• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

নামাজের উপকারিতা

  • প্রকাশিত ২৭ অক্টোবর ২০২০

মুহাম্মদ ইমাম হাসান

 

 

নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। ঈমানের পর ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো নামাজ বা সালাত। ইসলামের অন্যতম প্রধান ইবাদত। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাজের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের ফরজ। নামাজের মাধ্যমে মূলত আল্লাহর একটি আদেশ পালন হয়। সেইসাথে আল্লাহর সাথেও সাক্ষাৎ হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘নামাজ হচ্ছে মুমিনের মেরাজ।’ নামাজ বিশেষভাবে মহান আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। কেননা নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। মানুষ তিনটি জিনিস- শরীর, প্রাণ ও আত্মা দ্বারা গঠিত। মৃত্যু শরীর ও প্রাণকে নিঃশেষ করে দেয়। আত্মা অমর ও অক্ষয়। এ আত্মাই প্রকৃত মানুষ। শরীর বা প্রাণের খোরাক খাদ্য। আর আত্মার খোরাক নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতে লব্ধ পুণ্য।

নামাজ মুমিনদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু নামাজের এই বিধানটি মুসলমানদের জন্য অনেকভাবেই উপকারী। বিশেষভাবে নামাজ মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। যেই মানসিক চাপগুলো আমাদের দৈনন্দিনের জীবনে তৈরি হয়। নামাজ শারীরিকভাবেও অনেক উপকারী। গবেষকরা দেখিয়েছেন, যদি কেউ ঠিকমতো রুকু করতে পারে তাহলে তার পিঠে কোনো ব্যথা থাকবে না। কেননা রুকুর সময়ই পিঠ সোজা হয়ে থাকে। রুকুতে নিচের পিঠ, উরু এবং ঘাড়ের পেশিগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করে। রক্ত শরীরের ওপরের অংশে প্রবাহিত হয়। সিজদা দিলে হাড়ের জোড়ার নমনীয়তা বাড়ে। মাথা নামানোর সময় মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন হলে রক্তচাপও কমে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। সিজদার পুনরাবৃত্তি শরীরের ভারসাম্য এনে দেয়। এটা সত্য যে নামাজ শারীরিক উপকারের জন্য পড়তে হয় না। নামাজ পড়তে হয় মহান আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে থাকেন তারা শারীরিক অনেক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকেন এবং তাদের রোগব্যাধির হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

হাদিস শরিফে নামাজের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত- ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি মানুষ জানত যে, আজানের এবং নামাজের প্রথম সারিতে কি পুণ্য আছে এবং যদি তারা তা লটারি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা না পেত, তবে তারা নিশ্চয়ই ভাগ্য খেলা খেলত। যদি তারা জানত যে, জোহরের নামাজে কি পুণ্য রয়েছে, তবে নিশ্চয়ই এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। যদি তারা জানত যে, এশা এবং ফজরের নামাজে কি পুণ্য রয়েছে, তবে নিশ্চয়ই তার জন্য বুকে হেঁটে আসত।’ (বোখারি, মুসলিম)। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘ফেরেশতা তোমাদের কাছে রাতে এবং দিনে আগমন করে। কিন্তু তারা ফজর এবং আসরের নামাজের সময় মিলিত হয়। যারা তোমাদের কাছে রাতযাপন করে, তারা ওপরে উঠলে তাদের প্রভু জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের তোমরা কীরূপ অবস্থায় ত্যাগ করেছ? তারা বলে, নামাজ পড়ার সময় আমরা তাদের ত্যাগ করেছি এবং নামাজ পড়ার সময় আমরা তাদের কাছে গিয়েছি।’ (বোখারি, মুসলিম)।

নামাজ পড়লে গোনাহ মনে প্রশান্তি মেলে এবং গোনাহ মাফ হয়। হজরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত- ‘তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি নির্ধারিত শাস্তির অপরাধ করেছি। আমাকে তার শাস্তি দিন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু জিজ্ঞেস না করতেই নামাজের সময় হয়ে গেল এবং সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে নামাজ পড়ল। নামাজ শেষে লোকটি উঠে বলল, আমি নির্ধারিত শাস্তির অপরাধ করেছি আমাকে নির্দিষ্ট শাস্তি দিন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি আমাদের সঙ্গে নামাজ পড়নি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার পাপ বা নির্দিষ্ট অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (বোখারি, মুসলিম)।

হজরত উসমান (রা.) হতে বর্ণিত- ‘নবী করিম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে জামাতে এশার নামাজ পড়ে, সে অর্ধেক রাত যেন নামাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইল। যে ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে, সে যেন সমস্ত রাত নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম)

নামাজ প্রাপ্তবযস্কদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগে থেকেই নামাজের তাগিদ দিয়েছেন। হজরত আমর বিন শোয়ায়েব (রা.) হতে বর্ণিত- ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সন্তানরা সাত বছর বয়সে পদার্পণ করলে তাদের নামাজের জন্য আদেশ কর এবং তাদের ১০ বছর বয়স হলে তার জন্য তাদের প্রহার কর এবং পরস্পরকে শয্যা হতে পৃথক করো।’ (আবু দাউদ)।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads