• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

সন্তানের প্রতি বাবা-মার কর্তব্য

  • আয়েশা মালিহা
  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯

সন্তানের যেমন বাবা-মার প্রতি কর্তব্য আছে, তেমনি বাবা-মারও সন্তানের প্রতি কর্তব্য আছে। বাবা-মার প্রতি সন্তানের কর্তব্যগুলো শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয় সন্তানের প্রতি বাবা-মার কর্তব্য। এগুলো সন্তানের অধিকার। সন্তান জন্মের আগে থেকেই তার অধিকার শুরু হয়। সন্তানের রয়েছে আদর্শ, দিনদার মায়ের কোলে জন্মগ্রহণের অধিকার। সন্তান ছেলে বা মেয়ে যে-ই হোক জন্মের পর তার এক কানে আজান ও অন্য কানে ইকামতের ধ্বনি শোনানো বাবা-মার কর্তব্য। বাড়ির উঠানে নয়, সন্তানের কানেই দিতে হবে আজান।

হজরত আবু রাফে (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘হজরত হাসান (রা.)-এর জন্মের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছিলেন।’ (তিরমিজি)। সন্তানের প্রতি বাবা-মার অন্যতম দায়িত্ব হলো তার জন্য সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা। হাদিসে জন্মের সপ্তম দিনে নাম রাখার কথা বলা হয়েছে। নামের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো, নামের সৌন্দর্য ও অর্থ। মহানবী (সা.) আল্লাহর দাসত্ববোধক নাম ও নবীদের নাম পছন্দ করতেন। মায়ের ওপর দায়িত্ব— সন্তানকে দুই বছর বুকের দুধ পান করানো। বাবা-মার দায়িত্ব হলো— জন্মের সপ্তম দিনে নবজাতকের দেহের ময়লা পরিষ্কার করা, চুল কাটা, চুলের ওজনের সমপরিমাণ রুপা দান এবং সন্তান লাভের শুকরিয়া হিসেবে নবজাতকের পক্ষ থেকে একটি মেষ বা ছাগল আকিকা হিসেবে জবাই করা।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত হাসান (রা.)-এর পক্ষ থেকে একটি ও হজরত হুসাইন (রা.)-এর পক্ষ থেকে একটি মেষ আকিকা দেন।’ (তিরমিজি)।

সন্তান ছেলে হলে যথাসময়ে তার খতনা করাতে হবে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। খতনা উপলক্ষে অনুষ্ঠানাদি করার কোনো অনুমতি হাদিসে দেখা যায় না। সন্তানকে দৈহিক, আত্মিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব বাবা-মার।

আকাশ, চন্দ্র-সূর্য, বৃষ্টিতে যে মহান শক্তির হাত রয়েছে তা শুনিয়ে সুকৌশলে তিলে তিলে তার কোমল হূদয়ে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা-বিশ্বাস, ভালোবাসা ও ভীতির বীজ বপন করা একান্ত প্রয়োজন। সন্তান যখন কথাবার্তা বলতে শেখে তখনই তাকে কলমা শিক্ষা দিতে হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দ্বারা কথা শুরু করাও এবং মৃত্যুর সময়ও এর তালকিন দাও।’ (বায়হাকি)

জ্ঞান ছাড়া মানবজীবন পরিপূর্ণরূপে বিকশিত হতে পারে না বলেই ইসলাম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর জ্ঞানার্জন ফরজ করেছে। আমরা অনেক সময় ব্যক্তিগত রাগ বা জাগতিক ক্ষতির কারণে সন্তানদের শাসন করি অথচ ধর্মীয় ও নৈতিক আচরণের ত্রুটিগুলোর ব্যাপারে উদাসীন থাকি। কিন্তু মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা এর বিপরীত আচরণ করেছেন। জাগতিক বিষয়াদির ক্ষতি, কষ্ট বা ব্যক্তিগত রাগ সহ্য করলেও দিনি বিষয়ের অবহেলায় কঠোর শাসন করেছেন।

মনে রাখা চাই, আপনিই আপনার সন্তানের প্রথম আদর্শ। সন্তানের কৃতিত্বে যেমন আপনি আনন্দিত হন তেমনি সন্তানের পদস্খলনের দায়ভার আপনাকেই নিতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে কোনো ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হলে তারা বলবে কীভাবে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পেল? তখন তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমাপ্রার্থনার ফলে।’ (ইবনে মাজাহ)।

 

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads