• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ওয়াদা ভঙ্গকারীকে আল্লাহ অপছন্দ করেন

  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর ২০১৯

আয়েশা মালিহা

 

অনেক সময় কত সহজেই আমরা কাউকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকি। হাসতে হাসতেও অনেক কিছু দেওয়ার বা কাজ করে দেওয়ার কথা দিই। কিন্তু সব কথা রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়! আবার আমরা অনেক সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা ভুলেও যাই। আবার কেউ কেউ কার্যসিদ্ধির জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেও কাউকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। তারা মানুষকে নিজের আখের গোছানোর সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে! যদিও কৃতকর্মের ফল ভোগ সময়ের ব্যবধানে হলেও তাদের জন্য অবধারিত। কিন্তু আমরা কি জানি— আমাদের এই রাখতে না পারা কথাগুলো ওয়াদা ভঙ্গের শামিল। আমাদের জেনেশুনে মানুষের সঙ্গে ওয়াদা করা উচিত। পবিত্র কোরআনে ওয়াদার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করবে।’ (আল মায়িদা : ১)।

আমরা যখন আমাদের দেওয়া কোনো ওয়াদা রক্ষা করতে পারি না বা ভুলে যাই, তখন অপর পক্ষ বা ব্যক্তি যাকে আমরা ওয়াদা দিই তার মনে কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক। কেউ কেউ ওয়াদা খেলাফকারীকে বেঈমানও ভেবে থাকেন। ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীকে ধীরে ধীরে মানুষ অবিশ্বাস করে এবং অপছন্দ করতে থাকে। তাদের প্রতি মন থেকে সম্মান আসে না, বরং ঘৃণা আসে। ওয়াদা ভঙ্গকারীকে আল্লাহ নিজেও অপছন্দ করেন। তিনি পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা যদি কোনো সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে (চুক্তি ভঙ্গজনিত) বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা করো, তাহলে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথ (ঘোষণা দিয়ে) বাতিল করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না।’ (আনফাল : ৫৮)।

অনেক সময় আমরা আল্লাহর সঙ্গেও ওয়াদা দিয়ে থাকি। যেমন আল্লাহ আমাকে যদি এটা দেন, তবে আমরা তার বিনিময়ে এই ভালো কাজ বা দান-খয়রাত করব। কিন্তু আমাদের মনের আশা পূরণ হওয়ার পর আমরা আল্লাহকে দেওয়া ওয়াদাও ভুলে যাই! আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুরা তাওবায় বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা বলে যে, আল্লাহপাক যদি আমাকে দেন, আমি অবশ্যই ছদকাহ (দান-খয়রাত) করব এবং প্রকৃত মুমিন হব। অতঃপর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার কৃপায় দান করল। সে তখন কৃপণ হয়ে গেল এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল।’

অনেকের কাছে কথা দেওয়া বা ওয়াদা দেওয়া ঠুনকো হয়ে ওঠে। সে নিজের দেওয়া ওয়াদাকে গুরুত্ব না দিয়ে বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু ওয়াদার ব্যাপারে ইসলাম অন্যমনস্কতা সমর্থন করে না। ইসলামে ওয়াদাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে যে কাউকে দেওয়া যে কোনো প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা রক্ষা করার জন্য ইসলাম জোরালো তাগিদ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ওয়াদা রক্ষা করে না; দিন ইসলামে তার কোনো ঠাঁই নেই।’

সুরা নাহলের ৯১ ও ৯২ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘তোমরা যখনই আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করবে, তখনই তা পূর্ণ করো, তোমরা আল্লাহকে সাক্ষ্য রেখে শপথ দৃঢ় করার পর ভঙ্গ করো না। তোমরা যা করো আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন।’

ওয়াদা পালন বা রক্ষা করা অনেক সময় আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা নানা উছিলায় তখন তা থেকে এড়িয়ে বাঁচার চেষ্টা করি। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিশ্রুতি করা ঋণস্বরূপ। তিনি আরো বলেছেন, ওয়াদা বা প্রতিজ্ঞা পূরণ করো; এ সম্পর্কে রোজ হাশরে প্রশ্ন করা হবে। কাফের হোক কিংবা মুসলমান— উভয় ক্ষেত্রেই ওয়াদা পালন করা অবশ্য কর্তব্য। সমাজে আর দেশে বেশিরভাগ অশান্তি বা অপরাধের মূলে হচ্ছে এই কথা না রাখা বা ওয়াদা ভঙ্গ করা। তাই আসুন, ওয়াদা রক্ষা করে সমাজ আর দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করি।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads