• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মহররম মাসের ফজিলত ও শিক্ষা

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

মহররম মাসের ফজিলত ও শিক্ষা

  • এস. এ. মালিহা
  • প্রকাশিত ১৬ আগস্ট ২০১৯

আরবি হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররম মাস। এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাসে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। এ মাসে রয়েছে আশুরা। আশুরা আশিরুন-এর বহুবচন। এর অর্থ দশম তারিখের সমন্বয় অর্থাৎ মহররম মাসের দশ তারিখে সংঘটিত ঘটনাবলি। পৃথিবীর আদি-অন্তের ঘটনা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।

মহররমের দশম দিবসে সংঘটিত বহু ঘটনা থেকে কয়েকটি হলো : ১। আশুরার দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয় এবং এ দিনে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। এ তারিখেই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরিত হন এবং বহু বছর পর এই তারিখেই আরেফাতের ময়দানে জাবালে রহমতে তিনি ও বিবি হাওয়া (আ.)-এর পুনরায় সাক্ষাৎ লাভ হয় এবং তাঁদের মার্জনা করা হয়। ২। এ দিবসে হজরত ইদ্রিস (আ.)-কে আকাশে উত্তোলন করা হয়। ৩। এ তারিখে হজরত নুহ (আ.)-কে তুফান ও প্লাবনের পানি থেকে পরিত্রাণ দেওয়া হয়। ৪। এ দিনে হজরত আইয়ুব (আ.)-কে ১৮ বছর রোগভোগের পর রোগ মুক্তি থেকে দেওয়া হয়। ৫। এ তারিখে হজরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাাহ (আ.)-কে অগ্নিকুণ্ড হতে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়। ৬। এ দিনে হজরত দাউদ (আ.)-কে বিশেষ ক্ষমা করা হয় এবং হজরত সুলাইমান (আ.)-কে স্বীয় হারানো বাদশাহী পুনরায় প্রদান করা হয়। ৭। এ দিবসে হজরত ইউনুছ (আ.)-কে ৪০ দিন পর মাছের উদরে থাকার পর নিষ্কৃতি দেওয়া হয়। ৮। আশুরায় হজরত ইয়াকুব (আ.) স্বীয় হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। ৯। এ দিনে হজরত মুসা (আ.) ফিরাউনের কবল থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেন। ১০। এই তারিখে হজরত ঈসা (আ.)-কে আকাশে উত্তোলন করা হয়। ১১। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মাদ (স.) মক্কা শরিফ থেকে হিজরত করে মদিনা শরিফে এ দিনে তাশরিফ নেন। ১২। এ দিনেই নবী করিম (সা.)-এর কলিজার টুকরা ফাতেমা (রা.)-এর নয়নমণি হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) এবং তাঁর ৭৭ জন পরিজন ও ঘনিষ্ঠজন জালিম ইয়াজিদের সৈন্য কর্তৃক কারবালা প্রান্তরে ফোরাত নদীর তীরে নির্মমভাবে শহীদ হন।

এ মাসের পবিত্রতা ও আশুরার বিশেষত্ব সম্পর্কে আল-কোরআনুল-করিম ও হাদিস শরিফের কয়েকটি উদ্ধৃতি :

ইসলামের হারাম চারটি মাসের একটি হলো মহররম। বর্ষ গণনার রীতি ও মাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করার দিনে মাসসমূহের গণনা আল্লাহর নিকট বার মাস, এর মধ্যে চারটি হারাম মাস। তোমরা নিজেদের মধ্যে এসবের জুলুম করো না। আর তোমরা মুশরিকদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে যুদ্ধ কর যেমনিভাবে তারা তোমাদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে যুদ্ধ করে, আর জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গেই রয়েছেনণ’ (সুরা আত-তাওবা, আয়াত : ৩৬)।

মহররম মাসে যুদ্ধ হারাম। তবে যদি প্রতিপক্ষ কাফির-মুশরিক চড়াও হয় এবং আক্রমণ করে তাহলে যুদ্ধ করে তাদেরকে ঘায়েল করা বৈধ। এ প্রসঙ্গে মুকাতিল ইব্ন হায়্যান ও ইব্ন জুরাইজ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবীদের একদল মহররম মাসে মুশরিকদের একদল লোকের সাক্ষাৎ লাভ করেন। তখন মুসলিম পক্ষ প্রতিপক্ষকে নিবৃত্ত রাখতে চাইলেন, যাতে তারা হারাম মাসে যুদ্ধ না করে। তারপর মুশরিক পক্ষ অস্বীকৃতি জানিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হতে প্রতিজ্ঞ হলো এবং অকস্মাৎ তাদের ওপর চড়াও হলো। তখন মুসলিমগণ তাদের প্রতিহত করলেন এবং যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। এরপর মহান আল্লাহ তাঁদেরকে বিজয় দান করেন। (ইবন কাছির, তাফসিরে ইবন কাছির, ৫ম খণ্ড, ৪৪৯)।

হজরত আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত- আল্লাহর রসুল (সা.) যখন মদিনা শরিফে তাসরিফ আনেন তখন সেখানের ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা রাখা অবস্থায় পেলেন। তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলল, এদিন আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের ওপর বিজয়ী করেন। তাই সেদিনের সম্মানার্থে আমরা রোজা পালন করি। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.)  তখন বললেন, মুসা (আ.)-এর ব্যাপারে এদিনে রোজা রাখার ক্ষেত্রে আমরা তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার (ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪২৮ পৃ. হাদিস নং ২০৮৮)।

হজরত আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত- একটি দীর্ঘ হাদিসের শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আশুরার দিনের রোজার পুণ্যে আমি আশা করি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ আল্লাহ মোচন করে দেন (ইমাম মুসলিম, আসসাহিহ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-১৯৭৬)।

আমাদের করণীয় :

এ মাসে বিশেষত ইসলামের কল্যাণে নিবেদিত হওয়া উচিত। হজরত মোহাম্মদ (স.)-এর প্রতি অধিক সংখ্যক দরুদ ও সালাম পেশ, নফল নামাজ, কোরআন মজিদ তেলাওয়াত, আশুরা এবং অন্যদিনেও রোজা পালন, হাদিস শরিফ অধ্যয়ন, দান-সাদকাহ ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে এ মাসে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভ করা যায়। আর কারবালার নির্মম ঘটনা দ্বারা ইসলামের জন্য আত্মত্যাগের দীক্ষা নেওয়া যায়। অন্যায়কে প্রতিহত করে সত্যকে আঁকড়ে থাকার শিক্ষাও আমরা গ্রহণ করতে পারি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা লাভ করার এবং তাঁর প্রিয় হাবিব মোহাম্মদ (সা.)-কে অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন, আমীন।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads