• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

আল্লাহর নৈকট্য লাভে চাই জিকির

  • ইকবাল ওয়াসী
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০১৯

আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে যত ইবাদত আছে, তার মধ্যে জিকির বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জিকিরের মানে হলো— স্মরণ, আল্লাহকে স্মরণ বা ডাকা, তাঁর প্রশংসা, গুণগান ও মহিমা বর্ণনা করা ইত্যাদি। ইসলামের দৃষ্টিতে যে কাজের দ্বারা সওয়াব হয়, তা-ই জিকির। কারণ প্রতিটি সওয়াবের কাজে আল্লাহর স্মরণ হয়। বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। কেননা জিকির তথা আল্লাহর স্মরণ ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, (হে রসুল)! আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব তেলাওয়াত করুন এবং নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয়ই নামাজ (মানুষকে) অশ্লীলতা ও কদর্যতা থেকে দূরে রাখে। আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন (সুরা আনকাবুত : ৪৫)।

জিকিরকে সর্বোৎকৃষ্ট বলে হাদিস শরিফেও বর্ণনা রয়েছে। একসময় রসুলে পাক (সা.) বললেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন একটা আমলের কথা বলব না, যা সব আমল অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, তোমাদের মর্যাদাকে সবচেয়ে উঁচুকারী, স্বর্ণ ও রৌপ্যদান করার চাইতেও শ্রেষ্ঠ এবং জিহাদে শত্রুদের সম্মুখীন হওয়ার চাইতেও উত্তম?’ তখন সাহাবা কেরাম (রা) উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর হাবিব (সা.)! রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তা হলো আল্লাহর জিকির’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, ইবনে আবিদ্ দুনিয়া, হাকেম, বায়হাকি, জামে সগীর, মিশকাত)।

জিকির সর্বোৎকৃষ্ট ইবাদত এবং জিকিরকারী সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হওয়ায় সে ইবাদত কখন বা কীভাবে করতে হবে সে বিষয়টা জানা থাকা দরকার। সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে— ‘তারাই জ্ঞানী ব্যক্তি যারা দাঁড়ানো, বসা এবং শোয়া অবস্থায় তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে’ (সুরা ইমরান : ১৯১)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তোমরা যখন সালাত সম্পন্ন কর তখন দণ্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর’ (সুরা নিসা : ১৪২)।

প্রশ্ন আসতে পারে, কীভাবে সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করা যাবে? আমরা জীবন চালাতে ২৪ ঘণ্টাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি। উত্তরটি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলামের দৃষ্টিতে যেসব কাজের দ্বারা সওয়াব হয়, তা-ই আল্লাহর জিকির। সে অনুযায়ী যে জীবন আল্লাহর স্মরণ থেকে শূন্য থাকে সেখানে বিশেষ সময়ে এবং বিশেষ সুযোগে অনুষ্ঠিত ইবাদত এমন একটি চারা গাছের মতো, যা তার প্রকৃতির নিছক বাগানের মালিকের বিশেষ তত্ত্বাবধানে বেঁচে থাকে। একজন প্রকৃত মুসলমান কখনোই আল্লাহর স্মরণবিহীন থাকতে পারে না। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার সময়ের দোয়া, ঘুম থেকে উঠে দোয়া, অজু করার আগের দোয়া, গোসলের দোয়া, দৈনন্দিন প্রতিটি কাজের শুরুতে দোয়া পড়া। এ সবই মহান আল্লাহকে স্মরণ করার মাধ্যম।

ঠিক এভাবে একজন মুমিন ঘুম থেকে জেগে আবার ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশিত ও রসুলে পাক (সা.)-এর প্রদর্শিত আমলসমূহ পর্যালোচনা করলে দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টাই আল্লাহর জিকির অর্থাৎ স্মরণ করার সওয়াব বান্দার আমলনামায় উঠবে। যে কারণে বাস্তবে কোনো অবৈধ পথ অবলম্বন করতে গেলেই আল্লাহকে স্মরণ হবে এবং অন্যায় ও অবৈধ কাজ করা থেকে বিরত থাকতে পারবে। তাই মুসলিম হিসেবে ঘুমাতে গেলে, ঘুম থেকে উঠে, পায়খানা প্রস্রাবে প্রবেশ ও বাইরের সময়, খাওয়ার আগে ও পরে, অজুর সময়, মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়, স্থল-জল ও আকাশপথে বাহনে আরোহণের সময়, বিপদের সময়, স্ত্রী সহবাসের আগে, সর্বোপরি সালাতের ভেতর ও বাহিরের দোয়াসহ সব দোয়াই জিকির বলে গণ্য করা হয়। তাই আসুন, জিকিরের সময় শুধু নির্দিষ্ট না করে সর্বাবস্থায় কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়া বা জিকির করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।

 

লেখক : আলেম ও শিক্ষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads