• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ধর্ম

পবিত্র ও নিরাপদ শহর মক্কা

  • মায়িশা আতিয়া
  • প্রকাশিত ২৪ জানুয়ারি ২০২০

মক্কা এমন একটি শহরের নাম যেখান থেকে ইসলামের আলো প্রজ্বলিত হয়েছিল এবং সেখানেই এসে নির্বাপিত হবে। মক্কা পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও নিরাপদ শহর। অসংখ্য ফজিলতপূর্ণ স্থান ও স্পষ্ট নিদর্শনাবলির মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা এ মক্কা নগরীকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন। এসব স্থানে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হয় এবং দোয়া করলে তাও আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘স্বল্প সংখ্যক ও অপরিচিত অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয়েছিল, অচিরেই তা সূচনালগ্নের ন্যায় গরিবি অবস্থায় ফিরে আসবে এবং তা উভয় মসজিদের (মক্কা ও মদিনার) মধ্যবর্তী এলাকায় গুটিয়ে আসবে যেমন সাপ তার গর্তের দিকে গুটিয়ে আসে।’ (মুসলিম : ১/১৩৩)। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মক্কা ও মদিনা ব্যতীত এমন কোনো শহর নেই যা দাজ্জাল পদদলিত করবে না। মক্কা ও মদিনার প্রতিটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে পাহারারত থাকবে।’ (বুখারি : ৪/৯৫, মুসলিম : ৪/২২৬৫) মক্কায় আল্লাহর নিদর্শনাবলি, বিভিন্ন স্থানের পরিচয় ও ফজিলত কোরআন-হাদিসের আলোকে নিচে তুলে ধরা হলো :

কাবা

পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ ঘর। এ ঘরকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের নামাজ আদায় করতে হয়। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘অতএব তুমি পবিত্রতম মসজিদের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও এবং তোমরা যেখানে আছ তোমাদের মুখ সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত কর।’ (সুরা বাকারা : ১৪৪)। আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হলো হজ। আর কাবাঘর তাওয়াফ করা হজের অন্যতম একটি ফরজ।

হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (কাবাঘর) সাতবার তাওয়াফ করল, সে যেন একটি ক্রীতদাস আজাদ করল।’ (নাসায়ি : ৫/২২১)। অন্য হাদিসে এসেছে— ‘যে ব্যক্তি ৫০ বার কাবা শরীফ তাওয়াফ করে সে যেন সদ্য ভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশুর মতো পাপমুক্ত হয়ে যায় (তিরমিজি)। পবিত্র কাবা এমন একটি ঘর যার প্রতি দৃষ্টিপাত করাও ইবাদত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতিদিন কাবা ঘরের ওপর ১২০টি রহমত নাজিল হয়। এর মধ্যে ৬০টি তাওয়াফকারীদের জন্য, ৪০টি ইতিকাফকারীদের জন্য এবং ২০টি কাবার প্রতি দৃষ্টিপাতকারীদের জন্য।’ (তাবারানি)।

মসজিদে হারাম

হজরত আবু যার গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম— ‘হে আল্লাহর রসুল(সা.), পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন মসজিদে হারাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন মসজিদে আকসা।’ (বুখারি : ৬/৪৫৮, মুসলিম : ১/৩৭০)। হজরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববি) এক রাকাত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ব্যতীত অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম, আর মসজিদে হারামে এক রাকাত নামাজ আদায় করা মসজিদে নববি ব্যতীত অন্য যে কোনো মসজিদে ১ লাখ রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম।’ (আহমদ : ৩/৩৪৩, ইবনে মাজা : ১/৪৫১)।

মাকামে ইবরাহিম

আল্লাহতায়ালার নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো মাকামে ইবরাহিম। এটা ঐ পাথর যার ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর নির্মাণের কাজ করেছেন এবং হজের ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তার মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইবরাহিম উক্ত নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম।’ (সুরা আল ইমরান : ৯৭)।

হাজরে আসওয়াদ

জান্নাত থেকে অবতারিত একটি পাথর, যাতে চুম্বন করলে গুনাহসমূহ ঝরে যায়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল; কিন্তু আদম সন্তানের পাপ এটিকে কালো করে দিয়েছে।’ (তিরমিজি : ৩/২২৬)।

মুলতাজাম

কাবা শরিফের দরজা এবং হাজরে আসওয়াদ-এর মধ্যবর্তী স্থানের নাম মুলতাজাম। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.) বলেন, ‘মুলতাজামে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।’

হাতিমে কাবা

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হাতিমে নামাজ আদায় করল, সে যেন কাবাঘরের ভেতরে নামাজ আদায় করল।’

জমজম

মাকামে ইবরাহিমের দক্ষিণে অবস্থিত একটি বরকতময় কূপের নাম জমজম। হজরত আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জমিনের ওপরিভাগের সর্বোত্তম পানি হলো জমজমের পানি।’ (তাবরানি : ১/৯৮)। পৃথিবীতে যত প্রকার পানি আছে সব বসে পান করতে হয়। একমাত্র জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হয় এবং তা দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে হজরত আবুজার (রা.) ৩০ দিন শুধু জমজমের পানি পান করে অতিবাহিত করেছেন, অন্য কোনো খাবার গ্রহণ করেননি। (মুসলিম : ৪/১৯১৯)।

আরাফা

এটি মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ সম্মেলন কেন্দ্র। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে লাখ লাখ মুসলিম জনতা ভাষা, বর্ণ ও ভৌগোলিক সব সীমানা অতিক্রম করে হাজির হয় মহান প্রভুর সান্নিধ্যে। মক্কার আকাশ বাতাস মুখরিত হয় ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে। সেখানে হাজির হয়ে সবাই বলতে থাকেন, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা-লাকা লাব্বাইক।

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads