• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

শত্রুর জন্য ভালোবাসা

  • সৈয়দা রাকীবা ঐশী
  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর ২০১৯

বাস্তবতা হচ্ছে, শত্রুকে কেউ ক্ষমা করতে চায় না। সবসময় প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। প্রত্যেক পেশায় ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অবস্থানের ধরন অনুযায়ী কমবেশি প্রতিপক্ষ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে। সহজ ভাষায় প্রতিপক্ষ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে শত্রু মনে করা হয়। রাস্তাঘাটে, হাটবাজারে ও অফিস-আদালতে শত্রু সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হয়। কারণ শত্রু দ্বারা যেকোনো সময় শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি সংঘটিত হতে পারে। শত্রুর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার লক্ষ্যে মানুষ কোর্ট-কাচারি, চেয়ারম্যান-মেম্বার, ফকির-দরবেশ ও কবিরাজের কাছে দৌড়াদৌড়ি করে। কিন্তু কোরআনে শত্রুর শত্রুতা কমাতে তার সঙ্গে ভালো আচরণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ যদি তোমার সঙ্গে অন্যায় ব্যবহার করে তুমি সদ্ব্যবহার দ্বারা তার প্রতিশোধ নাও, তা হলে যার সঙ্গে তোমার শত্রুতা আছে সে তোমার পরম বন্ধু হবে’। (মুমিনুন : ৯৬)।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মার্জনা করে ও সংশোধিত হয় তবে আল্লাহর ওপরই তার প্রতিদান রয়েছে’। (শুরা : ৪০)। আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের প্রতি আশীর্বাদ করো, নিশ্চয় তোমার আশীর্বাদ তাদের জন্য শান্তিপ্রদ’। (তাওবা : ১০৩)। ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে দোষারোপ করিও না, কাহারো দোষ অন্বেষণ করিও না। তোমরা গুপ্তচর হইও না এবং একজনের অনুপস্থিতিতে অন্যজন দুর্নাম করিও না’। (হুজরাত : ১১-১২)

শত্রুর সঙ্গে ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) আমাদের আদর্শ। তার বিশ্বাসের কারণে তিনি প্রচণ্ড প্রতিকূলতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এমনকি শত্রুরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিল এবং তাকে শহীদ করার চেষ্টাও করেছিল, কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের শত্রুতার জবাব দিয়েছিলেন দয়া ও সৌন্দর্যের সঙ্গে। শত্রুদের জন্য তিনি সব সময় প্রার্থনা করতেন। তিনি কামনা করতেন, যেন তারাও আল্লাহর হেদায়েত অর্জন করতে পারে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত বা অভিযুক্ত হোক এটি তিনি কখনোই চাইতেন না। কারণ তার লক্ষ্য ছিল ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতেই ইসলামের মাধ্যমে সব মানুষের কল্যাণ সাধনের।

একবার রাসুল (সা.)-এর সাহাবারা তার শত্রুদের দ্বারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা রাসুল (সা.)-এর কাছে আবেদন জানান, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ কিন্তু রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন, ‘আমি অভিশাপ দেওয়ার জন্য আসিনি, বরং আমি এসেছি ক্ষমা প্রার্থনার জন্য।’ (সহিহ মুসলিম) অপর একসময় সাহাবারা রাসুল (সা.)-এর বিরোধিতাকারী দাউস নামের এক গোত্রের ধ্বংস কামনা করে বলছিলেন, ‘আল্লাহ যেন দাউস গোত্রকে ধ্বংস করে ছাড়েন।’ কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সা.) দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! দাউস গোত্রকে হেদায়েতের পথ দেখাও এবং আমার কাছে নিয়ে আসো।’ (বুখারি)

প্রিয় নবী (সা.) প্রায়ই দোয়া করতেন, ‘হে আমার মালিক! আমার লোকদের ক্ষমা কর। তারা জানে না যে, তারা কী করছে।’ বদর যুদ্ধের একজন বন্দি আবু আজিজ ইবনে উমায়ের থেকে জানা যায়, তিনি যখন বদর যুদ্ধে বন্দি হয়ে এসেছিলেন, তখন মদিনার নাগরিকরা নিজে না খেয়ে তাদের জন্য রুটির ব্যবস্থা করেছিলেন। এই আচরণই তাকে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।

প্রকৃতপক্ষে ইসলামের ইতিহাস হচ্ছে দয়া, ক্ষমা এবং পরিত্রাণ প্রদানের। রাসুল (সা.) দীর্ঘ ১৩ বছর মক্কায় শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের প্রচার করেছিলেন। তিনি তখনই মদিনায় হিজরত করেন যখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ প্রতিকূলে চলে গিয়েছিল। এরপর ক্রমাগত ১০ বছর মদিনায় মুসলমানরা মক্কার আক্রমণ প্রতিহত করে একতা ও বিশ্বাসের বলে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (সা.) সেই শত্রুদের ওপর ক্ষমতার অধিকারী হন, যারা দীর্ঘ ২৩ বছর বিভিন্নভাবে তাকে কষ্ট দিয়েছে, এমনকি তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে। রাসুল (সা.) ইচ্ছা করলে সব ধরনের প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। মক্কা বিজয়ের দিন কোনো ধরনের প্রতিশোধ না নিয়েই রাসুল (সা.) তার শত্রুদের মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এটিই শত্রুর সঙ্গে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান। সব শেষে বলি, ধৈর্য, ক্ষমা এবং দয়ার মধ্য দিয়েই শত্রুকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে হবে।

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads