• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
তারাবিতে ক্ষয়ে যায় অতীতের পাপ

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

তারাবিতে ক্ষয়ে যায় অতীতের পাপ

  • সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
  • প্রকাশিত ১২ মে ২০১৯

রমজান মাসের মৌলিক দুটি ইবাদতের মধ্যে তারাবির স্থান দ্বিতীয়। পবিত্র রমজান মাসের রাতে ইশার ফরজ ও সুন্নাত নামাজের পর বিতরের আগে বিশ রাকাত নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। পুরো রমজান মাসে তারাবির নামাজ জামায়াতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন একবার খতম করা সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ। খতমে তারাবিতে হাফেজ সাহেবের জন্য কোনো ধরনের টাকা-পয়সা শর্তারোপ করা জায়েজ নয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সঙ্গে শুধু সওয়াবের আশায় তারাবি পড়ে, তার অতীতের সব (সগিরা) গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’

তারাবি খোদায়ি নৈকট্য অর্জনের এমন এক ইবাদত, যার কোনো তুলনাই হয় না। এই ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ সাধারণ অন্যদিনের তুলনায় আল্লাহ তায়ালার অধিক নৈকট্য অর্জনের সৌভাগ্যশীল হয়। কেননা তারাবির নামাজ ২০ রাকাত। যাতে সিজদার সংখ্যা চল্লিশটি। আর প্রতিটি সিজদাই আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের শ্রেষ্ঠতম একটি স্তর। এরচেয়ে শ্রেষ্ঠতম স্তর আর হতে পারে না। মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালার সামনে সিজদায় পড়ে যায়, নিজের মর্যাদাময় কপাল মাটিতে ঠুকে দেয়, মুখে তার জারি থাকে ‘আমার প্রভু শ্রেষ্ঠতম’ তখন এই অবস্থাটি আল্লাহর নৈকট্যের শ্রেষ্ঠতম স্তর হিসেবে বিবেচিত হয়।

কোনো কোনো মানুষ বলে বেড়ায়, আমরা তারাবির নামাজ আট রাকাত পড়ব, বিশ রাকাত নয়। এক্ষেত্রে প্রকৃত সত্য হলো, এসব লোক নৈকট্য অর্জনের স্তরগুলোর মূল্যায়ন করতে এবং এগুলোকে চিনতেই সক্ষম হয়নি। (পরবর্তী কোনো লেখায় তারাবির রাকাত নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।) না বুঝে তারা এসব মন্তব্য করে। কথাটা বললাম এ কারণে যে, নবী করিম (সা.)-এর ওফাত হওয়া পর্যন্ত তারাবি উৎসাহ প্রদানের পর্যায়ে ছিল। হজরত সিদ্দীকে আকবর (রা.)-এর খেলাফতকালেও তারাবির জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম প্রবর্তিত হয়নি। হজরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতকালের প্রাথমিক অবস্থায় লোকেরা বিচ্ছিন্নভাবে রমজানের রাতের নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর হজরত ওমর (রা.) বিশিষ্ট সাহাবিদের পরামর্শক্রমে তারাবির বর্তমান পদ্ধতি চালু করেন। (মুসলিম শরিফ)

নাসায়ী ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় তারাবি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা প্রমাণিত হয়েছে। মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে ইমাম নববী (রহ.) লিখেছেন, জেনে রাখ, তারাবি আলেমদের ঐকমত্যেই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং এর রাকাত সংখ্যা বিশ। (কিতাবুল-আযকার : পৃ. ৮৩) হজরত আলী (রা.)-এর প্রস্তাবক্রমেই হজরত ওমর (রা.) মসজিদে নিয়মিত তারাবির জামাত কায়েম করার নিয়ম প্রবর্তন করছেন। (মুসতাদরাক হাকেম : ১ম খণ্ড, ৪৪০ পৃ.) ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.) লিখেন, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) কর্তৃক নিয়োজিত হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বিশ রাকাত তারাবিহ ও তিন রাকাত বেতর পড়তেন। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া : ২২তম খণ্ড, পৃ. ১২০)

তারাবির নামাজের নিয়ত : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতাই সিলাতিত তারাবীহী সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

তারাবি নামাজের দোয়া : সুবহানাজিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুত। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বানা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ। (প্রত্যেক চার রাকাত নামাজ আদায়ের পর এ দোয়া তিনবার পড়বেন।)

তারাবি নামাজের মোনাজাত : আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলুকাল্ জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নারি ইয়া খালিকাল জান্নাতা ওয়ান্নারি বিরাহমাতিকা ইয়া আজীজু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহিমু, ইয়া জাব্বারু ইয়া খালেকু, ইয়া রাররূ, আল্লাহুমা আজির না মিনান্নারি, ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু, বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন। (প্রত্যেক চার রাকাত নামাজের পর এ মোনাজাত পড়বেন।)

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads