• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় ইসলাম

  • মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধির এক উজ্জ্বল নিদর্শন হলো বিজ্ঞান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা পদ্ধতিতে কোনো বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে লব্ধ সুশৃঙ্খল ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জ্ঞান এবং এ জ্ঞানের বাস্তবতার নাম বিজ্ঞান। একটি বাস্তবসম্মত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছে।

মহানবি হজরত মোহাম্মদ (সা.) জ্ঞানালোক ও সভ্যতার যে বিরাট প্রাসাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তা পৃথিবীকে অলংকৃত করে আসছে তাঁর সময়কাল থেকেই। পবিত্র কোরআন মজিদে মুসলমানদেরকে বলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো।’ (সুরা ত্বা-হা, আয়াত : ১১৪)। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যে জ্ঞানার্জনের পথে নিজেকে নিয়োজিত করে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার জান্নাতের পথ সুগম করেন।’ (সহিহ মুসলিম)। মহানবী (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)।

পবিত্র কোরআনুল কারিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক অফুরন্ত ভান্ডার। বিজ্ঞানের যে কোনো শাখার সুস্পষ্ট নিদর্শন আল-কোরআন থেকে লাভ করা সম্ভব। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘শপথ বিজ্ঞানময় কোরআনের।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ২)। ‘এইগুলো বিজ্ঞানময় কিতাবের আয়াত।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ২)। ‘আকাশ ও পৃথিবীতে এমন কোনো গোপন রহস্য নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে উল্লেখ নেই।’ (সুরা আন-নামল, আয়াত নং-৭৫)। আল-কোরআনে সালাত, সাওম, হজ, জাকাত, ইবাদত, বন্দেগি, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, আচার-আচরণ, রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবারনীতি, যুদ্ধনীতি ইত্যাদি বিষয়ে আয়াত রয়েছে প্রায় ১৫০টি। পক্ষান্তরে এই মহাবিশ্বের সৃষ্ট বস্তুর যে অপূর্ব সমাহার, তার ওপর চিন্তা-গবেষণা ও জ্ঞান চর্চা করা সম্পর্কে আয়াত রয়েছে প্রায় ৭৫৬টি।

মহান আল্লাহতায়ালা সমগ্র বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক। তিনি মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা করার তাকিদ প্রদান করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টির বিষয়ে এবং বলে, হে আমাদের রব! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করোনি। সকল পবিত্রতা একমাত্র তোমারই।’ (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১৯০-১৯১)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানগুলোতে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহতায়ালা আকাশ থেকে যে পানি নাজিল করেছেন, তদ্বারা মৃত জমিনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব রকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালায় যা তারই নির্দেশের অধীনে, আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর মাঝে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত : ১৬৪)।

যারা সৃষ্টজীব সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করতে চায় না তাদের মৃত্যুর পর সাজা দেওয়ার কথা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এভাবে, ‘তারা কি প্রত্যক্ষ করেনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজ্য সম্পর্কে এবং যা কিছু সৃষ্টি করেছেন আল্লাহতায়ালা বস্তুসামগ্রী থেকে এবং এ ব্যাপারে যে, তাদের সাথে কৃত ওয়াদার সময় নিকটবর্তী হয়ে এসেছে? বস্তুত এরপর তারা কীসের ওপর ঈমান আনবে?’ (সুরা আল-আরাফ, আয়াত : ১৮৫)।

বিজ্ঞানচর্চার অসংখ্য নিদর্শন কোরআন মাজিদে বিদ্যমান রয়েছে। যেমন, আলোকবর্ষের পরিমাপ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরেশতাগণ ও রুহ আল্লাহতায়ালার দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন একদিকে, যার পরিমাণ পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।’ (সুরা আল-মাআরিজ, আয়াত : ৪)। এছাড়া সমুদ্র ও পর্বত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাছ খেতে পারো, তা থেকে বের করতে পারো পরিধেয় অলংকার। তুমি তাতে জলযানসমূহকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহতায়ালার কৃপা অন্বেষণ করো এবং যাতে তার অনুগ্রহ স্বীকার করো। আর তিনি পৃথিবীর ওপর বোঝা রেখেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদের নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরি করেছেন যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারো। আর তিনি নির্ণয়ক বহু চিহ্ন সৃষ্টি করেছেন এবং তারকা দ্বারাও মানুষ পথের নির্দেশ পায়।’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ১৪-১৬)।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মাজিদে বিভিন্নভাবে স্রষ্টা ও মহাজাগতিক সৃষ্টি সম্পর্কে অসংখ্যবার বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। মহাকাশ, সৌরমণ্ডল, গ্রহ-নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য, চাঁদের গতিশীলতা, দিন-রাত্রির পরিবর্তন, তারকারাজি ও তাদের উজ্জ্বলতা সম্পর্কে ইঙ্গিত করে সেগুলো সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই (আল্লাহতায়ালা) রাতের আঁধার ভেদ করে ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনি রাতকে তোমাদের বিশ্রামের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং তোমাদের হিসাবের জন্য তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন। এ সব কিছুই হচ্ছে মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালার নির্ধারিত বিষয়। তিনি তোমাদের জন্য অসংখ্য তারকা বানিয়ে রেখেছেন যেন তোমরা জলে-স্থলের আঁধারে পথের দিশা পেতে পারো। যে সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের পরিণাম সম্পর্কে জানে, তাদের জন্য আমি আমার নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি।’ (সুরা আল-আনআম, আয়াত : ৯৬-৯৭)। ‘চন্দ্র ও সূর্য উভয়ই নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী নিজস্ব কক্ষপথে চলছে।’ (সুরা আর-রাহমান, আয়াত : ৫)।

প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্রের নির্দিষ্ট গণ্ডি এবং আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণের কথা উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সূর্য তার জন্য নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট গণ্ডির মাঝে আবর্তন করে। এটা হচ্ছে মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহতায়ালারই সুনির্ধারিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। আর চন্দ্রের জন্য আমি বিভিন্ন কক্ষ নির্ধারণ করেছি। কক্ষ পরিভ্রমণের সময় ছোট হতে হতে তা একসময় এমন ক্ষীণ হয়ে পড়ে, যেন তা পুরনো খেজুরের একটি ডাল। সূর্যের এ ক্ষমতা নেই যে, সে চাঁদকে নাগালের মাঝে পাবে, না রাত দিনকে অতিক্রম করে চলে যেতে পারবে। মূলত এরা প্রত্যেকেই শূন্যলোকে সাঁতার কেটে চলছে।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৩৮-৪০)। ‘তিনি রাতের আবরণকে দিনের পর ছেয়ে দেন, যেন তা একে অন্যকে দ্রুত গতিতে অনুসরণ করে, তিনিই সূর্য, চন্দ্র ও তারকাসমূহ সৃষ্টি করেছেন। মূলত এর সবগুলোকেই আল্লাহতায়ালার বিধানের অধীন করে রাখা হয়েছে।’ (সুরা আল-আরাফ, আয়াত : ৫৪)।

পবিত্র কোরআন মাজিদে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা সূর্যকে তেজোদীপ্ত করে এবং চাঁদকে জ্যোতির্ময় করে বানিয়েছেন। অতঃপর তার জন্য কিছু কক্ষপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা বছরের গণনা এবং দিন-তারিখের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহতায়ালা কোনো কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি। যারা সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে জানতে চায় তাদের জন্য আল্লাহতায়ালা তার নিদর্শন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। অবশ্যই দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং আল্লাহতায়ালা আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার মাঝে মুত্তাকিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫-৬)।

পবিত্র কোরআনুল কারিমে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের নানা নিদর্শন রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি ভূ-পৃষ্ঠের দিকে দৃষ্টিপাত করে না? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের কত উদ্ভিদ উদগত করেছি। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।’ (সুরা আশ-শুয়ারা, আয়াত : ৭-৮)।

মধু ও মৌমাছি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে তার অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিলেন— পাহাড়ে, বৃক্ষে ও উঁচু চালে গৃহ নির্মাণ করো, এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ করো এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথসমূহ অনুসরণ করো। ফলে তার পেট থেকে বিভিন্ন বর্ণের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত নং-৬৮-৬৯)।

পানি থেকেই যে পৃথিবীতে প্রথম জীবনের উদ্ভব ঘটেছে এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবিশ্বাসীরা কি ভাবে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)।

পবিত্র আল-কোরআনুল কারিমে জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে এ ধরনের আরো অসংখ্য আয়াতে কারিমা রয়েছে, যেগুলোকে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে গবেষণা করে মুসলিম বিজ্ঞানীগণ বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সমর্থ হয়েছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে ক্রুসেডের মাধ্যমে মুসলমানদের কাছ থেকে পাশ্চাত্যে চলে যায়। মুসলমান বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর আকার, সৌরজগৎ ও গ্রহ-নক্ষত্রের গতি ও পরিক্রমা সম্পর্কে বহু বিচিত্র তথ্য আবিষ্কারের মাধ্যমে নভোমণ্ডলে তাদের খ্যাতি প্রতিষ্ঠা করেন। ‘মুসলমানগণই সর্বপ্রথম ইউরোপে মান-মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্র, দিক নির্ণয়ক যন্ত্র, দোলক ও অন্যান্য সাহায্যকারী যন্ত্র আবিষ্কার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছেন।’ (কে. আলী, মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস, আলী পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ১৯৭৭, পৃ. ২৩৮)। এভাবে সৃষ্টিতত্ত্ব, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিষ শাস্ত্র, পদার্থ, রসায়ন, খনিজ বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, বিদ্যুৎ, আলো, তাপ, অংকশাস্ত্র, মহাশূন্য গবেষণাসহ বিজ্ঞানের সকল উন্নতিই মুসলমানদের কোরআন মাজিদের আলোকে গবেষণার ফসল।

মুসলমানদেরকে ঢালাওভাবে বিজ্ঞানবিমুখ বলে অপপ্রচার চালানো হলেও আধুনিক বিজ্ঞানের গতি মূলত সঞ্চারিত করে যান মুসলিম বিজ্ঞানীরাই। প্রকৃতপক্ষে মুসলমানরাই ছিল সভ্যতা বিনির্মাতা, বিজ্ঞান ও প্রগতির ধারক ও বাহক। বিজ্ঞান চর্চার জন্য বাগদাদে আব্বাসীয় খলিফা মামুনুর রশীদ ‘বায়তুল হিকমাহ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিজ্ঞানের অনেক শাখারই জনক মুসলিম বিজ্ঞানীরা। জ্যোতির্বিজ্ঞানী মাশাআল্লাহ ও আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ আল-নিহাওয়ান্দি আজও শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী। মাশাআল্লাহকে ফিনিক্স লকবে অভিহিত করা হয়। তিনি গোলকের মণ্ডল, গ্রহ-নক্ষত্রের গতি-প্রকৃতি নির্ণয়ে অবদান রেখেছেন। আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ আন-নিহাওয়ান্দী জ্যোতিষ্ক মণ্ডল নিরীক্ষণ করে আল-মুস্তামান নামে নিখুঁত ছক বানান। বিজ্ঞানী আবুল হাসান দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উদ্ভাবক এবং পেন্ডুলামের দোলনের সাহায্যে সময়ের পরিমাপ স্থির করে ঘড়ির উদ্ভাবন করেন মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে ইউসুফ। অ্যালজ্যাবরা, ত্রিকোণমিতি, কেমিস্ট্রি (আল-কিমিয়া), শল্যবিদ্যা, বায়ুর গতি-প্রকৃতি নির্ণয়ক যন্ত্র ইত্যাদি সবকিছুই মুসলিম বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন। এছাড়াও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মধ্যে জাবির ইবনে হাইয়ান, যিনি রসায়নের জনক হিসেবে পরিচিত। ওমর খৈয়াম, ইবনে সিনা, আবু যায়দ আল-আনসারী, আল-খাওয়ারিজমী, ইবনে বাজ্জা, হুনায়ন ইবনে ইসহাক, আল-ফারগানী, আল-রাজী, সাবিত ইবনে দুররা, আল-বাত্তানী, আল-ফারাবী, ইবরাহিম ইবনে সিনান, আল-মাসুদী, আবুল ওয়াফা, আবুল কাশেম, আল-বিরুনী, ওমর ইবনে ওয়ারদী, ইবনে আওয়াম, কাযবীনী, আবু মা’শার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

পরিশেষে বলা যায়, পবিত্র কোরআন মাজিদে বিজ্ঞান চর্চার জন্য যেসব নিদর্শন রয়েছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে গবেষণা করেই মুসলিম বিজ্ঞানীরা নিত্যনতুন আবিষ্কার দ্বারা বিশ্বকে বিজ্ঞান রাজ্যের নবতর শোভায় সুশোভিত করেছেন। পবিত্র কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) সপ্তম আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি দেখতে পাবে না। পুনরায় তাকিয়ে দেখো, কোনো ফাটল দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি বারবার তাকিয়ে দেখো— তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে।’ (সুরা আল-মুলক, আয়াত : ৩-৪)।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা, ঢাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads