• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
ভাষা আল্লাহর দান

ভাষা আল্লাহর দান

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

ভাষা আল্লাহর দান

  • সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
  • প্রকাশিত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভাষা আল্লাহর দান। মহান রাব্বুল আলামিন জ্ঞানার্জনের জন্য মানবজাতিকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। সুরা আর রাহমানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘খালাকাল ইনসান’ অর্থ— তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন (আয়াত নং-২) এবং তৃতীয় আয়াতে আছে— ‘আল্লামাহুল বায়য়ান’ অর্থ— তিনি তাকে মতবিনিময়ের জন্য ভাব প্রকাশে ভাষা প্রদান করেছেন। প্রতিটি শিশু তার মাতৃভাষাতেই কথা বলতে শেখে। মায়ের ভাষা বৈ কোন নবী-রসুল কথা বলেছেন সর্বোত্তম? ঈসা, মুসা, ইব্রাহিম, নূহ সব আম্বিয়া কেরাম নিজ নিজ মাতৃভাষায় কথা বলেছেন, আসমানি কিতাব পেয়েছেন এবং প্রচারও করেছেন। মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহান রব পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রসুল পাঠিয়েছি সেই জাতির ভাষায়, যাতে তিনি তাদের কাছে দ্বীনের বিধানসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারেন।’ অন্যত্র বর্ণিত আছে— ‘আমি কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করেছি, যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পার’ (২/ইউনুস)।

হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জন্মস্থান ছিল আরব দেশ। আরবের লোকদের ভাষা ছিল আরবি। তাই কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে, যাতে সব আরববাসীর জন্য সহজবোধ্য হয়। ভাষার মাধ্যমেই মানুষ সবকিছু জানে, বোঝে এবং শেখে। তারপর তা কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। সৃষ্টির আদি থেকে আজ পর্যন্ত এ বাস্তব সত্যের ধারাটি চলে আসছে। তাই আত্মচেতনাবোধ, জাতীয় চেতনাবোধ এবং ধর্মীয় চেতনাবোধে উদ্বুদ্ধ হতে হলে মাতৃভাষা বা জাতীয় ভাষা সম্পর্কে থাকা চাই সম্যক জ্ঞান। সব জ্ঞানের উৎস আল-কোরআনের প্রথম বাণীই হচ্ছে— ‘পড় তোমার প্রভুর নামে।’ এ থেকেও ভাষার গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

ভাষার গুরুত্ব ও প্রভাব যে কতটা অপরিসীম তা হজরত আদম (আ.)-কে ভাষা শিক্ষা দিয়ে ফেরেশতাদের ওপর মর্যাদাবান করার ঘটনায়ই অতি সুস্পষ্ট। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে— ‘তিনি আদম (আ.)-কে যাবতীয় বস্তু ফেরেশতাদের সামনে প্রকাশ করলেন এবং বললেন, এ সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা অবগত হও।’ (বাক্বারা/৩১ নং আয়াত) কিন্তু তারা ব্যর্থ হলো এবং আদমের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিল।

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষা খোদার সেরা দান। আরবি, উর্দু, ইংরেজি কিংবা ফারসি ভাষায় আল্লাহর বিধান সম্পর্কে আমরা যতটা না জ্ঞান অর্জন করতে পারি, মাতৃভাষায় অতিসহজে অনেক বেশি মাত্রায় অর্জন করতে সক্ষম। কারণ ভাষা মানুষের অস্তিত্ব। আর এ অস্তিত্বের বিকাশ সাধন হয় মাতৃভাষার মাধ্যমে। অন্য ভাষার ওপর ব্যুৎপত্তি অর্জন করা দুঃসাধ্য ও কঠিন। তবু আমাদের সমাজে প্রার্থনা, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদিতে উর্দু ও ফারসি ভাষা ব্যবহার করাটাকে কিছু আলেম গৌরবজনক কাজ বলে ভেবে থাকেন! অথচ আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলাম মুখস্থ দোয়া পাঠের দ্বারা : প্রার্থনার অর্থ না বোঝার কারণে হূদয়, মন আলোড়িত হলো না। কিন্তু যা বললাম তা যদি বুঝতে পারতাম তো অন্তর বিগলিত হয়, অশ্রুতে বুক ভেসে যায়। যার ফলে প্রার্থনা হয় ফলপ্রসূ। কোরআন শিক্ষার চিরাচরিত রীতির পাশাপাশি যদি স্ব স্ব মাতৃভাষায় ব্যাখ্যা শিক্ষার প্রচলন করা যায় তো অধিক মাত্রায় উদ্দেশ্য সাধিত হবে। তা না হলে অজ্ঞতার জন্য কোরআনের গুরুত্ব অনুধাবনে অক্ষম।

মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রত্যেককে মাতৃভাষার গুরুত্ব অনুধাবন ও মাতৃভাষায় দ্বীন ইসলাম চর্চার তওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads