• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

থার্টি ফাস্ট নাইট

চরিত্র বিধ্বংসী উৎসব

  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

মুস্তাকিম আল মুনতাজ

 

কালের পরিবর্তনে আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ইংরেজি একটি বছর, ২০১৯ সাল। ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হবে ১ জানুয়ারি। নতুন একটি বছর। নতুন একটি সাল, ২০২০। বিগত বছরের সব গ্লানি মুছে নতুন উদ্যমে শুরু হবে আবারো পথচলা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বর্ষবরণের নামে বিভিন্ন দেশের মতো বাঙালি ঘরের মুসলমান যুবক-যুবতীরাও মেতে ওঠে বেপর্দা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা আর মাতলামির এক হারাম আনন্দে। অথচ ১ জানুয়ারি বা বর্ষবরণ উৎসবের ইতিহাস ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। বরং তা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য হারাম এবং তা পরিহার করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিলেন এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান হতে সাধারণ সংস্কৃতির ধারার মাধ্যমে প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষুবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিশিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রিকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১ জানুয়ারিতে। ইহুদিদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন গোঁড়া ইহুদিদের মতে, সেই মাসের দ্বিতীয় দিন। মোটামুটিভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর।

মধ্যযুগে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ, তারা ধারণা করত, এদিন দেবদূত গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয়, বরং সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হয়। যা আজ আমাদের কাছে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ বা ‘বর্ষবরণ’ নামে পরিচিত।

সুতরাং ইতিহাস যাচাই করলে দেখা যায়, থার্টি ফাস্ট নাইট বা বর্ষবরণ পালন করা মুসলমানদের কোনো উৎসব নয়, বরং এটি বিজাতীয় বিধর্মীদের একটি উৎসব। এতে স্পট বোঝা যাচ্ছে, থার্টি ফাস্ট নাইট পালন করার অর্থ হলো বিজাতীয় বিধর্মীদের অনুসরণ, অনুকরণ করা। অথচ ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীনব্যবস্থা। যার স্বীকৃতি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। তাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এসব বিজাতীয় বিধর্মীদের সংস্কৃতির অনুসরণ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। আর এজন্যই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসব নির্ধারণ করেছেন, ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।

মহানবী (স.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (খুশি) রয়েছে। আর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা হলো মুসলমানদের ঈদ। (বুখারি ও মুসলিম)। অন্য এক হাদিসে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুসরণ করবে, সে সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ)।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর ওপর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি শরিয়ত ও স্পষ্ট পন্থা এবং আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে তোমাদেরকে এক উম্মত বানাতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহরই দিকে তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে।’ (সূরা আল মায়িদাহ : ৪৮)।

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা ও অন্যকে বিরত থাকার ব্যপারে উদ্বুদ্ধ করা। এবং বর্ষবরণের নামে যেন কোনো ধরনের অশ্লীল কার্মকাণ্ড না ঘটে, সেজন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : আলেম ও শিক্ষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads