• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

নারীর মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে ইসলাম

  • প্রকাশিত ২৯ অক্টোবর ২০২০

মুফতি সাদিক হোসাইন

 

 

ইসলাম আসার আগে নারীদের সমাজিক মর্যাদা তো দূরের কথা তাদের বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত ছিলনা। কন্যা সন্তান জন্মের কথা শোনার সাথে সাথে সবার মুখ কালো হয়ে যেত। তাকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য অস্থির হয়ে যেত। কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করাকে নিজেদের সম্মান, মর্যাদা ও পুণ্যের কাজ মনে করত। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন— আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছে সে দুঃখে সে কওম থেকে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেব, না মাটিতে পুঁতে ফেলব? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতইনা মন্দ! (সূরা নাহল-৫৮-৫৯)।

ইসলাম নারীকে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় উন্নীত করেছে। ইসলাম নারীকে যে সম্মান আর মর্যাদা দিয়েছে তা কোনো ধর্ম দিতে পারেনি। যখন নারী জাতি লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর অসম্মানের পাত্র ছিল, ঠিক সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে ইসলাম এসে তৎকালীন সেই বর্বর যুগের অমানুষিক জুলুম থেকে নারীকে মুক্ত করেছে। নারী জাতিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের যথাযথ পাওনা।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। যে সমাজে নারীজন্ম পাপ বলে জ্ঞান করা হতো সেখানে ইসলাম নারীজন্মের অধিকার নিশ্চিত করেছে। কন্যা সন্তান হত্যাকারীকে কঠোর হুঁশিয়ার বাণী শুনিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, আর স্মরণ করো সেই দিনের কথা! যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। (সূরা তাকউইর, ৮-৯) ইসলাম নারীকে মাতৃত্বের স্থান দিয়ে করেছে সম্মানিত। হাদিসে এসেছে, হযরত আনাস বিন মালেক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। (মুসনাদুস সিহাব, হাদিস : ১১৯)। অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, একদা জনৈক ব্যক্তি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞেস করল, ‘আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার কে? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার মা। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। অতঃপর কে? তিনি একই উত্তর দিয়ে বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন অতঃপর কে? এবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বাবা। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮৩৪৪)। নবীযুগে এক ঘটনার কথা জানা আছে যে, মায়ের সেবা করার কারণে হযরত ওয়াসকরনী কী পরিমাণ মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর (রা.) কে তার নিকট দোয়া চাওয়ার নির্দেশ দিলেন।

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে এবং তাদের কষ্ট-যাতনায় ধৈর্য ধরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দুজন হয়? তিনি বললেন, দুজন হলেও। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, যদি একজন হয় ! তিনি বললেন, হ্যাঁ, একজন হলেও। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস ২৫৯৪৯)। হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যার তিনটি কন্যা সন্তান আছে, সে তাদেরকে আদব শিক্ষা দিয়েছে এবং বিবাহ দিয়েছে এবং তাদের সাথে সদাচারণ করেছে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১৯২৪ )। আরো বর্ণিত আছে, ‘পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আখলাক উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রী-কন্যা সন্তানদের কাছে উত্তম।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ। আর তোমরা তাদের আবরণস্বরূপ । (সূরা বকারা : ১৮৭)। আরো ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচারণ করো। (সূরা নিসা, আয়াত : ১৯)। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, নারীর ওপর যেমন অধিকার আছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার। (সূরা বাকারা : ২২৮)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক। (মুসলিম)। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আখলাক উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। (সুনানে তিরমিযি : ১১৬২)।

 

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া হাফসা (রাযিঃ)

মাসকান্দা, মোমিনশাহী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads