• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ইসলামের দৃষ্টিতে মেডিটেশন

ফাইল ছবি

ধর্ম

ইসলামের দৃষ্টিতে মেডিটেশন

  • প্রকাশিত ২৪ জানুয়ারি ২০২০

মানবজাতি কোনো না কোনো ক্ষেত্রে অশান্তিতে থাকে। কেউ শারীরিক রোগে আক্রান্ত, কেউ আত্মিক রোগে আক্রান্ত, আবার কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত। এ সবকিছু থেকেই সবাই চায় মুক্তি ও শান্তি। এই শান্তি ও মুক্তি পেতে কেউ যায় ডাক্তারের কাছে। কেউ যায় কবিরাজের কাছে। আবার কেউ যায় সাধু-সন্ন্যাসীর কাছে। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে এর বিপরীত। কিছু মানুষ ঝুঁকছে মেডিটেশনের দিকে, যা ইসলাম সমর্থিত নয়। এর যাবতীয় দিক নিয়ে একজন লেখক, গবেষক ও মুফতির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-এস এম আরিফুল কাদের

মেডিটেশন কী

মেডিটেশন হচ্ছে গুহায়, নিরবচ্ছিন্ন স্থানে, গির্জায়, মন্দিরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান পাদ্রি বা যোগী-সন্ন্যাসীদের ধ্যান; যা যোগ-সাধনার আধুনিক কলাকৌশল। মেডিটেশন মূলত আদিকাল থেকে চর্চিত। এজন্য আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নামে এর চর্চা ব্যাপকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।

ইসলাম কি এটাকে সমর্থন করে?

না, ইসলাম এটাকে সমর্থন করে না। কারণ তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যনীতি, কথাবার্তা ইত্যাদি ইসলামবহির্ভূত। এমনকি তাদের মেডিটেশন পদ্ধতিটি কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত না হওয়ায় বিদআত। পাশাপাশি ইহুদি-খ্রিস্টান সন্ন্যাসীদের উপাসনার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকায় তা বিবর্জিত। হাদিস শরিফে বিশ্বনবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখে সে আমার উম্মত নয়। তোমরা ইহুদি-খ্রিস্টানের সাথে মিল রেখো না।’ (সহিহ তিরমিজি : ২৬৯৫)। তারা মনে করেন, ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে মেডিটেশন। অথচ ইসলামই হলো ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির একমাত্র পথ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ঐটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। তাঁর পথে যিনি পরাক্রমশালী, প্রশংসারযোগ্য।’ (সুরা ইবরাহিম : ০১)।

তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী

মেডিটেশনের লক্ষ্য হলো আপনি আপনার ‘অন্তরের আমি’র সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন, যা আপনার শক্তির মূল উৎস। অথচ অন্তরের আমি হলো ‘নফসে আম্মারা’। যার অনুসরণের পরিণতি জাহান্নাম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি কি তাকে দেখেন না যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তাদের জিম্মাদার হবেন?’ (সুরা ফুরকান : ৪৩)। আর তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো যেন মানুষ এমন এক ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে যার দ্বারা নিজেই নিজের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারে। অথচ ইচ্ছার মাধ্যমে কোনো কিছু করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহতায়ালার আছে। এমনকি নিজেকে নিজের ইচ্ছা পূরণের মালিক একমাত্র আল্লাহকে বলা সম্ভব। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘তিনি যখন কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।’ (সুরা ইয়াসিন : ৮২)

তাদের কার্যক্রম কেমন, যা ইসলাম সমর্থন করে না

মেডিটেশন তথা ধ্যান সম্পর্কে তাদের প্রশ্ন করলে তারা হাক্কানি ওলামা মাশায়েখের মোরাকাবার সাথে তুলনা দেন। তারা বলেন, মেডিটেশন ও মোরাকাবা একই জিনিস। মূলত এটি একটি শয়তানি ফাঁদ বা প্রতারণা বই কিছু নয়। মোরাকাবার সঙ্গে তাদের মেডিটেশনের কোনো সম্পর্কই নেই। মোরাকাবা হলো মানব শরীরের লতিফাগুলোকে আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে জাগ্রত করে লতিফাগুলোর মূল তথা আদেশ জগৎ ও সৃষ্টি জগতে প্রেরণ করা। মেডিটেশন কোনো আসমানি কিতাব সমর্থিত পদ্ধতি নয়। এটা মানুষের মনগড়া পদ্ধতি। কোনো মানুষের আবিষ্কৃত মনগড়া পদ্ধতির সঙ্গে ইসলামের জিকির-আজকার, মোরাকাবা, সালাত, সিয়াম, জাকাত, সাদাকাহর কোনো সম্পর্ক নেই।

কারা এবং কেন এ পদ্ধতি গ্রহণ করেন

সব বয়সের নারী-পুরুষ বিশেষ করে যুবক-যুবতিদের এ পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তারা হতাশামুক্ত, মানসিক প্রশান্তিসহ প্রায় সকল রোগের চিকিৎসার জন্য ভিড় জমায়। অথচ হতাশামুক্ত ও মানসিক প্রশান্তি আসে মহান আল্লাহপাকের জিকিরের মাধ্যমে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জেনে রাখো! আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : ২৮)। অপরদিকে সুস্থতার ক্ষেত্রে ইসলামী চিকিৎসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। (সুরা বনি ইসরাইল : ৮২)।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী : আলেম ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads