• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
দশমিনার শতবছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলো

ছবি: বাংলাদেশের খবর

ধর্ম

কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে 

দশমিনার শতবছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলো

  • দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০২০

অর্থাভাবে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় শতবছর আগে স্থাপিত চোখ ধাঁধানো চারটি মসজিদ কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। যেন দেখার কেউ নেই। ওই মসজিদগুলো হচ্ছে উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আদমপুর গ্রামের আমিরুল্লাহ মুন্সিবাড়ির ‘মুন্সি আমিরুল্লাহ জামে মসজিদ’, নেহালগঞ্জ তালুকদার বাড়ির জামে মসজিদ, বেতাগী সানকিপুর সিকদার বাড়ির জামে মসজিদ ও দশমিনা আব্দুর রশিদ তালুকদার বাড়ির জামে মসজিদ। ওইসব ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে কালের সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে।

সরেজমিনে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কেউ ওইসব মসজিদ নির্মাণের সঠিক তথ্য দিতে না পারলেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে ১৭০০-১৮০০ সালের দিকে মসজিদগুলো এক গম্বুজবিশিষ্ট দুশ বর্গফুট আয়তনের চল্লিশ ফুট উচ্চতায় ওইসব মসজিদ চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত। মসজিদের ভেতরে ২৫-৩০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। পরিচর্যার অভাবে মসজিদের ভেতরে ও বাইরে সমস্ত পলেস্তরা ধসে ইট বের হয়ে গেছে এবং মসজিদগুলোর দেয়ালে শেওলা জমে বিবর্ণ হয়ে আছে। এলাকাবাসী মনে করেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর উদ্যোগ নিলে ওই মসজিদগুলো উপজেলার দর্শনীয় স্থান হতে পারে। কিন্তু মসজিদগুলো অনেকবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার মানুষ পরিদর্শন করলেও কেউই সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি। দশমিনা আব্দুর রশিদ তালুকদার বাড়ির আব্দুল মোমেন তালুকদার জানান, তাদের বাড়ির জামে মসজিদটি ১৭৪৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছে এবং তাদের মসজিদ নিজস্ব অর্থায়নে প্রতি বছর সংস্কার করা হয়। অবশিষ্ট তিনটি মসজিদ অর্থাভাবে সংস্কার বা পুনর্নিমাণ করতে পারছে না বলে জানা গেছে।

দক্ষিণ আদমপুর গ্রামের আমিরুল্লাহ মুন্সি বাড়ির সপ্তম বংশধর মোঃ শাহ আলম মুন্সি জানান, তাদের দাবি ‘মুন্সি আমিরুল্লাহ জামে মসজিদ’টি অনেক বছরের পুরনো মুসলিম ঐতিহ্যের প্রাচীন ও অন্যতম নিদর্শন এক গম্বুজবিশিষ্ট। মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব স্থাপত্য শিল্পের এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। মুন্সি আমিরুল্লাহর সপ্তম বংশধরদের আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় মসজিদের সৌন্দর্য ও জৌলুস দিন দিন কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকার অ্যাড. এনামুল হক রতন জানান, দুই থেকে আড়াইশত বছর আগে বা পরে তাদের গ্রামের আমিরুল্লাহ জামে মসজিদটি নির্মাণ করা হতে পারে। বেতাগী সানকিপুর গ্রামের মোঃ মানিক সিকদার ও অ্যাড. সিকদার মোঃ ফুহাদ হোসেন জানান, সিকদার বাড়ি বা বড় সিকদার বাড়ি নামে পরিচিত। ওই বাড়ির জামে মসজিদটি ওই গ্রামে বহু বছর আগে নির্মাণ করা হয় বলে তাদের ধারণা। তবে তারা আরো জানান, এ মসজিদে দুর-দুরান্তের লোকজন হাঁস, মোরগ, গরু-ছাগল ও ফিন্নি মানত করে প্রতিনিয়ত নিয়ে আসেন। নেহালগঞ্জ মোঃ বজলুর রহমান তালুকদার বাড়ি জামে মসজিদটি ওই একই সময় নির্মাণ করা হয় বলে ওই বাড়ির মোঃ খলিলুর রহমান তালুকদার জানান। দশমিনা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ইসলামি ইতিহাসের শিক্ষক মোঃ ইমাম হোসেন জানান, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যর অংশ হিসেবে এই মসজিদগুলো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সরকার এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফরোজা খাঁন মিতা মুঠোফোনে জানান, ওইসব বিষয়ে আমরা জেনেছি। বর্তমান সরকার ওইসব শিল্প নিদর্শনগুলো নতুন প্রজম্মের জন্য সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন, যা করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা জানান, মসজিদগুলো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে চিঠি দেব। 

 

লেখক : প্রতিনিধি, দশমিনা (পটুয়াখালী)

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads