• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

ইসলামে বাবার মর্যাদা

  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯

রোকাইয়া শশী

 

 

বাবা-মা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এ পরম সত্য কথা। পৃথিবীতে সন্তানের সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার কথা শুধু বাবা-মা-ই ভেবে থাকেন। এ জন্যই পৃথিবীর সব ধর্মেই বাবা-মাকে সর্বাধিক সম্মান দান করা হয়েছে। বাবা পরিবারের চালিকাশক্তির প্রধান। বাবা সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ বন্ধু ও উত্তম পথপ্রদর্শক। মহান মাবুদের ইচ্ছায় সন্তানের জীবন শুরু হয় একজন বাবার মাধ্যমে। সন্তানের জীবনে বাবার অবদান অনস্বীকার্য। কোনো সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিশোধ করতে পারে না। কঠোর শাসন, কোমল ভালোবাসা আর ত্যাগে অগ্রগামী যিনি, তিনিই তো বাবা। বাবা যে কোনো ধরনের দুঃখ-কষ্ট অকাতরে সহ্য করেন। সব সময় চেষ্টা করেন সামান্য কষ্টও যেন তার সন্তানকে স্পর্শ করতে না পারে। সন্তানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সারা জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তারপরও বাবার সঙ্গে আমাদের সমাজের অনেকেই খারাপ আচরণ করে থাকেন। এটা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ; হাদিস বিরুদ্ধ কাজ; কোরআন বিরুদ্ধ কাজ। শরিয়তে ইসলামে এ কাজের প্রতি স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

পবিত্র কোরআনুল কারিমের ১৫ জায়গায় বাবা-মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবার মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্ট হন; আবার বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’ সে কারণেই ইসলাম বাবা-মার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করাকে বড় গোনাহের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন, সময়মতো নামাজ পড়া। আমি বললাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (বোখারি, মুসলিম)।

এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, আল্লাহর তিনটি অতি প্রিয় কাজের মধ্যে একটি হলো বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। অন্য আরেক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল যোগ হতে থাকে— ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. কল্যাণময় শিক্ষা ও ৩. এমন সৎ সন্তান যে মৃত পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম)।

এই হাদিসে ‘সদকায়ে জারিয়া’ বলতে বোঝানো হয়েছে এমন জনসেবার কাজ, যা দ্বারা বছরের পর বছর মানুষ উপকৃত হয়। তা দ্বারা যতদিন মানুষ উপকৃত হবে, ততদিন এই সেবাদানকারীর আমলনামায় নেক আমল বা সওয়াব যোগ হবে। আর ‘কল্যাণময় শিক্ষা’ বলতে এমন জ্ঞান ও শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, যার ফলে মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম আল্লাহর পথে চলতে থাকে। আর সৎ সন্তানের বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট। হাদিসে আছে, মৃত ব্যক্তির জন্য সৎ সন্তানের দোয়া অনেক উপকারী।

জন্মদাতা পিতাকে আমরা বাবা বা আব্বা বলে ডাকি। সম্বোধন হিসেবে এটা নতুন নয়। পিতা কিংবা বাবার সমার্থবোধক অনেক শব্দ সমাজে প্রচলিত। তবে অঞ্চল ও ভাষাভেদে এর হেরফের অস্বাভাবিক কিছু নয়। ইসলাম জন্ম-পরিচয়ের সূত্র প্রকাশের সময় আপন পিতা ছাড়া অন্যের দিকে নিজের পরিচয়কে সম্পর্কযুক্ত করতে কঠিনভাবে নিষেধ করেছে।

এমনকি ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, ভক্তি-শ্রদ্ধা, সম্মান প্রদর্শনসহ অন্য যে কোনো কারণ দেখিয়েই হোক না কেন, জন্মদাতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে ডাকতে বা পরিচয় দিতে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামের এই অবস্থান থেকেই বাবার প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট।

এভাবেই ইসলাম পিতৃত্বের পরিচয়কে সুসংহত করে পিতার মর্যাদাকে উচ্চাসনে বসিয়েছে। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা। আর যেসব বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছেন, তাদের জন্য রইল অনেক দোয়া।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads