• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

নেক সন্তান আল্লাহর বড় নেয়ামত

  • প্রকাশিত ২০ নভেম্বর ২০২০

মুফতি কাজী সিকান্দার

 

 

 

আল্লাহতায়ালা মানুষকে অসংখ্য অগণিত নেয়ামত দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন, ‘আমি এত নেয়ামত দিয়েছি যে, তা গণনা করে শেষ করা যাবে না।’ আমাদের অস্তিত্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিসই আল্লাহর একমাত্র অনুগ্রহ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদেরকে আল্লাহ অন্য কিছুও বানাতে পারতেন। তিনি আমাদেরকে অনুগ্রহ করে সৃষ্টির সেরা মানুষ বানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, আমাদের উপকার্থে হাজার হাজার মাখলুক সৃষ্টি করেছেন। যারা আমাদের খেদমতে নিয়োজিত। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনি আল্লাহ! যিনি জমিনে যা আছে তা তোমাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।’

এত নেয়ামতের মধ্যে বড় একটি নেয়ামত আমাদের সন্তানাদি। যার কোনো সন্তান নেই সেই বুঝে সন্তান কত বড় নেয়ামত। যার ঘর সন্তানশূন্য, যার ঘরে ছেলে-মেয়েদের কোলাহল নেই; সে একটি সন্তানের জন্য কত ডাক্তার, কত তাবিজ-কবজের পেছনেই না ছুটছে! তার কাছে দুনিয়ার সকল আনন্দই বৃথা। আমরা সন্তানের জন্য দিবারাত্রি কষ্ট ও মেহনত করে থাকি। সন্তান আমাদের জন্য অনেক বড় নেয়ামত। তবে এ নেয়ামত যেন নেয়ামত হিসেবেই আমরা পাই। তা যেন আমাদের জন্য বোঝা বা গজব হিসেবে না আসে। তাই তো নবীগণ তাদের সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন। ‘হে আমার পরওয়ারদিগার আমাকে সুপুত্র দান করুন।’ (সুরা সফফাত ১০৩) এখানে নেক সন্তানের জন্য দোয়া করা হয়েছে। নেক সন্তান মা-বাবার জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। আর নেক সন্তানের জন্য দোয়া করাও সুন্নাত। কারণ নেক সন্তান দুনিয়ায় মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করে। সুখে-দুঃখে সেবা করে এবং আখিরাতেও উপকারে আসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নেক সন্তানাদির দ্বারা আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। বান্দা বলবে- হে আল্লাহ! এটা কীভাবে হলো? আল্লাহ বলবেন, তোমার মৃত্যুর পর তোমার সন্তান ক্ষমাপ্রার্থনা করে দোয়া করেছিল। (ইবনে মাজা ৩৬৬০)। মা-বাবার জীবিত থাকুক বা মৃত্যুবরণ করুক, নেক সন্তান সর্বদাই তাদের জন্য দোয়া করে। আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে মা-বাবার জন্য দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সগিরা’।

হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে তার এক ছেলেকে সাথে নিয়ে প্রায়ই আসতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি ছেলেকে বেশি ভালোবাস? সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যেভাবে আমি তাকে ভালোবাসি, আপনাকেও আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসি। কিছুদিন পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুটিকে না দেখতে পেয়ে সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন- কী হলো ওই ব্যক্তির? শিশুটিকে নিয়ে আর আসে না কেন? তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! শিশুটি মারা গেছে। পরে একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত শিশুর পিতাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তোমার শিশুটি জান্নাতের কোন একটি দরজায় দাঁড়িয়ে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করুক? মাঝখান থেকে এক ব্যক্তি বললেন এটি কি তার জন্যই নির্দিষ্ট নাকি আমাদের জন্যও প্রযোজ্য? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না। বরং তোমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য। (আদদুররুল মানসুর ১/১৫৮)।

প্রত্যেক মানুষই একদিন না একদিন মৃত্যুবরণ করবেই। মানুষ মারা যাওয়ার সাথে সাথে তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে যদি সে দুনিয়াতে নেক সন্তান রেখে যেতে পারে তাহলে মৃত্যুর পরেও সে উপকৃত হবে এবং সর্বদা লাভবান হতে থাকবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষ মারা গেলে তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল জারি থাকে। এক. সদকায়ে জারীয়া। দুই. উপকারী ইলম। তিন. নেকসন্তান। যে মা-বাবা মারা গেলে তাদরে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে। (মুসলিম শরিফ) আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, নেক সন্তান আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য অনেক বড় নেয়ামত। তবে আমাদের ওপর কর্তব্য যে, সন্তানকে নেক সন্তানরূপে গড়ে তোলা। এর জন্য যথাযথ চেষ্টা করতে হবে। বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকল সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ

আশরাফাবাদ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads