• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হজরত মোহাম্মদ (সা.)

  • প্রকাশিত ০৮ নভেম্বর ২০১৯

মোহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী

 

 

 

বিশ্বজগতের মহান সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের জীবনকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রসুল প্রেরণ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম নবী হজরত আদম (আ.), আর সর্বশেষ নবী বা রসুল হলেন মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) শুধু সর্বশেষ নবীই নন, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রসুলও। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে সর্বোত্তম চরিত্রে অধিষ্ঠিত করেছেন। মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা তাঁর দীনকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং সর্বকালের সব মানুষের জন্য তা একমাত্র দীন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ দীন অনুসরণের মাধ্যমেই মানবজাতি ইহজাগতিক ও পারলৌকিক শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তি পেতে পারে।

সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল হিসেবে আল্লাহতায়ালা মহানবী (সা.)-কে সমগ্র মানবজাতির সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রসুলের জীবনে জীবনে রয়েছে সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ।’ (সুরা আল-আহযাব, আয়াত নং-২১)।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মনোনীত একমাত্র দীন ইসলাম অনুসরণের একমাত্র মাপকাঠি হলো মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)। তাঁকে যথাযথরূপে অনুসরণ করলেই ইসলামের প্রকৃত অনুসরণ করা হয়। তাই মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ সম্যকরূপে অবহিত হওয়া আমাদের প্রত্যেকের একান্ত কর্তব্য।

মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ যাতে মানবজাতিকে সর্বদা অনুপ্রাণিত করতে পারে সে জন্য আল্লাহতায়ালা তাঁকে নিখুঁত মানবীয় চরিত্রে বিভূষিত করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আমরা আপনাকে সাক্ষ্য ও সুসংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শনকারী এবং আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁর দিকে আহ্বানকারী রূপে এবং একটি উজ্জ্বল আলোক-শিক্ষা হিসেবে প্রেরণ করেছি। (সুরা আল-আহযাব, আয়াত নং- ৪৫-৪৬)। পবিত্র কোরআনুল কারিমের অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালাই সে সত্তা, যিনি তাঁর রসুলকে হিদায়াত এবং সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি এ সত্য দীনকে (জীবনবীধান) সকল দীনের ওপর চূড়ান্তভাবে বিজয়ী করতে পারেন।’ (সুরা আল-ফাতাহ, আয়াত নং-২৮)।

মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর চরিত্র ছিল অতুলনীয়। নবুয়ত লাভের পর নবুয়তের গুরুদায়িত্ব পালনে মহানবী (সা.) যখন নানাভাবে পেরেশানি বোধ করতেন, তখন তাঁর সহধর্মিণী খাদিজা (রা.) তাঁকে সর্বপ্রকার সান্ত্বনা ও উৎসাহ প্রদান করে বলতেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে আপনি কখনো বঞ্চিত হবেন না, কারণ আপনি পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করে থাকেন, দরিদ্র-অসহায় ব্যক্তিদের আপনি সাহায্য করেন, অতিথি-মেহমানদের আপনি উদারভাবে আপ্যায়িত করেন এবং আপনি সর্বদা ন্যায়ের পক্ষ সমর্থন করেন ও মজলুমের সহায়তা করেন।’

মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু তালিবের পুত্র হজরত আলী (রা.) শৈশবকাল থেকে মহানবী (সা.)-এর কাছে প্রতিপালিত হয়েছেন। কিশোরদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। মহানবী (সা.) সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মহানবী (সা.) ছিলেন অতিশয় উদার, মহানুভব ও দয়ার্দ্রচিত্ত। সর্বাবস্থায় তাঁর হূদয়ের কোমলতা ও দয়ালু স্বভাবই প্রতিভাত হতো, কঠোরতা তিনি পরিহার করে চলতেন। তাঁর মুখ দিয়ে কখনো খারাপ ও অশ্রাব্য বাক্য নির্গত হতো না। তিনি কখনো অন্যের দোষত্রুটি অন্বেষণ করতেন না। যদি এমন কোনো অনুরোধ তাঁর কাছে পেশ করা হতো, যা গ্রহণযোগ্য নয়, তা হলে তিনি যেমন তা অনুমোদন করতেন না, আবার সরাসরি তা নাকচও করে দিতেন না। যাঁরা তাঁকে জানতেন, তাঁরা সহজেই এর অর্থ অনুধাবন করতে পারতেন। তিনি এটা এ জন্য করতেন যেন অন্যের অনুভূতিতে এতটুকু আঘাত না লাগে অথচ অনুমোদনযোগ্য নয় এমন কাজ থেকেও সে নিবৃত্ত হয়।’

 

হজরত আলী (রা.) আরো বলেন, ‘তিনি ছিলেন অতিশয় পরোপকারী মহানুভব ব্যক্তি, কঠোরভাবে সত্যবাদী ও দয়ার্দ্রচিত্ত। তাঁর সাহচর্যে আসার সৌভাগ্য যাঁরা অর্জন করেছেন তাঁরাই হয়েছেন মুগ্ধ ও আনন্দিত। যে কেউ তাঁকে দেখেছে, প্রথম দর্শনেই তাঁর সৌম্যকান্তি তাঁকে আকর্ষণ করেছে এবং পরিচয় ঘনিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে তিনি তাঁকে মহব্বত করতে শুরু করেছেন।’

মহানবী (সা.)-এর চরিত্র মাধুর্য ছিল অসাধারণ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে মানবজাতির সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাই একাধারে তিনি ছিলেন সব মানবীয় গুণের আধার এবং মানবীয় সব দোষত্রুটির ঊর্ধ্বে। তাঁর সব কাজ, কথা, আচরণ ও উপদেশ সমগ্র মানবজাতির জন্য অতুলনীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ অর্থাৎ মানবজাতির জন্য পরম রহমত বলে আখ্যায়িত করেছেন। অতএব এ মহান ব্যক্তির জীবনাদর্শ জানা, বোঝা ও তা অনুসরণ করা আমাদের সবার জন্য কর্তব্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন!

 

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads