• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

দুর্নীতি দমনে ইসলামের নির্দেশনা

  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর ২০১৯

মুস্তাকিম আল মুনতাজ

 

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে-অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে পাপ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : ১৮৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা একে- অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না। শুধু তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা কোরো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।’ (সুরা : নিসা : ২৯)

আর হাদিস শরিফে হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাক। কেননা জুলুম কেয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’ (বুখারি)

নীতিবিরুদ্ধ বা অন্যায়ভাবে কোনো সম্পদ আত্মসাৎ করা বা কোনো কাজ করাকে দুর্নীতি বলে। কেউ কেউ বলেন, দুর্নীতি হলো অসততা, অবৈধ আচরণ, বিশেষ ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে আসীন ব্যক্তিদের আইনবহির্ভূত আচরণ, ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ইত্যাদি।

সাধারণত ঘুষ, বলপ্রয়োগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব খাটিয়ে এবং ব্যক্তিবিশেষকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা অর্জনের নাম দুর্নীতি।

আর এ দুর্নীতি বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন—

নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি

অর্থাৎ যেকোনো কাজে যোগ্য লোককে নিয়োগ না দিয়ে অযোগ্য লোককে নিজের আত্মীয় হওয়ার কারণে নিয়োগ দেওয়া। আর এমন কাজের বিষয়ে হাদিস শরিফে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘উপযুক্ত ব্যক্তিকে রেখে যদি কেউ তার আত্মীয়স্বজন থেকে অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো কাজে নিয়োগ দেয়, তাহলে সে যেন আল্লাহ ও তার রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং মুমিনদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করল।’ এ বিষয়ে হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘যখন অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তখন তোমরা কেয়ামতের অপেক্ষা করো।’ (বুখারি)।

ঘুষ প্রদান

অবৈধ পন্থায় কোনো কাজ করে দেওয়ার জন্য ঘুষ প্রদান করা, যাতে ওই ব্যক্তির মাধ্যমে ঘুষ প্রদানকারী ব্যক্তির কাজ হাসিল হয়ে যায় এবং সে এর মাধ্যমে সহজেই ফায়দা হাসিল করতে পারে। আর এ দুই ব্যক্তি সম্পর্কে হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ঘুষ গ্রহণকারী ও প্রদানকারী উভয়ের ওপর আল্লাহর লানত।’ শুধু তা-ই নয়, ঘুষ প্রদান ও তা গ্রহণ করার পরিণাম সম্পর্কে হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ঘুষ গ্রহণকারী ও প্রদানকারী উভয়ই জাহান্নামি। হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, প্রত্যেক জাতি যারাই ঘুষ আদানপ্রদান করে, তারা ভীতিতে আক্রান্ত হয়।’ এ বিষয়ে হজরত সাওবান (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুষ গ্রহণ ও প্রদানকারী এবং উভয়ের মাঝে মধ্যস্থতাকারীকে অভিশাপ দিয়েছেন।’ (তিরমিজি)।

ক্ষমতার অপব্যবহার

ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে, জোরপূর্বক কোনো অবৈধ কাজ করা। আর এ সম্পর্কে হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে লোক কোনো বিষয়ে মুসলমানদের ওপর দায়িত্ব নিল অতঃপর তাদের ওপর কাউকে স্বজনপ্রীতিবশত ক্ষমতা দিল তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। তার কাছ থেকে কোনো নেক কাজও গ্রহণ করা হবে না। এমনকি তাকে জাহান্নামে দেওয়া হবে।’ হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত; হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যদি কেউ আল্লাহর আইনের বিপরীত অবৈধ কোনো কাজ করে, তাহলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ সরকারি সম্পদ দখল করা অন্যায়ভাবে সরকারের সম্পদ ভোগ করা। এটি কোনো ব্যক্তিমালিকানা নয়, বরং সবার অধিকার। তাই যে এ মাল ভোগ করল, সে সবার অধিকার নষ্ট করল। তাই এটি মহাপাপ। এতে দখলকারী যেমন— হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাফায়াত পাবে না, তেমনি সে হবে জাহান্নামি।

উল্লিখিত এ কয়টি কাজের মধ্যেই দুর্নীতি সীমাবদ্ধ নয়। এখানে শুধু কয়েকটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতির বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে যা সমাজে চলতে গিয়ে এমন বহুবিদ দুর্নীতির সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। তাই আসুন! নিজে দুর্নীতি করা থেকে বেঁচে থাকি এবং অন্যকেও দুর্নীতি না করার জন্য উৎসাহিত করি।

মহান আল্লাহতায়ালা সবাইকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব বিষয় থেকে পরিত্রাণ করার জন্য বলেছেন, তা থেকে বেঁচে থাকার এবং তাদের দেখানো পথে জীবনযাপন পরিচালনা করার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads