• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
জুমাবারের সুন্নতসমূহ

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

জুমাবারের সুন্নতসমূহ

  • প্রকাশিত ৩১ জানুয়ারি ২০২০

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দিনের ফরজের সঙ্গে কিছু সুন্নত রয়েছে। যেগুলো সব মুসলমানকে পালনের চেষ্টা করা উচিত। চলুন তাহলে এখনই জেনে নিই, পবিত্র জুমাবারের সুন্নতগুলোর বিবরণ—

- জুমার দিন গোসল করা। যাদের ওপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সা.) ওয়াজিব করেছেন। (বুখারি : ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভালো কাজ।

- মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহ : ১০৯৮, বুখারি : ৮৮৭, ই: ফা: ৮৪৩)।

- উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। (ইবনে মাজাহ : ১০৯৭)।

- গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারি : ৮৮৩)।

- আগেভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারি : ৮৮১, মুসলিম : ৮৫০)।

- জুমার সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারি : ৮৮০)।

- মুসল্লিদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিজি : ৫০৯, ইবনে মাজাহ : ১১৩৬)।

- মনোযোগসহ খুতবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারি : ৯৩৪, মুসলিম : ৮৫৭, আবু দাউদ : ১১১৩, আহমাদ : ১/২৩০)।

- পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদ : ৩৪৫)।

- জুমার দিন ফজরের নামাজে ১ম রাকাতে সুরা সাজদা (সুরা নম্বর-৩২) আর ২য় রাকাতে সুরা ইনসান (দাহর) (সুরা নম্বর-৭৬) পড়া। (বুখারি : ৮৯১, মুসলিম : ৮৭৯)

- সুরা জুমা ও সুরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমার সালাত আদায় করা। অথবা সুরা আলা ও সুরা গাশিয়া দিয়ে জুমা আদায় করা। (মুসলিম : ৮৭৭, ৮৭৮)।

- জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ। (আবু দাউদ : ১০৪৭)।

- এ দিন বেশি বেশি দোয়া করা। (বুখারি : ৯৩৫)।

- মুসল্লিদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারি : ৯১০, ৮৮৩)।

- মুসল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে এগোনোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদ : ৩৪৩, ৩৪৭)।

- কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারি : ৯১১, মুসলিম : ২১৭৭, ২১৭৮)।

- খুতবা চলাকালে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনো দু’রাকাত ‘তাহিয়াতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারি : ৯৩০)।

- জুমার দিন জুমার পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোনো শিক্ষামূলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদ : ১০৮৯)।

- কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ি : ৭১৪, বুখারি : ৯৩৪)।

- মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধূমপান না করা। (বুখারি : ৮৫৩)।

- ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদ : ১১১৯)।

- ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদ : ১১১০, ইবনে মাজাহ : ১১৩৪)। অর্থাৎ আদবের সঙ্গে বসা।

- খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ : ১১০৮)।

- জুমার দিন সুরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহতায়ালা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেম : ২/৩৬৮, বায়হাকি : ৩/২৪৯)।

- জুমার আজান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আজান দেওয়া হয় তা। (বুখারি : ৯১২)।

- জুমার ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকাত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারি : ১৮২, মুসলিম : ৮৮১, আবু দাউদ : ১১৩০)।

- ওজর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুমা চালু না করা। আর ওজর হলো এলাকাটি খুব বড় হওয়া বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোনো ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামা : ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ : ২৪/২০৮)।

- ওজু ভেঙে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদ : ১১১৪)।

- একান্ত ওজর না থাকলে দুই পিলারের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেম : ১/১২৮)।

- সালাতের জন্য কোনো একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদ : ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।

- কোনো নামাজির সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসল্লি ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারি : ৫১০)।

- এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোনো কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদ : ১৩৩২)।

- পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত অন্তরে জাগরূক রাখা।

- হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।

- খুতবার সময় খতিবের কোনো কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাবদানে শরিক হওয়া জায়েজ। (বুখারি : ১০২৯, মুসলিম : ৮৯৭)।

- হানাফি আলেমগণ বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসল্লির পিঠের ওপর সিজদা দেওয়া জায়েজ (আহমাদ : ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের ওপরও দিতে পারে (আর রাউদুল মুরবি)।

- যেখানে জুমার ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হলো ওই একই স্থানে সুন্নত না পড়া। অথবা কোনো কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নত সালাত আদায় করা। (মুসলিম : ৭১০, বুখারি : ৮৪৮)।

- ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইস্তিগফার ও কোরআন তেলাওয়াতে রত থাকা।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহতায়ালা সব মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র জুমাবারের ফরজসহ প্রত্যেকটি সুন্নত পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

রোকাইয়া শশী

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads