শুধু তাদেরকেই ‘সৈয়দ’ বলা হয়। আলী (রা.)-এর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানদের ‘আওলাদে উলুবী’ বলা হয়।

অনেকে মনে করেন— সৈয়দ, শেখ, পাঠান, গাজী, মোঘল সবাই এক স্তর-মর্যাদার। এমন ভাবনা সম্পূর্ণই ভুল। সৈয়দ বংশ সব বংশের চেয়ে উত্তম এবং মর্যাদাসম্পন্ন। তবে সবারই তাকওয়া এবং ইবাদত-বন্দেগির প্রয়োজন আছে। অন্যান্য ইসলামী সম্প্রদায়ের গোমরাহির সম্ভাবনা থাকলেও সৈয়দদের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। আহমদ আবুজর গেফফারী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত যে, রসুল (সা.) বলেন, ‘আলা ইন্না মাছালা আহলে বায়াতি ফিকুম মিহ্্লু ছাফিনাতে নূহিন মান রাকে বাহা নাজা ওয়ামান তাখাল্লাফা আনহা হালাকা।’ অর্থাৎ ‘আমরা আহলে বায়াতের উপমা নূহ (আ.)-এর কিস্তির মতো। যে এতে উঠল মুক্তি পেল, যে এতে সম্পৃক্ত হলো না ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো।’ জায়েদ ইবনে আকরাম (রা.) সূত্রে তিরমিজি বর্ণনা করেছেন— রসুল (সা.) বলেন, ‘ইন্নিতারেকুন ফিকুম মাইন তামাহ্্ ছাক্্তুম বিহিলশান তাছেল্লু বা আদি আহাদুহুমা আজামু মিনাল্্ আখেরে কিতাবুল্লা হাবলুন্্ মিনাছ ছামায়ে ওয়াল আবদে ওয়া ইৎ্রাতি আেল বায়াতি ওয়ালাম ইয়াতাফার রাকা হাত্তা তারেদা আলাইআল হাউজে ফানজারু ওয়া কাইফা তুেলফুনি ফিহিমা।’ অর্থাৎ ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুই জিনিস রেখে যাচ্ছি, আমার পরবর্তী সময়ে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এ দুই জিনিসকে আঁকড়ে ধরে থাকবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না। এদের মধ্যে একে অন্য থেকে বড়— আল্লাহর কিতাব যা আল্লাহর লম্বা রজ্জু, দ্বিতীয়টি হচ্ছে আহলে বায়াত। এ দুই জিনিস একে অন্য থেকে পৃথক হবে না। এমনকি হাউজে আমার কাছে আসা পর্যন্ত। সে জন্য তোমরা লক্ষ রেখো যে, তোমরা এ দুই জিনিসের মধ্যে আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার কর।’ আহলে বায়াতের প্রতি মোহাব্বত রাখা ছাড়া কেউ ঈমানদার হতে পারবে না। নবীকে (সা.) পেতে চাইলে আহলে বায়াতের প্রতি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নবী (সা.) বলেন, ‘হোসাইন আমা হতে, আর আমি হোসাইন হতে। যে হোসাইনকে ভালোবাসবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন। হোসাইন বংশসমূহের মধ্যে একটি অংশ।’ বাস্তবিক ক্ষেত্রেও হোসাইন (রা.)-এর মাধ্যমেই নবীজীর (রা.) বংশ ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। দয়াল নবী (সা.) হাসান ও হোসাইনকে (রা.) যুবক জান্নাতিদের সর্দার বলে উল্লেখ করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে তিরমিজি বর্ণনা করেছেন— রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর জন্য আমার সঙ্গে মহব্বত রাখো এবং আমার মহব্বতের খাতিরে আমার আহলে বায়াতের সঙ্গে মহব্বত রাখো।’ প্রকৃত প্রস্তাবে, নবী করিম (রা.)-এর যথার্থ উম্মত হতে চাইলে আহলে বায়াতের প্রতি মহব্বত, ভক্তি-বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা রাখা একান্ত প্রয়োজনীয়, তা না হলে আমাদের সব আয়োজনই বৃথা। আহলে বায়াত বা সৈয়দ বংশ সব বংশ থেকে উত্তম বলেই নামাজে দরূদে ইব্রাহীমিতে রসুল (সা.)-এর সঙ্গে তাদের ওপরও দরূদ পড়া হয়। আগেকার দিনের সাধারণ মানুষ সৈয়দের ছায়ায় পা রাখত না বেয়াদবির ভয়ে; কারণ তারা রসুলের (সা.) বংশধর। সৈয়দের জন্য জাকাত, সাদকা গ্রহণ নিষেধ।

মহান রাব্বুল আলামিন সব উম্মতে মোহাম্মদীকে আহলে বায়াতের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা ও প্রেম নিবেদনের তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads