• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইবাদত যেন লোক দেখানো না হয়

  • আয়েশা মালিহা
  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

সমাজের লোকে ধার্মিক বলে আলাদা সম্মান করবে, কিংবা নিজেকে একটু ভিন্নভাবে লোকজনের কাছে উপস্থাপন করা যাবে-মানুষের সামনে এ উদ্দেশে নিজেকে আল্লাহভীরু, পরহেজগার রূপে প্রকাশ করাকে ইসলামের পরিভাষায় রিয়া বলে।

রিয়া অর্থ লোক দেখানো ইবাদত। ইবাদত একান্ত আল্লাহর জন্য। ইবাদত করা দেখে অন্য কেউ দেখে ভালো বলুক এরূপ মনোভাব নিয়ে ইবাদত করলে প্রকৃতপক্ষে সে ইবাদত আল্লাহর উদ্দেশে করা হয় না। এ কারণে রিয়াকে গোপন শিরক বলা হয়।

পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে রিয়ার অপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রিয়ামিশ্রিত ইবাদত কখনো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, বরং এর জন্য শাস্তি অবধারিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় প্রভুর দর্শন লাভের আশা রাখে, সে যেন নেক কাজ করে এবং তার ইবাদতে যেন অপর কাউকে শরিক না করে।’

আল্লাহতা’য়ালা আরো বলেন, ওই সব নামাজি লোকের জন্য ধ্বংস বা ওয়ায়েল দোজখ, যারা অন্যমনস্কভাবে নামাজ পড়ে এবং অন্যকে দেখায়।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যক্তি হজরত মুহম্মদ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন কাজে মুক্তি ও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে? নবী করিম (সা.) উত্তরে বললেন, তুমি আল্লাহতা’য়ালার ইবাদত করবে এবং তা মানুষকে দেখানোর ইচ্ছা করবে না। হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরো বলেন, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহতা’য়ালার দরবারে হাজিরপূর্বক বলবেন, তুমি কী প্রকার ইবাদত করেছ? সে ব্যক্তি বলবে আমি নিজের প্রাণকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবান করেছি। আমি জিহাদে যোগদান করলে কাফেররা আমাকে শহীদ করেছে।

আল্লাহতা’য়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি শুধু এই উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেছিলে যে, লোকে তোমাকে বীরযোদ্ধা বলে আখ্যায়িত করবে। হে ফেরেশতাগণ! এ ব্যক্তিকে দোজখে নিয়ে যাও। অপর এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কী প্রকারের ইবাদত করেছ? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমার ধন-সম্পদ যা কিছু ছিল আমি তা আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করেছি। আল্লাহপাক বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি শুধু এ উদ্দেশ্যে দান-খয়রাত করেছিলে যে, মানুষ তোমাকে দাতা বলে প্রশংসা করবে। অতএব এ ব্যক্তিকেও দোজখে নিক্ষেপ করো।

অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে হাজির করে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কী প্রকারের ইবাদত করেছ? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি বহু পরিশ্রম করে বিদ্যা অর্জন করেছি এবং কোরআন শরিফ পাঠ করেছি। আল্লাহতা’য়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যাবাদী, মানুষ তোমাকে আলেম বলবে এ উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করেছ। ফেরেশতাগণ! এ ব্যক্তিকেও দোজখে ফেলে দাও।

হাদিসে আরো বলা হয়েছে, ইবাদতের মধ্যে একটি ধূলিকণা পরিমাণ লোক দেখানো মনোভাব থাকলে আল্লাহতা’য়ালা ওই ইবাদত কবুল করেন না।

অন্য আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, কিয়ামতের দিন লোক দেখানো ইবাদতকারীদের এভাবে আহ্বান করা হবে, ওহে রিয়াকার, ওহে বিশ্বাসঘাতক, ওহে হতভাগা! তোমার সমস্ত নেক আমল বিনষ্ট হয়েছে। তুমি যে ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইবাদত করেছিলে, এখন তাদের কাছে তোমার পারিশ্রমিক প্রার্থনা করো।

মহানবী (সা.) বলেছেন, আমি আমার উম্মতের জন্য ছোট শিরকের ভয় যত করছি, এত ভয় অন্য কোনো বিষয়ে করি না। উপস্থিত সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ছোট শিরক কী? হুজুর (সা.) উত্তর দিলেন, তা হচ্ছে রিয়া।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads