• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ

দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ

  • সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
  • প্রকাশিত ০৮ মার্চ ২০১৯

দেশপ্রেম ঈমানের দাবি, ঈমানদারদের দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে— ‘হে ঈমানদারগণ, ধৈর্য ধারণ করো এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন করো। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত : ২০০) উল্লেখিত আয়াতে ‘রাবিতু’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। ‘রিবাত’-এর আভিধানিক অর্থ হলো ‘সীমান্ত হেফাজত করা’। তা ছাড়া বিভিন্ন হাদিসে মহানবী (সা.) সীমান্ত হেফাজতের বিষয়ে অসংখ্য ফজিলতের কথা উল্লেখ করেছেন। হজরত সালমান ফারসি সূত্রে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একদিন ও এক রাতের রিবাত (সীমান্ত প্রহরা) ক্রমাগত এক মাসের নফল রোজা এবং সারারাত ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়া থেকে উত্তম।’ হজরত সাহল ইবনে সা’আদ জায়েদি সূত্রে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথে একদিনের রিবাত (সীমান্ত প্রহরা) সমগ্র দুনিয়া এবং এর মধ্যে বিদ্যমান সমুদয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম।’  

মাতৃভূমির প্রতি যার প্রেম, দরদ, ভালোবাসা নেই তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ নয়। নবীজী (সা.) বলেন, ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।’ দেশপ্রেমের অর্থ হচ্ছে নিজ দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষার্থে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করা। পাশাপাশি যাদের জীবন-ইজ্জত-রক্তের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত তাদের চেতনায় শাণিত হয়ে দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করা। দেশপ্রেমিকরা দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে, ওরা ক্ষমতার স্বাদ পেতে দেশপ্রেমের নাটক করে না। দেশপ্রেম আর গদিপ্রেম এক বিষয় নয়। প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের জন্য দেশ-জাতির স্বার্থকে তুচ্ছ করে ভাবেন না। একজন দেশপ্রেমিক যে কোনো অবস্থানে থেকে তার দেশপ্রেমের পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। কারণ, দেশপ্রেম যে বিবেকবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) পারিবারিকভাবেই বস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন। খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পরও তিনি মদিনার বাজারে কাপড়ের দোকান নিয়ে বসলে নেতৃস্থানীয় সাহাবিরা এতে করে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত এবং জনগণ বঞ্চিত হতে পারে ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু আবু বকর (রা.)-এর অন্য কোনো উপার্জনের পথ না থাকায় নেতৃস্থানীয় সাহাবিরা তার কাপড়ের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একজন সাধারণ কর্মজীবীর ন্যূনতম মজুরির সমপরিমাণ অর্থের মাসোহারা নির্ধারণ করেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ন্যূনতম বেতনভোগী রাষ্ট্রপ্রধানের এ বিরল দৃষ্টান্ত। এমন দৃষ্টান্ত শুধু প্রকৃত কোনো দেশপ্রেমিকের পক্ষেই শোভনীয়। খলিফা চাইলে ভোগবিলাসের সুযোগও মিলে যেত নিশ্চয়ই।

মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষা ইসলামের শিক্ষা। হতে পারে এ ভাবনা থেকেই বাংলাদেশের মাটিতে ইংরেজবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া জনতার অংশগ্রহণে। ১৯৭১ সালেও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনতা এ দেশকে স্বাধীন করেছে। দেশের প্রতি দরদ না থাকলে স্বাধীনতাকামী জনতার পক্ষে জীবন দেওয়া সম্ভব ছিল না। এক্ষেত্রে মনে রাখা চাই, একজন সৎ দেশপ্রেমিক দেশের প্রয়োজনে নিজের জীবন বাজি রাখতে কোনো বাস্তবতায়ই ভয় পান না।

মার্চ এবং ডিসেম্বর মাস এলে এ দেশে দেশপ্রেমিক আত্মবিসর্জনকারীদের স্মরণে প্রায় মাসব্যাপী চলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, অনুষ্ঠানের আয়োজন। কিন্তু শুধু সভা-সমাবেশ, অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন শেষ হওয়ার নয়। যে লক্ষ্যে তারা জীবন দিয়েছেন, সেই লক্ষ্য ষোলোআনা বাস্তবায়ন করাই হলো দায়িত্ব পালনের উত্তম উপায়।

লেখক : কলামিস্ট ও সাংবাদিক

ংড়ুবফভধরুঁষ—মসধরষ.পড়স

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads