• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

সৎ কাজ মুক্তির পাথেয়

  • প্রকাশিত ১৫ মার্চ ২০১৯

মানব জীবনের প্রতিটি কাজেরই রয়েছে দুটি দিক— একটি ভালো, অপরটি মন্দ। যে ভালো কাজ করবে, সে তার পুরস্কার পাবে। আর যে মন্দ কাজ করবে, সে শাস্তি পাবে। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি কাজ ভালো হোক— এটাই প্রত্যেক মুমিনের প্রত্যাশা। নেক কাজের মাধ্যমে শুধু পরকালে নয়, ইহকালেও রয়েছে অনেক কল্যাণ। নেক কাজের মাধ্যমে আমলনামা পবিত্র হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয় এবং দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।

হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, একবার তিনজন লোক পথ চলছিল, তারা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হলো। অতঃপর তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় থেকে একখণ্ড পাথর পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তারা একে অপরকে বলল, নিজেদের কৃত কিছু সৎ কাজের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়েছে এবং তার উসিলা করে আল্লাহর কাছে দোয়া কর। তাহলে হয়তো আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে পাথরটি সরিয়ে দেবেন। তাদের একজন বলতে লাগল, হে আল্লাহ! আমার আব্বা-আম্মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিল। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধ্যায় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম, তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগে আমার আব্বা-আম্মাকে পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে দেরি হয় এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না। এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন আমি দুধ দোহন করলাম, যেমন প্রতিদিন করি। তারপর আমি তাদের শিয়রে (দুধ নিয়ে) দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদের জাগানো আমি পছন্দ করিনি এবং তাদের আগে আমার বাচ্চাদের পান করানোও অসঙ্গত মনে করি। অথচ বাচ্চাগুলো দুধের জন্য আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছিল।

এভাবে ভোর হয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করে থাকি, তাহলে আপনি আমাদের পথ থেকে পাথরটি খানিক সরিয়ে দিন, যাতে আমরা আসমানটা দেখতে পারি। তখন আল্লাহ পাথরটি একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখতে পেল।

দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষরা যেমন মহিলাদের ভালোবাসে, আমি তাকে তার চেয়ে অধিক ভালোবাসতাম। একদিন আমি তার কাছে চেয়ে বসলাম (অর্থাৎ খারাপ কাজ করতে চাইলাম); কিন্তু তা সে অস্বীকার করল, যে পর্যন্ত না আমি তার জন্য একশ দিনার নিয়ে আসি। পরে চেষ্টা করে আমি তা জোগাড় করলাম (এবং তার কাছে এলাম)। যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম (অর্থাৎ সম্ভোগ করতে তৈরি হলাম) তখন সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে মাহ্র (পর্দা) ছিঁড়ে দিয়ো না (অর্থাৎ আমার কুমারীর সতীত্ব নষ্ট করো না), তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে আপনি আমাদের জন্য পাথরটা সরিয়ে দিন। তখন পাথরটা কিছু সরে গেল।

তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমি এক ফারাক চালের বিনিময়ে একজন শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করল, আমাকে বলল— আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি তাকে তার পাওনা দিতে গেলে সে তা নিল না। আমি তা দিয়ে কৃষিকাজ করতে লাগলাম এবং এর দ্বারা অনেক গরু ও তার জন্য রাখাল রাখলাম। বেশ কিছুদিন পর সে আমার কাছে এলো এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর (আমার মজুরি দাও)। আমি বললাম, এসব গরু ও রাখাল নিয়ে নাও। সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সঙ্গে ঠাট্টা করো না। আমি বললাম, আমি তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করছি না, ওইগুলো নিয়ে নাও। তখন সে তা নিয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, যদি আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজটি করে থাকি, তাহলে পাথরের বাকিটুকু সরিয়ে দিন। তখন আল্লাহ পাথরটিকে সরিয়ে দিলেন (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৩৩৩)।

এই হাদিসের আলোকে বলতে পারি, আজো যদি আমরা আমাদের ভালো কাজের কথা স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের আমলনামায় গুনাহের যে বড় বড় পাথর জমা হয়েছে তা সরিয়ে দেবেন এবং আমাদের আমলনামা পবিত্র করে দেবেন।

 

লেখক :  প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads