• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

নবীজি (সা.)-এর শান ও মান

  • প্রকাশিত ০৮ নভেম্বর ২০১৯

মো. এহছানুল হক মোজাদ্দেদী

 

 

মহান আল্লাহর যত সৃষ্টি আছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে মর্যাদার সৃষ্টি হলেন তাঁর পেয়ারা হাবিব আমাদের প্রাণের আকা তাজেদারে মাদিনা হজরত মোহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)। তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবেহ সাদিকের সময় পবিত্র মক্কানগরীতে এ ধরার বুকে আগমন করেছেন। তিনি এসেছেন রাহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে। এ আগমনে বিশ্বের বুকে উদযাপিত হয় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। তার ওপরই নাজিল হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন মজিদ। যদিও আগমন তার সব নবীর পরে, কিন্তু তার নবুয়ত সবার আগে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন ইয়া রসুলাল্লাহ! আপনার জন্য নবুয়ত কখন হতে নির্ধারণ করা হয়েছে? তিনি বললেন, আদম (আ.)-এর শরীর ও প্রাণ যখন ভিন্ন স্থানে ছিল তখনো আমি নবী ছিলাম। (তিরমিজি)। তার মর্যাদা সম্পর্কে আমরা যতই বলি, যতই লিখি, যতই শুনি তা কখনই শেষ হবে না, পরিপূর্ণ হবে না। কবি বলেন-

খোদা কি আজমত কিয়া হ্যায়, মোহাম্মাদ মোস্তফা জানে

মাকামে মোস্তফা কিয়া হ্যায়, মোহাম্মাদ কা খোদা জানে।’

অর্থাৎ, ‘মহান আল্লাহর বড়ত্ব-মহত্ত্ব শুধু মোহাম্মদই (সা.) ভালো জানেন।

আর মোহাম্মদ (সা.)-এর শান-মানও আল্লাহ তায়ালাই ভালো বোঝেন।’

আমাদের মতো স্বল্প জ্ঞানের মানুষের পক্ষে প্রিয় নবীজি হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রকৃত শান-মান বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আর কতটুকুই বা আমরা বলব, তা মূলত মহাসমুদ্রের এক বিন্দু পানির চেয়ে অনেক কমই বলা হবে। তাইতো শেখ সাদি (রহ.) বলেছেন, ‘বাদ আজ খোদা বুজুর্গ, তুই কিচ্ছা মুখতাছার’। অর্থাৎ, ‘হে সরকারে কায়েনাত, আপনার মর্যাদা আর কতটুকুই বলতে পারব, সংক্ষেপে এতটুকই বললাম, আল্লাহর পরেই আপনার স্থান।’

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত- রসুল (সা.) বলেছেন, ‘একদিন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) এসে বললেন, ‘হে মোহাম্মাদ (সা.)! পূর্ব থেকে পশ্চিম, সমগ্র ভূখণ্ড আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি, কিন্তু আপনার মতো মর্যাদাসম্পন্ন আর কাউকে পাইনি। আপনার সম্মানে আপনার বংশ হাশিমকে এত মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে, হাশিম বংশের পিতার চেয়ে কোনো মর্যাদামণ্ডিত পিতা আমি পৃথিবীর বুকে পাইনি।’ (মাদারিজুন নবুওয়াত)। একদিন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) প্রিয়নবী (সা.)-এর শান ও মান বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা অন্য সব নবী (আ.) থেকে হুজুর পাক (সা.)-কে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।’ একজন প্রশ্ন করল, ‘কীভাবে, ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিন।’। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, ‘অন্যসব নবী (আ.) সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমি কোনো রসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাছাড়া প্রেরণ করিনি।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪)। আর হুজুর (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, আপনাকে সব মানুষ ও জাতির জন্যই রসুল করে পাঠিয়েছি।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২৮)।

রসুল (সা.)-এর শান-মান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে মোহাম্মদ (সা.) আপনি বলুন, (দুনিয়ার মানুষ) তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমি নবীকে অনুসরণ করে চল। তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহগুলো মাফ করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাকারী ও পরম দয়াময়।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে এবং আমাদের জীবনকে সুন্দর করে নিতে চাইলে প্রিয়নবী (সা.)-এর আনুগত্য-অনুসরণ এবং ভালোবাসা একান্তই অপরিহার্য।

নবী (সা.)-এর আনুগত্য করতে গিয়ে, তার সুন্নাহর পথে চলতে গিয়ে কোনো রকম বেয়াদবি যেন প্রকাশ না হয়, সে সম্পর্কে আল্লাহপাক কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, হে বিশ্বাসী বান্দাগণ! তোমাদের কণ্ঠস্বর যেন আমার হাবিবের পবিত্র কণ্ঠস্বরের উপরে না ওঠে। তোমরা একে অপরের সঙ্গে যেভাবে কথা বল, আমার বন্ধুর সঙ্গেও সেভাবে কথা বল না। যদি এমনটি কর, তবে তোমাদের আমলগুলো বরবাদ হয়ে যাবে তোমরা টেরও পাবে না।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ২)। অন্য আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে মোহাম্মাদ (সা.) তোমার প্রভুর কসম! ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে আপনাকে ন্যায়বিচারক না মানবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৬৫)।

রসুল (সা.)-এর শান-মান সম্পর্কে আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই! আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা নবীজির ওপর সালাত পাঠায়। অতএব হে মুমিনগণ, তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত সালাম পাঠাও।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৫)। সেই নবীর দরূদ বেশি পড়ে তার সুন্নাত অনুযায়ী আমাদের জীবন সাজাতে হবে। তাঁর নামেই মৃত্যুর পর আমাদের কবরে রাখা হবে। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা মৃত ব্যক্তিদের কবরে রাখবে তখন সবাই বলবে বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রসুলিল্লাহ (সা.)। (মুসনাদে আহমাদ)। মহান আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে প্রিয় নবী (সা.)-এর শান-মান জানার ও বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : গবেষক ও টিভির ইসলামী উপস্থাপক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads