মানুষকে আল্লাহপাক বিবেক দান করেছেন। বিবেক দিয়ে চিন্তা করেই মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, কর্তব্য নির্ধারণ করে। ব্যক্তি তার নিজের কল্যাণ-অকল্যাণ, ভালো-মন্দ, করণীয়-বর্জনীয় সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বিবেকের মাধ্যমে মানুষ যখন কোনো বিষয় সম্পর্কে সকল দিক বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন তার মনের মধ্যে যে বিষয়টি সক্রিয় থাকে সেটি হচ্ছে তার বিবেক। বিবেককে বাধাগ্রস্ত করলে মানুষের স্বাধীন সত্তাও বাধাগ্রস্ত হয়। ইসলাম মানুষের বিবেক ও বিশ্বাসের পূর্ণ অধিকার দান করেছে। কোনো কিছুই তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি বা আরোপ করা হয়নি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, ‘শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তার। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন।’ (সুরা আশশামস : ৭-৮)।
ইসলাম মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের একমাত্র আদর্শ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহপাক মানুষকে ইসলাম পালনে বাধ্য করেননি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, ‘দিনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।’ (আল-বাকারা : ২৫৬)। অর্থাৎ সত্য পথ তো সেটাই, যেদিকে ইসলাম মানবতাকে আহ্বান জানিয়েছে এবং আল্লাহর নবী-রাসুল ও আসমানি গ্রন্থের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যা সুস্পষ্ট করে দিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ও পথসমূহকে পৃথক করে দিয়েছেন। আল্লাহপাকের অভিপ্রায় এবং মুসলমানদের প্রচেষ্টা তো এই যে, সকল মানবতা যেন ইসলাম প্রদর্শিত সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথ গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু এ বিষয়ে কারো ওপর কোনোরূপ বল প্রয়োগের অবকাশ নেই।
জোর করে কাউকে কোনো কিছু গ্রহণ করতে বাধ্য করলে ঐ জিনিসের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ হয় না, বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে যদি কোনো কিছু কেউ বরণ করে নেয়, তাহলেই তার বিশেষত্ব ও মহত্ত্ব ফুটে ওঠে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ করা হয়েছে, ‘তোমরা উত্তম পন্থা ব্যতীত কিতাবধারীদের সাথে অহেতুক বাদানুবাদে লিপ্ত হবে না।’ (সুরা আনকাবুত : ৪৬)।
বর্তমান বিশ্বে যত যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে, এর মূল কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে— ধর্মীয় কারণ। একই কারণে অসংখ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও বিভীষিকাময় অধ্যায়ের জন্ম নিচ্ছে। ইসলাম তাই এসব জিনিসকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম সহনশীলতা ও উদারতার ধর্ম।
লেখক :জাহাঙ্গীর আলম জাবির
আলেম ও গবেষক
