• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

পাপমোচন ও মুক্তির জন্য তওবা

  • এস এম আরিফুল কাদের
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০১৯

তওবা হচ্ছে পাপমোচনের মাধ্যমে মুক্তির পথ। ‘তওবা’ অর্থ আত্মগ্লানি, অনুশোচনা, ফিরে আসা, অসহায় বিব্রত হওয়া, পাপ কাজ ত্যাগ করা ইত্যাদি। অন্য কথায়, কৃত অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, ভবিষ্যতে এমন অপকর্মে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সংকল্প করে তা ছেড়ে দেওয়া এবং আন্তরিক একাগ্রতায় মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াকেই তওবা বলে। পাপগ্রস্ততার জন্য সন্তানহারা মায়ের মতো অস্থির হওয়া এবং ম্লান ও মলিন মুখে নিজের ব্যর্থতায় ব্যাকুল হওয়া ক্ষমাপ্রার্থীর জন্য জরুরি। এমন অবস্থায় পাপের প্রতি ঘৃণা জন্মায় এবং পাপের পুনরাবৃত্তি ঘটে না; বরং মহান আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া লাভের চেতনায় ইবাদতের আগ্রহে মন পরিতৃপ্ত হওয়াই হলো তওবা কবুল হওয়ার লক্ষণ। এছাড়া শুধু মৌখিক অনুতাপ মূল্যহীন। পাপ পরিহার ও অনুতাপের তাৎপর্য সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর (অনুতপ্ত হয়ে ফিরে এসো)। তবেই তোমরা সফলকাম হবে’ (সুরা নূর : ৩১)।

মিথ্যা, মোহ, বিভ্রান্তি, অর্থ, বস্ত্র, মুক্তি সমর্থনের দাপটে মানুষ পাপ কাজে লিপ্ত হয়। আবার যখন নিজের ভুল বুঝে অনুতপ্ত হয়, তখন আল্লাহও ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায় ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজে লিপ্ত হয়। এরাই তো তারা, যাদের আল্লাহ ক্ষমা করবেন’ (সুরা নিসা : ১৮)।

মহান আল্লাহর নাম ‘গাফফার’ (ক্ষমাশীল)। এ জন্যই তিনি বান্দাকে ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। আর বান্দার জন্য ক্ষমাপ্রাপ্তির শর্ত হলো তওবা। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, আদম সন্তান সবাই পাপ করে থাকে, আর পাপীদের মধ্যে তারাই সবচেয়ে ভালো যারা বেশি বেশি তওবা করে (সহিহ তিরমিজি)। তওবার এমনই সুফল যে, বান্দা হয় শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ মুক্ত। আল্লাহর হাবিব (সা.) ইরশাদ করেন, পাপ করে যে ব্যক্তি তওবা করে সে যেন এমন হয়ে যায়, যেন তারা কোনো পাপই করেনি (মিশকাত শরীফ)।

পাপের পরিমাণ নয় বরং পাপহীন পবিত্র জীবনের প্রত্যাশা হলো তওবার মূল চেতনা। তাই পাপের কারণে মহান আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে নিরাশ হতে নেই। মহান আল্লাহর বাণী, ‘হে রসুল (সা.) বলুন! হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ, তারা আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা মানুষের সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (সুরা জুমার : ৫৩)। তাই পাপ যতই পুরনো ও ভয়াবহ হোক না কেন, নিরাশ না হয়ে মহান প্রভুর দরবারে নিজেকে সমর্পণ করে তওবা করলে তা থেকে ক্ষমা লাভের আশা করা যায়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে ব্যক্তি গুনাহের জন্য তওবা করবে, তার তওবা আল্লাহপাক কবুল করবেন (সহিহ মুসলিম)।

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জাতি মানুষ পাপের কারণে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হোক তা আল্লাহপাকেরও কাম্য নয়। এজন্যই নানা ইবাদতের উচ্চ মর্যাদা ও ক্ষমার মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দার জন্য তার রহমতকে অবারিত করেন। তাই সে তওবার মাধ্যমে যেমন পাপমোচন হয়, ঠিক তেমনি মানুষের আধ্যাত্মিক মুক্তিও সম্ভব হয়। এ বিষয়ে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘যারা অনুতাপ করে, উপাসনা করে, আল্লাহর প্রশংসা করে, সাওম পালন করে, রুকু ও সিজদা করে (সালাত আদায় করে), সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করে এবং আল্লাহর বিধানের সীমারেখা সংরক্ষণ করে, হে মোহাম্মদ (সা.)! আপনি এসব বিশ্বাসীকে শুভ সংবাদ দিন’ (সুরা তওবা : ১১২)।

মূলত আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার মাহাত্ম্য এমনই যে, বান্দা যতবার পাপ করুক না কেন, যখন সে অনুতপ্ত হয়ে, লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চায়, তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। তাই পাপমোচন ও মুক্তির জন্য তওবার বিকল্প হতে পারে না। জীবনের সর্বস্তরে সর্বাবস্থায় তওবার মাধ্যমেই শান্তি ও মুক্তিলাভ করা সম্ভব।

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads