• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ধ্বংসের পথে দিনাজপুরের ২৫০ বছরের আওকরা মসজিদ

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

ধ্বংসের পথে দিনাজপুরের ২৫০ বছরের আওকরা মসজিদ

  • মো. শাহাদৎ হোসেন শাহ
  • প্রকাশিত ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

প্রয়োজনীয় সংস্কার, যত্ন ও মেরামতের অভাবে ধ্বংস হতে বসেছে দিনাজপুরের ২৫০ বছরের মির্জা মাঠের ঐতিহাসিক ‘আওকরা মসজিদ’। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়ন ও আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান হাসিমপুর-আঙ্গারপাড়ার মির্জা মাঠে অবস্থিত ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন স্থাপত্যে নির্মিত ‘আওকরা মসজিদ’। তৎকালীন মির্জা সাহেব মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় কী নাম রেখেছেন তা কেউ বলতে পারেন না।

কোনো মানুষ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এটির মধ্যবর্তী অংশে দাঁড়িয়ে কথা বললে একসময় জোরে প্রতিধ্বনি হতো। তা শুনে তারা ভাবতো মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে মসজিদের নাম হয়ে যায় ‘আওকরা’ মসজিদ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ। এখনো মানুষ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে কথা বলে প্রতিধ্বনি শোনার আশায়। কিন্তু মসজিদের দেয়াল ফেটে নষ্ট এবং এর গায়ে আগাছা-পরগাছা গজে ওঠায় আগের মতো আর আওয়াজ হয় না। এটি অযত্ন-অবহেলায় দীর্ঘকাল সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে বিলীনের পথে। অথচ এটি সংস্কার করলে ঐতিহাসিক স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন হিসেবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মসজিদটি প্রায় ২৫০ বছর আগে বাংলা ১১৭২ সালে মির্জা লাল বেগ নির্মাণ করেন। চিকন ইটে নির্মিত দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেলান নদীর পূর্বধারে মির্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের ধারণা, একসময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। যে কারণে এখানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের আমলে অথবা অন্য কোনো কারণে তারা মসজিদটির আশপাশ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে এটি অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। পরবর্তীকালে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে মসজিদটি। তবে মির্জা লাল বেগের ওই মসজিদকে ঘিরে মির্জার মাঠে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ ছাড়া একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মির্জার মাঠ আওকরা মসজিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে আরো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। ওই এলাকার একাধিক প্রবীণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেও মসজিদটিতে সর্বশেষ কত সালে নামাজ আদায় হয়েছে তা জানা যায়নি।

মির্জা লাল বেগের ওই মাঠে উজ্জ্বলময় দুটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও উপজেলার একমাত্র পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদটি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেননি সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান। ফলে মসজিদটির যেটুকু অংশ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে তাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসীর দাবি, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কিংবা সরকারি কোনো বিভাগ যদি পদক্ষেপ নিয়ে মসজিদটির সংস্কার করে, তাহলে এটি হতে পারে দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যসমৃদ্ধ মসজিদ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads