ইসলামী সমাজব্যবস্থার অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে সাম্য। এই সমাজব্যবস্থায় উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব, সাদা-কালোর মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না। ইসলাম মনে করে, সব মানুষই সমপর্যায়ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের মালিককে ভয় করো, যিনি তোমাদের একটি (মাত্র) ব্যক্তিসত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তা থেকে তার জুড়ি করেছেন। এরপর তিনি তাদের এ আদি জুড়ি থেকে বহুসংখ্যক নর-নারী দুনিয়ার চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। (হে মানুষ!) তোমরা ভয় করো আল্লাহতায়ালাকে, যাঁর পবিত্র নামে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার ও পাওনা দাবি করো এবং সম্মান করো গর্ভধারিণী মাকে। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষদৃষ্টি রেখে চলেছেন’ (সুরা নিসা, আয়াত ১)। ওই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, শ্বেত কিংবা কৃষ্ণবর্ণের সব মানুষ একই মায়ের সন্তান। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, আরব বলে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই অনারবের ওপর। সাদা বর্ণের মানুষের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই কালো বর্ণের ওপর। শ্রেষ্ঠত্ব কেবল নির্ণীত হবে তাকওয়ার মাধ্যমে। এ জন্য আমরা দেখতে পাই, হজরত যায়েদ বিন হারেছকে ক্রীতদাস হওয়া সত্ত্বেও প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। হজরত বেলাল (রা.)-কে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন নিয়োগ করা হয়।
তবুও ইসলাম এতটুকুকে যথেষ্ট মনে করেনি; বরং সবাইকে ঐক্যের বাঁধনে ভ্রাতৃত্বের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হতে আহ্বান জানায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশি শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৩)। অন্যত্র সতর্ক করে ভরা হয়েছে, ‘মুমিনরা তো (একে অপরের) ভাই, অতএব (বিরোধ দেখা দিলে) তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও, আল্লাহতায়ালাকে ভয় করো, আশা করা যায়, তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত ১০)। এতে করে আরব জাতির মধ্যে বহু দিন ধরে চলে আসা যুদ্ধবিগ্রহের অবসান হলো। আর রসুল (সা.) মুসলমানদের হূদয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন : ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সুতরাং একে অন্যের ওপর অত্যাচার করবে না, একে অন্যকে কষ্ট দেবে না। যে ব্যক্তি নিজের মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দুঃখ-দুর্দশা দূর করবেন এবং যে ব্যক্তি নিজ মুসলিম ভাইয়ের দোষত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন’ (বুখারি : ২৪৪২)।
লেখক : ইসলামবিষয়ক চিন্তাবিদ