• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ফিতনা বনাম সামাজিক শৃঙ্খলা

ফাইল ছবি

ধর্ম

ফিতনা বনাম সামাজিক শৃঙ্খলা

  • প্রকাশিত ১১ জানুয়ারি ২০২০

‘ফিতনা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয়, পরীক্ষা প্রভৃতি। অভিধানবিদ আজহারি বলেন, ‘আরবি ভাষায় ফিতনার সামগ্রিক অর্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আগুনে পুড়িয়ে সোনার আসল-নকল ও মান যাচাই প্রক্রিয়া বোঝাতে ফিতনা শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতেও এরূপ অর্থে শব্দটি ব্যবহূত হতে দেখা যায়।’ ফিতনা শব্দের আরেক অর্থ— সঠিক পথের অনুগমনে বাধা তৈরি ও তার বিরোধিতা। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, তারা যেন কোনোভাবেই আপনাকে আল্লাহর নির্দেশিত বিধান থেকে সামান্যতম বিচ্যুত না করতে পারে।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৪৯)। শিরক ও কুফর অর্থেও কোরআন মাজিদে ফিতনা শব্দটির ব্যবহার হয়েছে, যথা— ‘তোমরা তাদের সঙ্গে লড়াই করতে থাকো, যে পর্যন্ত ফিতনা (শিরক) নির্মূল না হয়ে যায়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৩)। 

কখনো ফিতনা শব্দটি পাপাচার ও কপটতা অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। ‘তোমরা নিজেরাই নিজেদের পাপাচারে জড়িয়ে রেখেছ, অপেক্ষা করছিলে আর সন্দেহ-সংশয়ে ডুবে ছিলে এবং নিজেদের অনর্থক বাসনাগুলো তোমাদের বিভ্রান্তই করে রেখেছিল।’ (সুরা হাদিদ : ১৪)। সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার অর্থেও কোরআন মজিদে ফিতনা শব্দটি এসেছে। ‘অবিশ্বাসীরা পরস্পরের বন্ধু, যদি তোমরা এমনটি (আল্লাহর হুকুম যথাযথভাবে পালন) না করো, তবে ভূপৃষ্ঠে মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।’ (সুরা আনফাল : ৭৩)। এ আয়াতের অর্থটি এমন দাঁড়াচ্ছে, বিশ্বাসী (মুমিন) কাফিরদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেও অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে না (সদ্ভাব ও সম্প্রীতি স্বতন্ত্র বিষয়), কারণ তেমনটি করা হলে সত্য-মিথ্যার ব্যবধান মুছে যাবে (ইবনে জারির, জামিউল বয়ান)। 

‘ফিতনা’র বেশির ভাগ অর্থের প্রায়োগিক জায়গা মানুষের সামষ্টিক জীবন। নৈরাজ্য থেকে বিপর্যয় পর্যন্ত উপর্যুক্ত শব্দগুলোর বিমূর্ত ভাব সমষ্টিগত জীবনেই মূর্ত বাস্তবতা হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। মানুষের কিছু পাশবিক চরিত্র, শয়তানি প্রভাব আর অমানুষিক প্রবণতা ফিতনার জন্ম দেয়। কাজেই নির্লোভ, অহিংস, পরিমিতিবোধসম্পন্ন, নিরহংকার, সংযত, সহিষ্ণু আর উদার মানুষদের দ্বারা কখনো নৈরাজ্য, অশান্তি, অন্তর্ঘাত ইত্যাকার অপকর্ম সংঘটিত হয় না। তাই ইসলাম মানবজাতির শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও মুক্তির লক্ষ্যে হিংসা, জেদ, শক্তি, ক্ষমতা বা সম্পদের অহংকার, লোভ-লালসা, অসহিষ্ণুতা ও প্রতিপক্ষকে অসদুপায়ে পরাস্ত করার হীন চিন্তা ও চেষ্টা থেকে বিরত থাকার সতর্ক বার্তা ঘোষণা করে। 

খন্দকার মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ 

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads