• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মানুষের সম্মান ও মর্যাদা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

মানুষের সম্মান ও মর্যাদা

  • সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
  • প্রকাশিত ২৪ জানুয়ারি ২০২০

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। মহান মাবুদ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৭০)।

এ জগতে মানুষই আল্লাহর সৃষ্ট জীবের মধ্যে সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। এমনকি নিষ্পাপ ফেরেশতাদের তুলনায়ও মানুষের মর্যাদা বেশি। মানুষ আল্লাহপাকের প্রতিনিধি, সৃজনশীল, বুদ্ধিসম্পন্ন, দায়িত্বশীল এবং মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ধারক-বাহক ও অনুসারী। জগতের সমুদয় সৃষ্টিজীব আল্লাহর নির্দেশে কোনো না কোনোভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত। তাই সুস্পষ্টরূপে বলা যায়, ইসলাম মানুষের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। এছাড়া মহান মাবুদ মানুষের আকার-অবয়বও অসাধারণ সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে।’ (সুরা আত-ত্বিন : ৪)।

সৃষ্টিকুলের মধ্যে একমাত্র মানুষই বুদ্ধি-বিবেকসম্পন্ন প্রাণী। এছাড়া বাকশক্তি দিয়ে মহান প্রভু মানুষকে সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং মানুষকে তিনি নিজের প্রতিনিধি বা খলিফা হিসেবে অভিহিত করেছেন। চারিত্রিক গুণাবলির দিক থেকে মানুষকে ফেরেশতার চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন করা হয়েছে। সৃজনশীলতা মানুষের মর্যাদার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। মানুষকে আল্লাহপাক এমন ক্ষমতা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন যে, নিজের সুরক্ষা ও উন্নতি নিশ্চিতকরণের জন্য তারা সবসময় আবিষ্কার ও সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত। প্রাণিজগতে মানুষই একমাত্র দায়িত্বশীল। কারণ তারাই একমাত্র সমাজে বসবাস করে। সামাজিক সহমর্মিতা ও সম্প্রীতি শুধু মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, পার্থিব কৃতকর্মের প্রতিফল হিসেবে মানুষের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বেহেশত ও দোজখ।

ইসলামে মানুষের ব্যক্তিগত সুনাম ও সম্মান নষ্ট করা নিষেধের পাশাপাশি তা রক্ষার জন্য নিকট ও দূর আত্মীয়সহ সবার সঙ্গে সদয় আচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে ও কোনো কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদাচরণ করবে। আল্লাহ দাম্ভিক ও গর্বিতকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আন-নিসা : ৩৬)।

ইসলামের শিক্ষানুযায়ী মানুষকে খারাপ বা বিকৃত নামে ডাকা উচিত নয়; বরং এর পরিবর্তে সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের সুনাম, মর্যাদা অক্ষত রাখার জন্য যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের উপহাস না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের উপহাস না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা করেনি তারাই জালেম।’ (সুরা হুজরাত : ১১)।

হজরত আবু সিরমাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করতে চায়, আল্লাহতায়ালা তার ক্ষতি করেন। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি অন্যের ওপর কঠিন হয় আল্লাহতায়ালাও তার ওপর কঠিন হন।’ (ইবনে মাজাহ : ২৩৭১)।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) মুয়াজ (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বলেন, ‘মজলুমের বদ-দোয়াকে ভয় করো, কেননা তার বদ-দোয়া ও আল্লাহর মাঝখানে কোনো বাধা নেই।’ (বোখারি শরিফ)।

ইসলামের কোনো স্তরেই নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ও অহেতুক রক্তপাতকে সমর্থন করা হয় না। হীনস্বার্থ চরিতার্থ বা প্রতিশোধ গ্রহণের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে তারা মানবতাবর্জিত ও সভ্যতার শত্রু। কারণ শান্তি, সাম্য ও মানবিক ধর্ম ইসলাম মানুষের জানমাল রক্ষা করার লক্ষ্যে সব ধরনের জুলুম, অন্যায় ও রক্তপাত নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম নিরপরাধ মানুষ হত্যা করাকে শিরকের পর বড় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। নিরপরাধ মানুষ হত্যাকারীকে দুনিয়াতেই মৃত্যুদণ্ড বা অর্থদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয় এবং  দুনিয়ার শাস্তি ভোগ করার পর পরকালেও কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।

মহান প্রভু মানুষকে ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। মহান প্রভু মানুষের মেধা-মনন, বিবেক-বুদ্ধি সতেজ ও পরিশোধিত রাখতে সব ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করেছেন। তাদের জীবন পরিচালনার জন্য নীতিমালা হিসেবে মহাগ্রন্থ কোরআন নাজিল করেছেন। সঠিক পথ দেখাতে নবী-রসুল পাঠিয়েছেন। সৃষ্টিজগতের সব সদস্যকে জীবনযাত্রার মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককেই যার যার অবস্থানে দিয়েছেন যথাযথ অধিকার। অথচ বর্তমান দুনিয়ায় চলছে হত্যাকাণ্ড নামক মহামারী। যে আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পৃথিবীর আলো-বাতাস না দেখা শিশু থেকে শুরু করে মৃত্যুর প্রহরগোনা বৃদ্ধরাও, যা মানবতার বিরুদ্ধাচরণ।

সেরা জীব হিসেবে মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপ হিসাব কষে কষে ফেলতে হয়। ইচ্ছে করলেই মানুষ যা খুশি তা করতে পারে না। মানুষের আছে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় বাধা-নিষেধ। ইচ্ছা ও কর্মে স্বাধীন হলেও মানুষের দায়বদ্ধতা প্রচুর। মানুষকে নিজের সম্মান ও মর্যাদা সংরক্ষণে যেমন সচেতন হতে হবে ঠিক তেমনি অন্যের সম্মানহানি হয় এমন কাজ থেকে সর্বদা বিরত থাকতে হবে। হে আল্লাহ, আপনি আপনার সম্মানিত ও মর্যাদাবান জাতি ও মানবতাকে হেফাজত করুন। আমীন।

 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads